![](https://amaderorthoneeti.com/new/wp-content/themes/amader-orthoneeti/img/sky.jpg)
জাপানের বাংলাদেশ-ভারতকে নিয়ে শিল্প কেন্দ্র গড়ার ভাবনা এবং অপার সম্ভাবনা
![](https://amaderorthoneeti.com/new/wp-content/uploads/2023/04/Subrato-Biswas-400x400.jpg)
সুব্রত বিশ্বাস
অর্থনৈতিক উন্নয়নে নিরিখে যদি এটা দেখি, তাহলে এটা একটা চমকপ্রদ খবর এবং এটা অবশ্যই বাংলাদেশের জন্য একটা আশাপ্রদ ব্যাপার, জাপানের বাংলাদেশে শিল্প উন্নয়ন কেন্দ্র গড়ার ভাবনা আমাদের অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে ত্বরান্বিত করবে। ইতোমধ্যে তিনশত এর বেশি জাপানি কোম্পানি বাংলাদেশে কাজ করছে। জাপান-বাংলাদেশ শিগগিরই শিল্প উন্নয়ন উদ্যোগ অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি স্বাক্ষর করবে বলে আশা করা হচ্ছে, যা বাংলাদেশে শিল্প উৎপাদন আরও বাড়াবে, সেই সাথে আমাদের কর্মসংস্থান অর্থনৈতিক উন্নয়নে বাড়বে এবং আরও বিদেশি কোম্পানিকে আকর্ষণ করতে পারবে বাংলাদেশ।
ভারত-নেপাল ও ভুটানের বাজার মাথায় রেখে জাপানের বাংলাদেশে এবং ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল নিয়ে নতুন একটি শিল্প কেন্দ্র গড়ার ভাবনার এ অঞ্চলের ৩০ কোটি মানুষের অর্থনৈতিক ভাগ্য উন্নয়নে বড় ভ‚মিকা রাখবে। যেখানে বন্দর ও পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটিয়ে ভারতের স্থলবেষ্টিত উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর পাশাপাশি নেপাল ও ভুটানে পণ্য সরবরাহের চেইন তৈরি করা যাবে। নির্মাণাধীন মাতারবাড়ি বন্দর হবে বাংলাদেশের প্রথম গভীর সমুদ্র বন্দর, যেখানে বড় আকারের জাহাজ ভিড়তে পারবে, মাতারবাড়ির গভীর সমুদ্রবন্দরটি ২০২৭ সাল নাগাদ চালু হলে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা এবং ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোকে যুক্ত করে একটি শিল্প কেন্দ্র গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এ বন্দর মূল ভ‚মিকা রাখতে পারবে।
এ বন্দর আঞ্চলিক রপ্তানিকারকদের জন্য একটি প্রবেশদ্বার হয়ে উঠতে পারে,ওই সমুদ্রবন্দর থেকে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের দূরত্ব একশ কিলোমিটারের মত। মাতারবাড়ি সমুদ্র বন্দর, যেখান থেকে ত্রিপুরাসহ ভারতের স্থলবেষ্টিত রাজ্যগুলো এবং আরও বড় আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্য পরিবহন সম্ভব। এ পরিকল্পনা ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্য বাড়াতে এবং জাপান ও অন্যান্য দেশের বিনিয়োগ আনতে সহায়ক হতে পারে।
দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক সমৃদ্ধির লক্ষ্যে বাংলাদেশ ও ভারতের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে জাপান কাজ করবে। এই সহযোগিতার অন্যতম প্রধান লক্ষ্য বঙ্গোপসাগরীয় এলাকার অপার সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে গোটা অঞ্চলকে স্থিতিশীল ও সমৃদ্ধিশালী করে তোলা। বিশেষ করে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় এলাকা, যা ‘অ্যাক্ট ইস্ট’ নীতি রূপায়ণে সহায়ক হয়ে উঠবে। ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন শান্তি রক্ষার মৌলিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দাঁড়াতে আমাদের বাধ্য করেছে। প্রশান্ত মহাসাগরকে মুক্ত ও অবাধ প্রভাব ও আগ্রাসনমুক্ত রাখার সহযোগিতার ক্ষেত্র জাপান বিস্তৃত করবে। এই অঞ্চলের শান্তি রক্ষা, বৈশ্বিক সমস্যার সমাধানে সহযোগিতা বৃদ্ধি, বিভিন্ন মহলের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানো এবং সমুদ্র ও আকাশপথ মুক্ত ও অবাধ রাখা এই লক্ষ্যে জাপান ২০৩০ সালের মধ্যে ৭৫ বিলিয়ন ডলার খরচ করবে। আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নে,ভারতের অ্যাক্ট ইস্ট নীতি রূপায়ণে,বাংলাদেশ ও ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে সহযোগিতা বৃদ্ধি, বাংলাদেশের চমকপ্রদ অর্থনৈতিক উন্নয়ন অত্র এলাকার মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে ব্যাপক পরিবর্তন হবে।
ভারত ও জাপান অ্যাক্ট ইস্ট নীতি রূপায়ণ নিয়ে অনেক দিন ধরেই সক্রিয়। আঞ্চলিক, উপ-আঞ্চলিক ও দ্বিপক্ষীয় পর্যায়ে কাজ হচ্ছে, যা অ্যাক্ট ইস্ট নীতিকেই শক্তিশালী ও রূপায়ণ করছে। সেই লক্ষ্যের একটি হলো যোগাযোগব্যবস্থা, যা উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও অন্যদের জুড়বে। এর মধ্যে কালাদানসহ বেশকিছু সড়ক ও সেতু প্রকল্প রয়েছে, যা ভারত, বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও অন্যদের সঙ্গে করে এই নীতিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে জাপানের সম্পর্ক দীর্ঘদিনের, বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে ভারত-জাপান উল্লেখযোগ্য ভ‚মিকা রাখে। ভারত-জাপানের গণমাধ্যম, শিক্ষার্থী ও শিক্ষকসমাজ, বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ীগোষ্ঠী ও জনগণ ব্যাপকভাবে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অবস্থান নেয় এবং ভারত-জাপান ও বিশ্বের অন্যত্র বাংলাদেশের স্বাধীনতার সপক্ষে জনমত গঠনে সোচ্চার ভ‚মিকা রাখে।
১৯৭১/৭২ থেকে ২০০৮/০৯ পর্যন্ত সময়ে জাপান বাংলাদেশকে মোট সাহায্য দিয়েছে ৬ হাজার ৯৫৯ দশমিক ৪৫ মিলিয়ন ডলার, যার ৪৭ শতাংশের কিছু বেশি ছিল অনুদান এবং অবশিষ্ট অংশ সহজ শর্তে ঋণ। মোট সাহায্যের ৪২ শতাংশই ছিল প্রকল্প সাহায্য। উল্লিখিত সময়ে জাপানই ছিল বাংলাদেশের জন্য এককভাবে বৃহত্তম দাতা দেশ। বাংলাদেশের মানুষ জাপানকে পছন্দ করে। বাংলাদেশ উন্নয়ন সহযোগী জাপানকে নিয়ে নিশ্চয়ই সব সমস্যা মোকাবেলা করে সামনে এগিয়ে যাবে। প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে বছরে ২ হাজার কোটি মার্কিন ডলারের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য হওয়ার নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এ লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছে উভয় দেশ।
বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে সিপা চুক্তির বিষয়টির সম্ভাব্যতা যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। এছাড়া বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য স¤প্রসারণ, বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বাধা দূরীকরণ ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি, দুদেশের মধ্যকার বিরাজমান ট্যারিফ ও নন-ট্যারিফ বাণিজ্য বাধা দূরীকরণ, কতিপয় বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ভারত সরকার কর্তৃক আরোপিত এন্টি ডাম্পিং বিষয়ে আলোচনা, বর্ডার হাটের সংখ্যা স¤প্রসারণ ও সীমান্ত বাণিজ্য বৃদ্ধি, বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যকার বন্দর সুবিধা স¤প্রসারণের বিষয়ে যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ-ভারত নিজেদের স্বার্থেই দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোর মতো কর্মসূচি গ্রহণ করতে যাচ্ছে। বাণিজ্য চুক্তি থেকে এবার বৃহৎ অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তির (ক¤িপ্রহেনসিভ ইকোনোমিক পার্টনারশিপ এগ্রিমেন্ট-সিপা) কথা হচ্ছে। এটি হবে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে নতুন মাইলফলক। ভারত-জাপানের বাংলাদেশকে স্বীকৃতি, অর্থনৈতিক ও কারিগরি সহায়তা, সাংস্কৃতিক বিনিময় ও পারস্পরিক সফর কার্যক্রম, বাংলাদেশের উন্নয়নে সহায়তা ইত্যাদির মাধ্যমে ত্রিদেশীয় জনগণের মৈত্রীর নবযাত্রা হবে।
লেখক: ব্যবসায়ী
![](https://amaderorthoneeti.com/new/wp-content/themes/amader-orthoneeti/img/sky.jpg)