ডিজিটাল জিডিপি এবং স্মার্ট অর্থনীতি
ড. আতিউর রহমান
[১] ডিজিটাল বাংলাদেশ, ডিজিটাল বাণিজ্যি কেমন চলছে : ‘দিন বদলের সনদ’-এর অংশ হিসেবেই ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ঘোষণা করেছিলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। সেজন্য ডিজিটাল প্রযুক্তি এবং ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেম গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় ডিজিটাল অবকাঠামো গড়ে তোলার উদযোগ নেয় সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক। শুরুতে ধীরে ধীরে তরুণ ডিজিটাল উদ্যোক্তাদের প্রসার ঘটলেও কোভিডকালে ডিজিটাল ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যাপক বিকাশ ঘটে। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের উদ্যোক্তারা ঘরে বসে ব্যবসা বাণিজ্যে ঝোঁকে পড়ে এই সময়ে। ক্ষুদে নারী উদ্যোক্তাদের আগ্রহ বিশেষভাবে লক্ষ করা যায় এ সময়। ধীরে ধীরে গ্রাহকদের অভিজ্ঞতা ও উৎসাহ দুইই বাড়ে। ই-বাণিজ্যের রেগুলেটরি সমস্যা খানিকটা ছিলো নিশ্চয়ই। তবে ধীরে ধীরে এই সমস্যাগুলো কাটিয়ে উঠছে বাংলাদেশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রেগুলেটরি সমর্থনে মোবাইল, এজেন্ট ও ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ের ব্যাপক বিকাশ ঘটায় ডিজিটাল বাণিজ্য দ্রæত গতিতে বাড়তে থাকে। দেশি-বিদেশি বড় বিলিয়েগকারীরাও এখন বিনিয়োগ করতে শুরু করেছে বাংলাদেশ। নিঃসন্দেহে আগামীর ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পায়ন যে ডিজিটালই হবে, সে কথাটি বেশ স্পষ্ট হয়ে উঠছে এখন। আর এর দৃঢ় ভিত্তি এরই মধ্যে তৈরি হয়ে গেছে আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশ।
[২] অনলাইনভিত্তিক বাণিজ্য কি চ্যালেঞ্জের মুখে : অনলাইন বাণিজ্য নতুন। তাই তাকে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেই এগোতে হবে। সেজন্য রেগুলেটর, প্রশাসন ও ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে আরও সহায়ক ভ‚মিকা পালন করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা কর্তৃপক্ষকে একইসঙ্গে সহায়ক ও সাবধানী ভ‚মিকা পালন করতে হবে। এই বাণিজ্যের জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রতিনিয়ত জোরদার করে যেতে হবে।
[৩] অনলাইন বাণিজ্য স¤প্রসারণে বাধাসমূহ কী : রেগুলেটরি বিধিবিধান সময়োপযোগী না হওয়া, ডিজিটাল অবকাঠামোর সীমাবদ্ধতা, নতুন উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ এবং স্টার্টআপ উদ্যোক্তাদের জন্য পর্যাপ্ত পুঁজির অভাবকেই প্রধান প্রধান বাধা হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। [৪] অর্থনীতিতে ডিজিটাল জিডিপির অবদান কমছে? আমার তা মনে হয় না। হয়তো সব ডিজিটাল উদ্যোগ আনুষ্ঠানিক নয় বলে হিসেবের মধ্যে আসছে না। সামগ্রিকভাবে ডিজিটাল জিডিপির অবদান বরং বাড়ছে।
[৫] অনলাইনভিত্তিক লাখ লাখ উদ্যোক্তা। এই সম্ভাবনাময় তরুণদের কীভাবে সফল করা যাবে অর্থনৈতিকভাবে? আগেই এ নিয়ে বলেছি। মোদ্দা কথা এসব নয়া উদ্যোক্তাদের লেগে থাকতে হবে। এনবিআর, বিডা, বাংলাদেশ ব্যাংক, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, তথ্যপ্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট রেগুলেটরি প্রতিষ্ঠান ও বিভাগকে তাদের প্রতি আরও সহায়তামূলক আচরণ করতে হবে। বিশ^বিদযালয় ও প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট ও চেম্বারকে ডিজিটাল উদ্যোক্তাদের পাশে শক্তভাবে দাঁড়াতে হবে। [৬] অনলাইন বাণিজ্যকে উৎসাহিত করতে সরকারের সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ দরকার? নিশ্চয়। সরকারের বাজেটে পর্যাপ্ত প্রণোদনা এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক নিয়মনীতিগত সহায়তায় অনলাইন বাণিজ্যের প্রতি আনুক‚ল্যের প্রতিফলন দেখতে চাই।
[৭] ডিজিটাল বাণিজ্য স্মার্ট করার পদক্ষেপ কী হতে পারে : ডিজিটাল অর্থনীতিকে স্মার্ট অর্থনীতিতে রূপান্তরের ঘোষণা দিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। তাঁর এই অঙ্গীকারকে বাস্তবে রূপ দিতে হলে প্রশাসন, সকল রেগুলেটর, ব্যাংকিং ব্যবস্থা ও ব্যক্তিখাতকে একযোগে রাজ করতে হবে।
[৮] স্মার্ট অর্থনীতি কীভাবে গড়ে তোলা সম্ভব : স্মার্ট অর্থনীতি গড়তে চাই স্মার্ট সরকার, স্মার্ট নিতিনির্ধারক, স্মার্ট রেগুলেশন, স্মার্ট উদ্যোক্তা তথা জনশক্তি এবং স্মার্ট শিক্ষা ব্যবস্থা। পুরো সমাজ সেকেলে থাকলে এই রূপান্তর প্রায় অসম্ভব। সমাজকেও আধুনিক, আশাবাদী এবং স্মার্ট হতে হবে। স্মার্ট বাংলাদেশের মূল ভরসা আমাদের তরুণ প্রজন্ম। তাদের প্রতি বিশেষ সমর্থন বজায় রাখতে হবে। তাদের সর্বদাই আশাবাদী থাকতে উৎসাহ ও প্রকৃত সমর্থন দিয়ে যেতে হবে।
লেখক: সাবেক গভর্নর, বাংলাদেশ ব্যাংক