শ্রমিক রাজনীতির ইচ্ছার অপমৃত্যু!
নুরুল আলম পাঠান মিলন
মে দিবস। মূলত শ্রমিক দিবস, শ্রম দিবস। ২০১১ সালের জুলাইতে ছাত্রলীগ থেকে বিদায়ের পরে ইচ্ছে ছিল শ্রমিক রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হবো। অনিবার্যভাবেই শ্রমিক লীগের মাধ্যমে। আমার ভাবনায় ছিল উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ছাত্ররাজনীতি ও শ্রমিক রাজনীতিই হলো রাজনীতি পাঠের ঊর্বর ভ‚মি। বামপন্থীরা তো বটেই, মধ্যপন্থী অনেক নেতাই শ্রমিক রাজনীতিতে সম্পৃক্ত ছিলেন। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী শ্রমিক রাজনীতি করেছেন। হুমায়ূন কবির শ্রমিক রাজনীতি করেছেন। পঞ্চাশের দশকে কামরুদ্দীন আহমদও শ্রমিক রাজনীতি করেছেন। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী, এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী প্রমুখও শ্রমিক রাজনীতি করেছেন। স্বাধীনতা পূর্বকালে শহীদ শেখ ফজলুল হক মণি, সিরাজুল আলম খান প্রমুখ শ্রমিক রাজনীতি করেছেন। এরকম ভাবনা থেকেই ছাত্ররাজনীতি থেকে বিদায়ের পরে শ্রমিক লীগে সম্পৃক্ত হবার বাসনা ছিল। মূলত সংগঠক হওয়ার চিন্তা। বিশিষ্ট বামনেতা জসীম উদ্দীন মÐলের মতো শ্রমিক থেকে সংগঠক বা নেতা হওয়া তো আর সবার ক্ষেত্রে সম্ভব নয়। কাজী জাফর আহমদ, মনজুরুল আহসান খানদের মতো অনেক বামপন্থীরাও সংগঠক ছিলেন, শ্রমিক ছিলেন না। এরকমই চিন্তা ছিল আমার।
কৃষকের ছেলে আমি, নিজেরও কৃষি কাজের কিঞ্চিৎ অভিজ্ঞতা আছে। যদিও এদেশের বামপন্থীরা কৃষকদেরকে শ্রমিক হিসেবে আমলে নেয় নি, তবুও কৃষক মূলত শ্রমিক-ই। চীনবিপ্লবে কৃষকের বিরাট অবদান। মাও সে তুং কৃষককে বিবেচনায় নিয়েছিলেন। এটা নিয়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে দ্ব›দ্বও হয়েছিল। চীনে কৃষক আন্দোলনের ইতিহাস বহু প্রাচীন। বাংলাদেশেও কৃষক আন্দোলনের অতীত বেশ গৌরবের। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে কৃষক ও কৃষিজীবী পরিবারের অবদানও অনেক। আমার বিবেচনায় ছিল কৃষককে শ্রমিকের মর্যাদায় আসীন করার বিষয়টি। এজন্য কৃষক সংগঠন না করে শ্রমিক সংগঠন করতে আগ্রহী ছিলাম। কৃষক সংগঠনের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও অবস্থান প্রায় নাই বা দুর্বল। শ্রমিক সংগঠনের অবস্থান অনেক শক্তিশালী। এসব আমার জগাখিচুড়ি চিন্তা কিনা সে সম্বন্ধে এখনও নিশ্চিত নই।
যাহোক, এরকম ভাবনা থেকেই যোগাযোগ করেছিলাম শ্রমিক লীগ নেতা ইসরাফিল ভাইয়ের সাথে। নওগাঁ থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ইসরাফিল আলম, সভা-সেমিনার-টকশোর পরিচিত মুখ। চলন-বলন-কথনে সম্মোহনী জাগানিয়া মানুষ ইসরাফিল ভাই। তাঁর সাথে দেখা করে আলাপও করলাম। তিনিও আগ্রহ দেখালেন। ইসরাফিল ভাই শ্রমিক লীগের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে এসেছিলেন। প্রথমে তিতাস গ্যাস কোম্পানীতে শ্রমিক লীগের রাজনীতি করেছিলেন। পরে ঢাকা মহানগর শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায?িত্বও পালন করেছেন। এজন্যই ইসরাফিল ভাইকে মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছিলাম।
চিন্তা করলাম যেহেতু শ্রমিক রাজনীতিই করবো, একটু জেনেবোঝে নিই। আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংগঠন সম্পর্কে একটু বইপুস্তক পড়লাম। আরও বেশি আগ্রহী হয়ে উঠলাম। ভারতবর্ষের শ্রমিক রাজনীতি নিয়েও কিছু পাঠ নিলাম বইয়ের পাতা থেকে। এরমাঝে ইসরাফিল ভাইয়ের সাথেও কথা বলে যাচ্ছি, যোগাযোগ রাখছি। আলাপ সালাপে তিনি বেশ আগ্রহ দেখান কিন্তু মুচকি হাসেন। হাসির কারণ খুঁজে পাইনা।
শেষে এলাম বাংলাদেশের শ্রমিক রাজনীতি সম্পর্কে। ক‚ল নাই কিনার নাই দশা। ‘যতোই গভীরে যাই মধু যতোই ওপরে যাই নীল’ এর উল্টা অবস্থা আমার। এসব নিয়ে বিশদ আলাপে না যাই। ভিন্ন চিত্রও আছে। ইসরাফিল ভাইয়ের সাথে আবারও কথা বললাম। এবার তিনি আর মুচকি হাসেন না, হো হো করে হেসে উঠলেন। আমিও আগের সেই মুচকি হাসির শানেনূজুল বুঝলাম। এখানেই আমার শ্রমিক রাজনীতি করার বাসনার ইতি ঘটেছিল। ইসরাফিল ভাই মারা গেছেন। সদালাপী ও হাসিখুশি মানুষটি করোনার ভয়াল থাবায় মারা গেছেন। তাঁর বিদেহী আত্মার চিরশান্তি কামনা করি। মে দিবসে এসব কথা মনে পড়লো। সকল শ্রমিকের কল্যাণ হোক। ফেসবুক থেকে