সায়েন্টিফিক জার্নালে গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশনা এবং কিছু অপ্রিয় কথা
মোহাম্মদ বাছিত
এই ইস্যু নিয়ে আমরা অনেকেই লেখা-লেখি করি, অনেক লেখা-লেখি হয়েছে তারপরেও মনে হয় আরও বিস্তর লেখা-লেখি দরকার, অনেক বেশি সচেতনতা তৈরি করা খুব দরকার, অন্যথায় ব্যবসায়িক প্রকাশকদের চতুরতার কারণে আমাদের তরুণরা বেশ ভালো বিপদের সম্মুখীন হতে পারে। আজকের লেখাটি মূলত এমএসসি লেভেলের তরুণ গবেষকদের জন্য। বিজ্ঞানের জার্নালগুলোকে মোটা-দাগে দুইভাগে ভাগ করা যেতে পারে। প্রথম ভাগ ওইসব জার্নাল যেগুলো পাবিøশ করে, Structural reports merely dealing with synthesis and characterization ব্যবসায়িক পাবিøশারদের জার্নালের প্রায় ৯০ ভাগ এই ক্যাটাগরিতে পড়ে।
দ্বিতীয় ভাগ ওই ধরনের জার্নাল যেগুলো পাবলিশ করে, A significant development in the respective subject judged according to originality, quality of scientific content and contribution to existing knowledge. আমাদের দেশ থেকে যেসব গবেষণা প্রবন্ধ মৌলিক বিজ্ঞানের বিষয়ে প্রকাশিত হয় তার প্রায় সবটাই প্রথম ভাগে পড়ে, খুব অল্প কিছু ব্যতিক্রম বাদ দিলে। আমাদের গবেষণা বাজেট, গবেষণা সংস্কৃতি, ফ্যাসিলিটি, মানসিকতা ইত্যাদি বিবেচনা করলে আমাদের গবেষকরা যেটুকু করছেন তা নগণ্য নয়। কিন্তু সমস্যাটি অন্য জায়গায়, আমরা আমাদের তরুণদের কোনো এক অসুস্থ প্রতিযোগিতার মধ্যে ফেলে দিচ্ছি। মৌলিক বিজ্ঞানে গবেষণার জন্য যে পরিমাণ পড়াশোনা প্রয়োজন তার ধারেকাছেও তারা যাচ্ছে না। জার্নালে গবেষণা প্রবন্ধ লেখার কিছু কায়দা কানুন শিখে নিয়েই তারা উপরের প্রথম ক্যাটাগরির জার্নালে প্রবন্ধ প্রকাশ করে। তাদের কাছে কার থেকে কার প্রবন্ধের সংখ্যা বেশি এটাই বিবেচ্য হয়ে যাচ্ছে। কিছু ম্যাটেরিয়াল সিন্থেসিস করে, কিছু কমন কারেকটারাইজেশন করেই তারপর একটি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশ করা হচ্ছে। অথবা কম্পিউটার সিমুলেসনের মাধ্যমে কিছু প্রপার্টি নির্ণয় করে একটি পেপার লিখে ফেলা হচ্ছে। ক্ষেত্র বিশেষ দেখা যায় প্রায় সবগুলো পেপারের গল্প কমবেশি একই। কেউ প্রশ্ন করতে পারেন, বেশি পাবলিকেশন করলে ক্ষতি কোথায়? অবশ্যই কোনো ক্ষতি নেই যদি গবেষণার বিষয়টি জেনে বুঝে সত্যিকার অর্থে গবেষণা করে একটি প্রবন্ধ প্রকাশ করা হয়। কিন্তু যখনই কোনো চাকরির ইন্টার্ভিউ কিংবা কোনো স্কলারশিপের ইন্টার্ভিউ নেওয়ার সময় তাঁদের প্রকাশিত গবেষণা প্রবন্ধ থেকে একদম প্রাথমিক লেভেলের কিছু প্রশ্ন করা হয় তখন বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কোনো উত্তর পাওয়া যায় না। যেকোনো বিষয়ে যেটুকু বেসিক জ্ঞান থাকা অত্যাবশ্যকীয়, দেখা যায় তার প্রায় কিছুই নেই। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই এটা সকলের কাছে বোধগম্য হয়ে যায় যে প্রকাশিত প্রবন্ধ অথর না বুঝে লিখেছেন, কিংবা অন্য কেউ লিখেছেন তিনি নামে মাত্র একজন অথর। মাত্র এমএসসি পাস করা একজন ছাত্রের কাছ থেকে কেউই ৪-৫ টি গবেষণা প্রবন্ধ আশা করেন না। যদি কেউ জেনে শুনে বুঝে বেশি প্রকাশনা করতে পারেন তাহলেই অবশ্যই সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। আর যদি প্রকাশনা বাড়ানোর খাতিরে প্রবন্ধ প্রকাশ করা হয়ে থাকে, প্রকাশিত প্রবন্ধের একদম বেসিক বিষয়টির সঠিক উত্তর দিতে অথর ব্যর্থ হন, তখন উক্ত অথর নিজেই অনেক বিব্রত হন। এমএসসি পাস করা একজন ছাত্র একটি থিসিস করে, ওই থিসিস থেকে যদি একটি প্রকাশনা থাকে তাহলে খুবই ভালো, না থাকলেও কোনো সমসয়া নেই, সে যদি তার বিষয়ের একদম মৌলিক বিষয়গুলো সম্পর্কে ভালো জানাশোনা রাখে, আত্মবিশ্বাসের সাথে প্রশ্নের উত্তর প্রদান করে। জার্নালে বেশি সংখ্যক গবেঘণা প্রবন্ধ থাকলেই অনেক কিছু, না থাকলে কম কিছু এ ধারণাটি একদম সঠিক না। সংখ্যা বাড়ানোর খাতিরে পড়াশোনা বাদ দিয়ে গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশ করা একসময় গলার কাঁটা হয়ে যেতে পারে, ইতোমধ্যে বিষয়টি অনেক তরুণ বুঝতে পেরেছে। একজন এমএসসি লেভেলের ছাত্রের কাছ থেকে তার বিষয়ের উপর বেসিক জ্ঞান অনেক বেশি প্রত্যাশিত। কোনো অসুস্থ প্রতিযোগিতায় নিজেকে সমর্পণ না করে পড়াশোনা এবং জানার প্রতি দয়া করে আগ্রহ বাড়াও, এই বয়সে গবেষণা প্রবন্ধ সংখ্যা বাড়ানোর চেয়ে গবেষণা শেখার প্রতি বেশি গুরুত্ব দাও, দিনশেষে লাভবান হবে। ফেসবুক থেকে