সারাদেশের সড়ক নিরাপত্তায় ৪ হাজার ৯৮৮ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্প
সোহেল রহমান : প্রতিদিন দেশের সড়ক-মহাসড়কে, রেল ও নৌ-পথে দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে। প্রতিবছর সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির সংখ্যা কম নয়। এ নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে সরকারেরও। বেসরকারি সংগঠন যাত্রী কল্যাণ সমিতি’র গবেষণা মতে, ২০২২ সালে সারাদেশে ৬ হাজার ৭৪৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৯ হাজার ৯৫১ জন নিহত হয়েছে এবং আহত হয়েছে ১২ হাজার ৩৫৬ জন। চলতি বছর জানুয়ারি, ফেব্রæয়ারি ও মার্চে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে যথাক্রমে ৫৮৫ জন, ৪৬৭ জন ও ৫৩৮ জন। এ প্রেক্ষিতে সারাদেশের সড়ক নিরাপত্তায় বাংলাদেশ সড়ক নিরাপত্তা শীর্ষক একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। বিশ^ব্যাংকের অর্থায়নে পাঁচ বছরে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৯৮৮ কোটি ১৪ লাখ টাকা। সরকারের চারটি সংস্থা (সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশে পুলিশ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর) যৌথভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাস ও দুর্ঘটনাজনিত ক্ষতির মাত্রা কমানো এবং সড়ক নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাসমূহের সক্ষমতা বাড়ানো এ প্রকল্পের প্রধান উদ্দেশ্য। ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় (অধ্যায় ৬; অনুচ্ছেদ ৬.৩) পরিবহন সেক্টরের ভিশন হিসেবে ২০৪১ সালের মধ্যে সড়ক নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট সকল সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত আছে। অনুচ্ছেদ ৬.৪ এ ২০২৫ সালের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হার প্রতি লাখে ১৩.০ তে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া, এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা- ১১.২ এ ২০৩০ সালের মধ্যে নিরাপদ, সাশ্রয়ী, সকলের জন্য প্রবেশগম্য এবং টেকসই পরিবহন ব্যবস্থা বিনির্মাণের বিষয়ে উল্লেখ রয়েছে। ফলে প্রকল্পটি ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা এবং এসডিজি’র সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। দেশের সকল জেলার সকল উপজেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। প্রকল্পের আওতায় ৫ হাজার ১৪০ কিলোমিটার সড়কে সড়ক নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়ন করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাস পাবে এবং দুর্ঘটনাজনিত ক্ষতির মাত্রা কমবে। এছাড়া সড়ক নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাসমূহের সক্ষমতা বাড়বে। প্রকল্পটিতে বিশ^ব্যাংকের অর্থায়নের পরিমাণ ৩ হাজার ৭৫৯ কোটি ৮২ লাখ টাকা এবং বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নের পরিমাণ ১ হাজার ২২৮ কোটি ৩২ লাখ টাকা। প্রকল্প বাস্তবায়নের সময়কাল ধরা হয়েছে চলতি ২০২৩ সালে মে থেকে ২০২৮ সালের জুন পর্যন্ত। প্রকল্পের আওতায় প্রধান কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছেÑ ১১৬ একর ভ‚মি অধিগ্রহণ; ১৪০ কিলোমিটার এন-৪ এবং এন-৬ সড়ক করিডোরে পাইলট ভিত্তিতে সড়ক নিরাপত্তা কার্যক্রম; অগ্রাধিকার ভিত্তিক কার্যক্রম; টাঙ্গাইল ও বগুড়া জেলায় সড়ক নিরাপত্তা কার্যক্রম; পেশাদার গাড়ী চালকদের প্রশিক্ষণ; বাস্তবায়নকারী সংস্থার সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ; পরামর্শক (প্রকল্প সহায়তা, সওজ, বিআরটিএ, স্বাস্থ্য, পুলিশ); প্রচার ও বিজ্ঞাপন ব্যয়; বেসিক লাইফ সেটিং ম্যানেজমেন্ট/পরিচালনা, বাইক এ্যাম্বুলেন্স ম্যানেজমেন্ট/পরিচালনা, কল সেন্টার ও অন্যান্য সার্ভিস; আইটিএমআইডিএস/আইটিএস হার্ডওয়্যার এবং কন্ট্রোল হার্ডওয়্যার/সফ্টওয়্যার এবং আইটিএমআইডিএস পূর্ত কাজ, কন্ট্রোল রুম সংস্কার; ওষুধ এবং সরঞ্জামসহ বিএলএস অ্যাম্বুলেন্স সরবরাহ; সমন্বিত ডাটাবেস সফ্টওয়্যার, হার্ডওয়্যার, রক্ষণাবেক্ষণ এবং হাইওয়ে পুলিশ; পুনর্বাসন।
অন্যান্যের মধ্যে হাইওয়ে পুলিশ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণ (৫টি ভবন); টাঙ্গাইল সদর হাসপাতাল, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও মুগদা জেনারেল হাসপাতালের জরুরী কক্ষ সংস্কার কাজ; আইটিএমআইডিএস হাইওয়ে পুলিশ; সিস্টেম লাইসেন্স, সিস্টেম সফ্টওয়্যারসহ এএনপিআর (টিএমসি) এবং সমন্বিত ডাটাবেস সফ্টওয়্যার, হার্ডওয়্যার, রক্ষণাবেক্ষণ এবং হাইওয়ে পুলিশ (বিআরটিএ)।