সৃষ্টিজগতে সব জীবের খাবার সীমিত বিজ্ঞান ও ধর্ম কি এই শিক্ষা দেয়?
ম ইনামুল হক
পৃথিবীতে জন্মানো সকল জীবেরই খাবার জৈবিক। বড় প্রাণী ছোট প্রাণীকে খায়, তার বড় প্রাণী তাকে খায়। এভাবে খাদক খাদকের শৃঙ্খলায় প্রাণীরা বাঁচে, বড় হয়। খাদ্য খাদকের এই প্রক্রিয়ায় সর্বনি¤েœ আছে উদ্ভিদ। উদ্ভিদ তার পাতা ও শিকড় দিয়ে মাটি ও বায়ু থেকে খাবার শুষে নেয়। এই শোষণ প্রক্রিয়ার বাহন জল। জল বায়ু, মেঘ, নদী ও সাগরে থাকে। তাই জীবের বিচরণ ক্ষেত্র বায়ুমন্ডল ও জলমন্ডল। দিনে সূর্যরশ্মির মাধ্যমে পৃথিবীর বায়ুতে তাপ প্রবেশ করে, রাতে বেরিয়ে যায়। এই সূর্যরশ্মির আলো ও তাপ উদ্ভিদকে বায়ু থেকে খাবার নিতে সাহায্য করে। ফলে উদ্ভিদের খাবার সংগ্রহ প্রক্রিয়া দৈনিক ও বাৎসরিক চক্রে নবায়নযোগ্য। পৃথিবীর ব্যাপ্তি সীমিত, তাই এর বায়ুমন্ডল ও জলমন্ডলে জীবের খাবার সীমিত। তবে জল ও স্থলের এলাকা ভেদে একেক জীবের একেক ঋতুতে যথেষ্ট পরিমাণ খাবার থাকে।
খাবারের অভাব হলে এক এলাকার বন্যপ্রাণী পায়ে হেঁটে বা উড়ে গিয়ে অন্য এলাকায় পাওয়া খাবার খেয়ে বাঁচে। তাই মরু অঞ্চলে পশু চরানো যাযাবরেরা যে এলাকায় বৃষ্টিপাত হয়েছে সেই এলাকায় তাদের পশুদের নিয়ে গিয়ে গজিয়ে ওঠা ঘাস খাওয়ায়। উত্তর গোলার্ধে শীতের সময় তুষারপাত শুরু হলে মেরু অঞ্চলের পাখিরা দক্ষিণে উড়ে যায়। এরা পরিযায়ী পাখী। স্থানীয়ভাবে পরিযায়ী পাখিও আছে।
পৃথিবীর যে সকল অঞ্চলে তুষারপাত নেই, কিন্তু বৃষ্টিপাত এবং বিস্তৃত বনভ‚মি আছে সেখানে মানুষ ও পশু হাজার হাজার বছর ধরে গোত্র যুদ্ধে লিপ্ত থাকে। কারণ সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের চাহিদা অনুযায়ী খাদ্য পেতে পাশের গোত্রের এলাকা দখল করতে হয়। মরু অঞ্চলেও মরুদ্যান দখলের যুদ্ধ চলতো। তবে অনেক অঞ্চলে জীব ও মানুষের জন্মমৃত্যুর মাধ্যমে প্রাকৃতিক খাদ্যের ভারসাম্য বজায় থেকেছে। উনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীতে স্থানীয় অধিবাসীদের নিশ্চিহ্ন করে ইউরোপীয়রা দুই আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়া দখল করে নেয়। এরপর এই দুই শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষের সংখ্যা ১০০ কোটি থেকে বেড়ে ৭০০ কোটি হয়, ও ২০২০ নাগাদ ৮০০ কোটি ছাড়িয়ে গেছে। এতে অবশ্যই বিজ্ঞানের অবদান আছে।
মানবসমাজে বিজ্ঞানের আবিষ্কার ও তার ফলে মানব সভ্যতার উন্নতি নিয়ে গর্ব করার লোকের অভাব নেই। এই বিজ্ঞান মানুষকে ইহজাগতিক করেছে, ভোগবাদী করেছে। বিজ্ঞান আধ্যাত্মিকতাকে বাতিল করেছে। পরকালের বিশ্বাস না হয় আজগুবি, কিন্তু পৃথিবীর অন্যান্য সকল জীবের আহার কেড়ে নিয়ে তাদের নিশ্চিহ্ন করে বা কোণঠাসা করে মানুষের লাগামহীনভাবে বেড়ে যাওয়া কি ভালো ব্যাপার হলো?
খ্রিস্টীয় উনবিংশ ও বিংশ শতাব্দী সারা পৃথিবীতে বিপ্লবেরও কাল। শিল্প বিপ্লব, নারী স্বাধীনতা, কম্যুনিস্ট বিপ্লব, ইত্যাদি। বিপ্লবের স্বপ্ন দেখানো মার্ক্সবাদীরাই এখন সারা বিশ্বে সবার উপরে জ্ঞানী। তাদের কথাÑ পৃথিবীতে পর্যাপ্ত সম্পদ আছে, সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব হলে, সাম্যবাদী সমাজ হলে সব ঠিক হয়ে যাবে। তাদের আক্রমণের ক্ষেত্র ছিল পুঁজিবাদী অর্থনীতি। এখন তাঁরাও কর্পোরেট অর্থনীতির কবলে পড়েছে। মার্ক্সবাদী তত্তে¡ পৃথিবীর সকল জীবের সহঅবস্থানের কথা, তাদের বেঁচে থাকার অধিকারের কথা নেই কেন? ধর্মীয় বিধান ও ওয়াজে পৃথিবীর সকল জীবের সহ অবস্থানের কথা, তাদের বেঁচে থাকার অধিকারের কথা বলা হয় না কেন? ক্ষুদ্রঋণ দর্শনে, পুরুষ নারীর হাতে আধুনিক চকচকে মুঠোফোনে এ বিষয়ে বার্তা আসে না কেন? রাজনৈতিক নেতারা তাদের গলাবাজিতে পরিবেশ নিয়ে হুঙ্কার ছাড়েন না কেন?