ভালো চাকরি, টাকাপয়সা এবং আমাদের মানসিকতা
আমিনুল ইসলাম
প্রত্যয় নামের যে ছেলেটা আত্মহত্যা করেছে, তার জন্য খারাপ লাগছে। এভাবেই তরুণ ছেলে-পেলেগুলো নিজেদের শেষ করে দিচ্ছে। পত্রিকায় পড়লাম, তার পরিবার বলছে, সে নাকি ভালো চাকরি না পেয়ে হতাশায় ভুগছিলো। মানসিক চিকিৎসাও নিচ্ছিল। রাশিয়া থেকে দেশে ফিরে একটা বায়িং হাউজে কাজ করছিলো ছেলেটা। বিয়েও করেছিলো। সেই সঙ্গে ভালো চাকরি খুঁজে বেড়াচ্ছিল। ভালো চাকরি আর হয়নি। বিয়েটাও ভেঙে গিয়েছে। শেষমেশ নিজের গলা নিজেই কেটে আত্মহত্যা করেছে। খারাপ লাগছে এই ভেবে-বিদেশে পড়তে গিয়েও ছেলেটা বাংলাদেশি মানসিকতা থেকে বের হতে পারেনি। পারবেইবা কী করে!
আমরা বাংলাদেশিরা তো বিদেশে এসেও সেই একই চর্চা করে বেড়াই। কে ভালো চাকরি করছে। কার ভালো গাড়ি আছে। কার কত বেতন। এসবই থাকে বিদেশে থাকা বাংলাদেশিদের আড্ডার মূল বিষয়। আমার এই শহরে থাকা বাংলাদেশিদের কথাবার্তা শুনলে আমার মাঝে মাঝে মনে হয়, তাদের কাছে জীবন মানে হচ্ছে টাকা-চাকরি, বাড়ি-গাড়ি। তারা এর বাইরে আর কোনো আলোচনাই করে না। এজন্য দুই-একজন ছাড়া এই শহরের কোনো বাংলাদেশির সঙ্গে আমি সেই অর্থে কথাও বলি না। আমার মনে হয়েছে, এদের সঙ্গে কথা বলার যোগ্যতাই আমার নেই। একদিন তো এক বাংলাদেশি ছাত্র আমাকে বলে বসেছে, ‘স্যার, আপনি আমাদের কেন পড়তে বলেন? পড়াশোনা করে কী লাভ’?
অথচ ছেলেটা এখানে পড়তেই এসছে। তো আমরা এমনই। বিদেশে এসেও দিন রাত একে-অপরের সমালোচনা করে বেড়াই। আপনি যদি বাংলাদেশি কমিউনিটির যেকোনো একটা আড্ডায় হাজির হন। আপনার পরের বার আর সেখানে যাবার রুচি হবে না। তারা অন্যের অনুপস্থিতে মানুষের সমালোচনা করে ভীষণ মজা পায়। এমন কোনো গীবত নেই, এরা গেয়ে বেড়ায় না। সেই সঙ্গে আছে গাড়ি-বাড়ি, টাকাপয়সার আলোচনা।
প্রত্যয় নামের ছেলেটা রাশিয়াতে হয়তো পড়তেই গিয়েছিল। পড়াশোনা শেষ করে দেশেও ফিরেছে। কিন্তু তার মানসিকতার বদল হয়নি। তাই হয়তো ভালো চাকরি পাওয়াকেই মনে হয়েছে জীবন। আর হবেই না বা কেন? আশপাশের সবাই তো এসবকেই জীবন বানিয়ে ফেলেছে। এসব না থাকলে আর জীবন কীসের!
জীবনে টাকার দরকার আছে। ভালো চাকরি কিংবা গাড়ি-বাড়িরও দরকার আছে। অতি অবশ্যই দরকার আছে। ইচ্ছেমতো চেষ্টা করুন এসব অর্জন করার। তাতেও কোনো সমস্যা নেই। চেষ্টা করতেই থাকুন। এরপরও যদি দিন শেষে এসব অর্জন করা না যায়। তখন স্রেফ ধরে নিতে হবে- এসব আমার জন্য নয়। জগতের সবাই সব কিছু পায় না। এটাই জীবন। মনে রাখবেন, সবকিছু পাওয়াকে জীবন বলে না। কখনোই না। রবং পাওয়া-না পাওয়ার যে আনন্দ এবং বেদনা, তার নামই জীবন। ফেসবুক থেকে