
মিয়ানমারের সিত্তে পোর্ট, চট্টগ্রাম বন্দর এবং ভারত-বাংলাদেশ ও চীন

কাজী এম মুর্শেদ
৪ মে ২০২৩Ñ কলকাতা থেকে জাহাজ ছেড়েছে। গন্তব্য মিয়ানমারের সিত্তে পোর্ট। এই জাহাজ সিততে পৌঁছে এরপর নদীপথে কালাদান নদী দিয়ে পালেটোয়া পৌঁছাবে। সেখান থেকে রাস্তায় যাবে মিজোরামের জরিনপুই দিয়ে। সিত্তে পোর্ট তৈরিতে ভারত খরচ করেছে ১২০ মিলিয়ন ডলার, বাকি ৩৮০ মিলিয়ন রাস্তা পথে সেভেন সিস্টার স্টেটে ধীরে ধীরে পৌঁছাবে।
এই পরিকল্পনা ২০১৪ সালে হওয়ার কথা ছিলো, এর মধ্যে রাখাইনের অস্থিরতার জন্য বন্ধ থাকে। মূলত মিয়ানমারের আরসা (আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি) যাঁদের গঠনের পেছনে তিনটা গ্রæপকে দায়ী করা হয়, পাকিস্তানের লস্কর-ই-তৈয়েবা, বাংলাদেশের জামিয়াতুল মুজাহিদিন আর ভারতের ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন, তারা ভারতে পরিকল্পনা পিছিয়ে দেয়। রোহিঙ্গারা এরপর বাংলাদেশে আশ্রয় নিলে ২০১৭ সালে প্রজেক্ট পিছিয়ে ২০২২ সালে যায়। গত বছর ভারত ও মিয়ানমার সামরিক সরকারের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী কাজ শুরু করতে পারে।
এমভি-আইটিটি লায়ন (ভেসেল-২৭৩) কলকাতা ছাড়ে, এটা প্রথম টেস্ট যাত্রা। ২০ হাজার ব্যাগে ১ হাজার টন সিমেন্ট নিয়ে এই যাত্রা শুরু এ মাসের ৯ তারিখে সিত্তে পৌঁছানোর কথা, এরপর বাকি ট্রায়াল শেষ করা হবে। অন্যদিকে ভারত বাংলাদেশে ফেনী নদীর ওপর ভারত-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ ব্রীজ তৈরি করে আগরতলা, ফেনি-চট্টগ্রাম রুটও তৈরি করে রেখেছে, সঙ্গে পোর্ট ব্যবহার চার্জও কমিয়ে ফেলেছে। চট্টগ্রাম পোর্ট ব্যবহার করে বাংলাদেশের মাটি দিয়ে অথবা সিত্তে পোর্ট ব্যবহার করে মিয়ানমারের জল ও স্থলপথ ব্যবহার করে সেভেন সিস্টার স্টেটে পৌঁছানো, এটা বড় বাণিজ্য এচিভমেন্ট। শিলিগুড়ির চিকেন নেকের উপর ভরসা করতে হবে না। রাজনৈতিকভাবে যদি দেখি, ভারত কখন চীনকে টেক্কা দিলো চীন ধরতেও পারেনি। প্রথমে মাতারবাড়ী জাপান নেওয়ার পর ৩৫ কিলোমিটার দূরে সোনাদিয়া চীনের করার কথা ছিলো, সেটা বাংলাদেশকে দিয়ে বন্ধ করিয়েছে। এরপর সিত্তে চীনের করার কথা ছিলো, তাদের গ্যাস, তেল অনুসন্ধানে ব্যস্ত রেখে পোর্ট বানিয়ে নিয়েছে। এখন ভারতের হাতে দুই অপশন, যদি আগামী নির্বাচনে এই সরকার থাকে, চট্টগ্রাম পোর্ট ব্যবহার করা, আর যদি না থাকে তাহলে সিত্তে পোর্ট ব্যবহার করা।
নেগেসিয়েশনে কখনো কাউকে সরাসরি না বলতে হয় না, আবার পুরো ভরসা করা যায় না। আরেক কথায় বলি, নিজের দুর্বলতা প্রকাশ করা যায় না, অন্যের শক্তি খাটো করে দেখতে হয় না। আমাদের এই সরকারের খুব বেশি ভারত তোষণ আমাদের দুর্বলতা ছিলো, আমরা ধরে নিয়েছি তাদের অন্য অপশন নেই। সরকারের জন্য খারাপ খবর হলো, এই সরকারের উপর ডিপেনডেন্সি কমিয়ে এনেছে, মানে কোনো সুজাতা সিং নাটকের দরকার নেই। এটা আমার এনালাইসিস রাজনীতির হিসাবে। মিয়ানমার যেখানে চীনের এতো নিয়ন্ত্রণে, সেখানে ভারত কখন কোন চুক্তি করে তাদের সামরিক জান্তাকে ম্যানেজ করলো, আমরা বাংলাদেশে বসে না জানতে পারি, চীন অবশ্যই জানে। চীন জানা মানে অন্য কোনো চাল আসবে, কারণ জাপান মাতারবাড়ী মোটামুটি কব্জায় নিয়েছে। এখন চীনের হাতে একটাই অস্ত্র আছে, চিকেন নেকের কাছে বাংলাদেশের মাটিতে ঘাঁটি বানানো, ভ‚টানের দোকলামে ঘাঁটি বানানোই আছে। আন্তর্জাতিক খেলায় আমরা শিশু এবং শুধু টেস্ট গ্রাউন্ড। যতদিন ‘সবার সঙ্গে বন্ধু কারও সঙ্গে বৈরীতা নয়’ নীতিতে দেশ চলবে, ততোদিন আমরা গরিবের বউ, সবার ভাবি হিসাবেই থাকবো!
লেখক: অর্থনৈতিক পর্যবেক্ষক
