নতুন পে-স্কেল হচ্ছে না, বাজেটে মহার্ঘ ভাতা প্রাপ্তি নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে সরকারি চাকরিজীবীরা
সোহেল রহমান : আসন্ন বাজেটে নতুন পে-স্কেল হচ্ছে না। অন্যদিকে মহার্ঘ ভাতা দেয়া হবে কি হবে নাÑ এ নিয়েও দ্বিধা-দ্বন্দ্বে রয়েছেন সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। গত বুধবার রাতে আগামী অর্থবছরের বাজেট নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতা প্রদানের কোনো প্রস্তাব দেয়া হয়নি। আর প্রধানমন্ত্রীও নিজ থেকে এ-সংক্রান্ত কোন আলোচনা করেননি বলে গেছে। এর আগে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের সূত্রগুলো জানিয়েছিল যে, সরকারি চাকরিজীবীরা দীর্ঘদিন ধরে আসন্ন বাজেটে নতুন পে-স্কেলের আশা করছিলেন, কিন্তু প্রধানমন্ত্রী তা নাকচ করে দিয়েছেন। এর পরিবর্তে আগামী অর্থবছরের বাজেটে সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতা দেয়া হবে কি না, তা নিয়ে গণভবনের বৈঠকে আলোচনা হতে পারে।
সূত্রমতে, বাজেট প্রস্তুতিতে সরকারি কর্মচারীদের জন্য মহার্ঘ ভাতা প্রদানের কোনো প্রস্তাব রাখা হয়নি। তবে ওই বৈঠকে অর্থমন্ত্রী বা কেউ যদি বিষয়টি উত্থাপন করেন এবং প্রধানমন্ত্রী যদি তা আমলে নেন, তাহলে অতিরিক্ত কত টাকা লাগতে পারে, সে হিসাব করে রেখেছিল অর্থ বিভাগ। সে ক্ষেত্রে তিনটি চিন্তা বা বিকল্প ভাবা হয়েছিলÑ ১০, ১৫ বা ২০ শতাংশ।
প্রসঙ্গত: মহার্ঘ্যভাতা মূল বেতনের সঙ্গে যুক্ত হয় না। ফলে তাদের বাড়িভাড়া ভাতাসহ অন্য কোনো ভাতার হেরফের হবে না।
সূত্রমতে, আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য সম্ভাব্য ৭ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকার বাজেট থেকে সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতার জন্য বরাদ্দ রাখা হতে পারে ৭৭ হাজার কোটি টাকা। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেটের মধ্যে সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাবদ ৭৫ হাজার ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছিল। সংশোধিত বাজেটে এটি কমিয়ে ৭৩ হাজার ১৭৩ কোটি টাকা প্রাক্কলন করা হয়েছে। ব্যয় সংকোচনের ফলে চলতি অর্থবছরে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতা থেকে ১ হাজার ৯৩ কোটি টাকা সাশ্রয় করেছে সরকার। আগামী বাজেটে মহার্ঘ ভাতা ১০ শতাংশ দেয়া হলে ৪ হাজার কোটি, ১৫ শতাংশ দেয়া হলে ৬ হাজার কোটি এবং ২০ শতাংশ দেয়া হলে অতিরিক্ত ৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হতে পারে Ñএমন একটা খসড়া হিসাব করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত: সরকারি কর্মচারীরা বর্তমানে ২০১৫ সালের বেতন কমিশন অনুযায়ী বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী এ বেতন কমিশন প্রণীত হয়। এ কমিশনের সুপারিশে বলা হয়েছিল, আর নতুন বেতন কমিশন গঠন করা হবে না, বরং প্রতিবছর ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট বা বেতনবৃদ্ধি হবে। সে অনুযায়ী তা হয়েও আসছে। এরপর ৮ বছর কেটে গেছে এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে খাদ্যপণ্যসহ পণ্যমূল্য বেড়ে যাওয়ায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে উল্লেখ করে সরকারি চাকরিজীবীদের বিভিন্ন সংগঠন নতুন পে-স্কেলের দাবি তুলছে।
সংগঠনগুলো বলছে, বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতির হার ৫ শতাংশের বেশি হলে ইনক্রিমেন্টের হারও সে অনুযায়ী সমন্বয় করার পরামর্শও দিয়েছিল পে-কমিশন। কিন্তু ওই সুপারিশ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না। ফলে মূল্যস্ফীতির হার বেশি হলেও চাকরিজীবীরা ৫ শতাংশ হারেই ইনক্রিমেন্ট পাচ্ছেন।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশে সরকারি চাকরিজীবী প্রায় ১৪ লাখ। তবে করপোরেশন, সামরিক- বেসামরিক কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকসহ এ সংখ্যা প্রায় ২২ লাখ।