টাকাপয়সা এবং ব্যক্তির ভাবমূর্তি
দিপু তৌহিদুল : অর্থ প্রায়শই মানুষকে প্রকাশ করে বা প্রকাশ করে যে ব্যক্তিটি আসলেই কেমন। যারা সদয় এবং উদার তারা নিজেদের বৈশিষ্ট্যগুলোকে আরও বড় পরিসরে প্রদর্শন করতে সক্ষম হয়, কিন্তু যারা আগে থেকেই লোভী তারা অধিক অর্থ প্রাপ্তিতে আরও বেশি লোভী হয়ে উঠতে সক্ষম হয়। অর্থ/টাকা হচ্ছে এমপ্লিফায়ার বা পরিবর্ধক। এটি আপনাকে স্বাধীনতা দেয় যে আপনি কে/কী হতে চান।
টাকা অনেক মানুষের ব্যক্তিত্ব পরিবর্তন করে। আমি এমন বহু মানুষদের সঙ্গে কাজ করেছি যারা ধনী এবং ধনী হয়েছেন। আমার খাতিরের লোকজন এবং পরিবারের সদস্যরা আছে যারা ধনী হয়েছেন, কিন্তু স্বার্থ ছাড়া কোনো কাজ করেননি, এদের মধ্যে হাতে গোনা দু’একজন রয়েছেন যারা অর্থকে অপরের ভালো করায় খরচ করেন, কিন্তু লক্ষ্য করেছি এরা নিজ পরিচিত মহলে বিতর্কিত রাজনীতির শিকার হন। অর্থাৎ অর্থ ও ক্ষমতা প্রাপ্তি ভিন্ন ব্যাখ্যায় শত্রæ কেনার মতন কিছু। বেশির ভাগ মানুষ সাহস করে যে সত্যটা বলবে না ‘অর্থ মানুষকে দুষ্ট, নারসিসিস্টিক এবং প্রতারক করে তুলতে পারে’। এটা না বলার পেছনে মূল কারণ, আমরা সবাই অর্থ কামনা করি, কেউ অর্থ প্রাপ্তি মিস করতে চাই না।
পরিচিত খাতিরা ও অনেক আত্মীয়স্বজন রয়েছেন যারা তাদের অতীতের জীবনযাপন থেকে এখন প্রচুর অর্থের অধিকারী হয়েছে এবং এখন তারা কখনোই ফেলে আসা অতীতের ‘শুধু ভালো’ জীবনযাপন করছিলো সে বিষয় নিয়ে কথা বলতে চায় না, বরং বর্তমান সময়েই ভিত্তিতে শো অফ করতেই পছন্দ করে। অতীতের মন্দ সময়গুলোরে অর্থ এমনভাবেই ভুলিয়ে দেয়, যাতে করে একজন মানুষ নতুন অচেনা মানুষ হয়ে উঠতে পারে। পারিবারিক ও সামাজিক সমস্যা এবং দুর্দশা লুকানোর জন্য অর্থ প্রায়ই ছদ্মবেশ হিসাবে ব্যবহৃত হয়। আপনি ভালো না মন্দ সেটা অর্থ সমাজ ও পরিবারে নির্ধারণ করে। লক্ষ্য করবেন অর্থবানের আড়ালেই সমালোচনা থাকে কিন্তু তাদের সামনে সবাই হাত কচলিয়ে কথা বলেন। আমি মনে করি প্রত্যেক মানুষ নিজে কতটা চান এবং তাদের চাহিদা কতটুকু হলে পূরণ হয় সেই অনুযায়ী ধনী হয়। বাস্তবে যখন আমরা চাহিদা পূরণ করতে যাই তখন মনের অজান্তে পারিবারিক ও সামাজিক চাপে পড়ে নতুন নতুন চাহিদারা যুক্ত হয়।
টাকার চাহিদারা অসীম, খুব কম মানুষ রয়েছে যারা অসীম ও অযৌক্তিক চাহিদাটা সামাল দেবার ক্ষমতা রাখেন, কিন্তু এটাও সত্যি এমন মানুষরাও রয়েছে। যে কেউ ধনী জীবনযাপন করতে পারে যদি তারা কেবলমাত্র শো অফের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো কিনে নিতে পারে। আমার প্রয়োজন নেই এমন কোন দ্রব্য কিনতে খরচ করি না, যদি না এটি কারও জন্য উপহার হয়, এমন নীতি এপ্লাই করার জন্য শক্ত নৈতিক মাইন্ড সেট প্রয়োজন হয়।
অর্থ উপার্জনের প্রক্রিয়ায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন কিন্তু সেই অর্থটারে উপভোগ করার জন্য শেষ পর্যন্ত আপনার হাতে কোনো সময় এবং শক্তি থাকেই না। আশপাশে বহু অর্থ উপার্জনকারী পাবেন যারা নিজেকে টাকা কামানোর মেশিন বানিয়ে কবরে চলে গেছেন আর তার কামাই করা টাকা দিন শেষে ভিন্ন মানুষ নষ্ট কাজে খরচ করছে। অর্থ বা টাকা হচ্ছে নেশার মতন, যিনি এই নেশা করেন তিনি সকল পথে জীবনের শেষ সেকেন্ড পর্যন্ত এটা অর্জনে মন দিয়ে রাখেন। এটা করতে গিয়ে তিনি কি কি হারাচ্ছেন সেটা মুখ্য থাকে না। বাংলাদেশের বুড়া বুড়ি বয়সের চোর/দুর্নীতিবাজদের দিকে তাকান, বলুন ওদের ওই টাকা শেষে কে খায় বা খরচ করে। টাকা পাওয়ার ব্যাপারটা তখনই ঘটে যখন ব্যক্তি কেবল টাকা চায়। কোনো উচ্চাকাক্সক্ষা নেই, কোনো লক্ষ্য নেই, শুধু সাধারণ অর্থ। এই ব্যক্তিরা চুরি করতে পারেন, খুন করতে পারেন, ব্যাংক ডাকাতি করতে পারে, অবৈধ লেনদেন করতে পারে, টাকা পাওয়ার জন্য যেকোনো কিছু করতে পারে।
এ ধরনের ব্যক্তি খুব ধনী হতে পারেন। টাকা মানুষকে কোনো পরিবর্তন করে না, টাকা মানুষকে আসলে প্রকাশ করে। এটি কেবল আমাদের আরও বেশি হতে সক্ষম করে যে আমরা ইতোমধ্যেই আছি। জীবনে অধিক টাকার আগমনে দয়ালু এবং উদার লোকেরা আরও বেশি করে দয়ালু এবং উদার হয়ে উঠেন আর আত্ম-ধ্বংসকারী লোকেরা আরও আত্ম-ধ্বংসাত্মক হয়ে উঠে। শেষে বলতে চাই, আমার কাছে মনে হয় টাকা ব্যক্তিত্বকে পরিবর্তন করে না। কিন্তু এটি সেই ব্যক্তির কিছু ইতিবাচক এবং নেতিবাচক গুণাবলীদের প্রকাশ করে দেয়। ফেসবুক থেকে