আইএমএফ’র শর্ত বাংলাদেশ কীভাবে পূরণ করবেÑতা দেখার বিষয় : পিআরআই রিজার্ভ ব্যবস্থাপনায় সরকারের নীতি কাজ করছে না : ড. আহসান এইচ মনসুর
সোহেল রহমান : বেসরকারি গবেষণা সংস্থা ‘পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট’ (পিআরআই) বলেছে, দেশের অর্থনীতি সামষ্টিক অর্থনৈতিক চাপের সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বব্যাপী মার্কিন ডলারের ব্যাপক মূল্যবৃদ্ধি আরও অস্থিরতা তৈরি করেছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে বিশ্বে পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এমন পরিস্থিতির মধ্যে সামষ্টিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং জাতীয় নির্বাচনের কারণে আসন্ন বাজেট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সামষ্টিক অর্থনৈতিক চাপ, অনিশ্চিত বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ও আর্থিক জলবায়ু এবং নির্বাচনী গতিশীলতার মধ্যে ‘আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল’ (আইএমএফ)-এর শর্ত বাংলাদেশ কীভাবে পূরণ করবে Ñতা দেখার বিষয়।
‘প্রি-বাজেট প্রেস ব্রিফিং অ্যান্ড ডিসকাশন’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে রোববার এমন বক্তব্য তুলে ধরেছে পিআরআই।
পিআরআই বলেছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে বিশ্বে পণ্যের দাম বাড়ার কারণে আমদানি ব্যয় বেড়েছে। এর বিপরীতে বাংলাদেশ এবং অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের রপ্তানি ও রেমিট্যান্স বাড়েনি। এতে রিজার্ভ দ্রæত সময়ের মধ্যে কমে যাচ্ছে। ডলার সংকট কাটাতে বাংলাদেশ ব্যাংক আমদানি কমানোসহ বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এসব পদক্ষেপের কারণে অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে মুদ্রাস্ফীতির চাপ বেড়েছে।
সংস্থাটি বলেছে, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের শুরুতে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৩৯ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার। এক বছরের ব্যবধানে রিজার্ভ ব্যাপক হারে কমেছে। ২০২৩ সালের মে মাসে রিজার্ভ কমে ৩০ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমে এসেছে। অন্যদিকে, অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) মোট রেমিট্যান্স এসেছে ১ হাজার ৭৭১ কোটি ডলার। এক্ষেত্রে অর্থবছরের শেষ নাগাদ ২ হাজার ১২৬ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স আসতে পারে বলে মনে করছে পিআরআই।
এদিকে জুলাই থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে রপ্তানি থেকে মোট আয় হয়েছে ৪৫ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার। যা মোট লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩ দশমিক ৪৬ শতাংশ কম। এছাড়া ডলার সংকটের কারণে আমদানির পরিমাণও উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। এছাড়া চলতি বছর বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ৬ শতাংশ কমতে পারে।
পিআরআই’র নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ব্যবস্থাপনায় সরকারের নীতি কাজ করছে না। রিজার্ভ নিয়ে এখন পর্যন্ত যে পলিসি নিয়েছে, তাতে হ্রাস বন্ধ হয়নি। যদি কাজ না করে তাহলে নীতির পরিবর্তন করতে হবে। সরকারের নীতি হওয়া উচিত, আমরা আর রিজার্ভ বিক্রি করব না, প্রত্যেকে মার্কেটে যাও। তাহলে মার্কেটে মুদ্রার বিনিময় হারের ওপর চাপ তৈরি হবে। আস্তে আস্তে স্থিতিশীলতা আসবে। আর সরকার যে ধার করে নিয়ে আসবে, সেটা জমা হবে। রিজার্ভ বাড়বে। আমাদের যেটা হচ্ছে, আস্থার ঘাটতি। রিজার্ভ সাশ্রয়ে আমদানি নিয়ন্ত্রণ করতে হয়েছে। ফলে কাঁচামাল ও মধ্যবর্তী পণ্য আমদানি কমেছে। উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। যাতে ঝুঁকিতে পড়বে প্রবৃদ্ধি।
তিনি বলেন, পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফেরাতে বিশেষ সুবিধা দিয়েছিল সরকার। এতে কোনো টাকা ফেরত আসেনি। যা ছিল সরকারের ভুল সিদ্ধান্ত। এবার আবার প্রত্যাহার হবে। এটা আর দরকার নেই।
পিআরআই’র চেয়ারম্যান ড. জায়েদি সাত্তার বলেন, গত ৯ মাসে ১২ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আগামী ৮-৯ মাস যদি আরও ৮-৯ বিলিয়ন হারাতে হয়, তাহলে আমরা কোথায় থাকব?
তিনি বলেন, দেশের ব্যষ্টিক অর্থনৈতিক সূচকগুলোতে চাপের আভাস থাকলেও বৈশ্বিক পরিস্থিতি ও বাংলাদেশের ৫০ বছরের পরিক্রমায় আজকে যে অবস্থানে, তা একটি ইতিবাচক চিত্র। বাংলাদেশ এখন আর তলাবিহীন ঝুড়িতে নেই। এখন আমরা শুধুই সামনে যাচ্ছি। বাজেট ব্যবস্থাপনায় ও ব্যষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় অসাধারণ করছে বাংলাদেশ। এটা আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংক পর্যন্ত স্বীকার করেছে। বৈদেশিক বাণিজ্যে ঘাটতি থাকলেও গত ২০ থেকে ২৫ বছরে আমরা ব্যষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় ভালো করেছি।