সব সাংবাদিক কি শ্রমজীবী শ্রেণির?
হাসান শান্তনু
হজ করে রাজনৈতিক ‘জনপ্রিয়তা’ বাড়ানো বকেয়া বামনেতা হাসানুল হক ইনু তখন তথ্যমন্ত্রী। তাঁর জোর সুপারিশে ঢাকার একটা প্রচারমাধ্যমে চাকরি পান এক সাংবাদিক। মন্ত্রী চাইতেন, তাঁর অনুষ্ঠানগুলোর প্রতিবেদন ওই সাংবাদিক করবেন। সেটাই চলছিলো। একদিন মন্ত্রীমশাইয়ের চোখে পড়ে, ওই সংবাদমাধ্যমের প্রচারিত, বা প্রকাশিত তাঁর অনুষ্ঠানের প্রতিবেদন ভুলে ভরা, বাক্যে অসঙ্গতি। মন্ত্রী পরে জানতে পারেন, ওই সাংবাদিক কার্যালয়ে ‘নির্দেশ’ দিয়ে রেখেছেন, তার লেখা প্রতিবেদনে কেউ যেন ‘হাত না দেন’। মানে কোনো ধরনের সম্পাদনা না করেন। ‘মন্ত্রীর লোকের নির্দেশ’ অমান্য করার সাহস ওই প্রতিষ্ঠানের অন্য সাংবাদিকরা দেখাননি।
শুদ্ধ বানানে শব্দ, বাক্য লিখতে না পারা ওই ‘মন্ত্রীর লোক’ সাংবাদিক হলেও শ্রমজীবী পর্যায়ের নন। ঢাকায় তার বাড়ি, সম্পত্তি, ‘প্রশাসনিক’ প্রভাব আছে। তিনি একা নন, ঢাকার সংবাদমাধ্যমগুলোতে ‘ঢাউস পদে’ কর্মরত এমন অনেকেই আছেন, যারা মালিকপক্ষের, মন্ত্রী-সংসদ সদস্যের, অমুক-তমুক নেতা, বা কোনো রাজনৈতিক দলের লোক। তাদের কারো কারো বিদেশে ফ্ল্যাট, বাড়ি, অন্তত সবার ঢাকায় বাড়ি-গাড়ি আছে। মে দিবস যেসব গরিব, ছাপোষা সাংবাদিকের অধিকার প্রতিষ্ঠার আহŸান নিয়ে আসে, তারা সেই কাতারের সাধারণ কেউ নন। এটাও সত্য, খয়ের খাঁ, চাটুকার মার্কাদের তুলনায় ঢাকাসহ দেশজুড়ে আত্মমর্যাদাশীল, সৎ, রুচিবান সাংবাদিক, সংবাদকর্মীর সংখ্যা বেশি।
এবার আরো দুটি ঘটনা জানা হোক। দুই তরুণ সাংবাদিক সহকর্মীর মধ্যে তর্ক ‘তুমি’, ‘আপনি’ সম্ভোধন নিয়ে। সাদামাঠা একটা বিষয় হলেও তর্কে জড়িত একজন পত্রিকার ‘হর্তাকর্তা সাংবাদিকের’ কাছে অভিযোগ করেন ‘বিচারের আশায়’! মশা-মাছির পশম ছেঁড়া মার্কার ওই সাংবাদিক মনে করেন, বিষয়টি নিয়ে যে তার কাছে আগে অভিযোগ করেন, তিনি আসলে তার ‘আনুগত্যের লোক’। ‘আনুগত্য’ মাপের কী বুদ্ধি! তার কাছে অভিযোগ না করা সাংবাদিকের চাকরিটা চলে গেলো! চাকরিচ্যুত ওই সাংবাদিক এর মাত্র মাস দুয়েক আগে দৈনিক যায়যায়দিন ছেড়ে ওই পত্রিকায় কাজ শুরু করেন।
আরেক সাংবাদিকের নবজাতক হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে ভর্তি। নবজাতকের অসুস্থতার কারণে একদিন তার কর্মরত থাকা পত্রিকার কার্যালয়ে উপস্থিত থাকতে পারেননি। তার চাকরিটাও চলে গেলো। ঘটনা দুটি খুব বেশিদিনের নয়। নির্দিষ্ট দিনক্ষণের কথা অনুল্লেখ থাকুক। ওই দুই সাংবাদিককে চাকরিচ্যুত করা দুজনেই ‘মালিকপক্ষের লোক’। যেমন মালিক, তেমন তার পেয়াদা, চাপরাশি। তাদের নামের আগে সাংবাদিক অভিধা থাকলেও তারা ‘শ্রমজীবী’ নন। তারা দামি গাড়িতে চড়েন, আকাশছোঁয়া অট্টালিকায় থাকেন, কোনো উৎসবের আগে কেনাকাটা করেন ইউরোপের বিপণিবিতান থেকে। লেখক: সাংবাদিক। ফেসবুক থেকে