গ্যাসের চুলার মাসিক বিল এবং এনার্জির হাব বাংলাদেশ
বি.ডি রহমতউল্লাহ
চাল, ডাল, মাছ-মাংস, তরিতরকারিÑপ্রায় সব নিত্যপণ্যের দামই এখন ঊর্ধ্বমুখী। সাধারণ মানুষের জন্য খুব কঠিন একটা সময়। মধ্যবিত্ত, নি¤œমধ্যবিত্ত, নি¤œবিত্ত, খেটে খাওয়াÑদিন আনা দিন খাওয়া মানুষ এখন খুবই কষ্টে আছেন। করোনাকালীন সময় কোনো রকমে টিকেছিলো। সেই ধাক্কা সামলে ওঠার আগেই ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ। জীবন কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে উঠলো। দিনদিন জীবনের চাপে চ্যাপ্টা প্রায়! কীভাবে জীবন চলবে, কীভাবে জীবিকা বা আয়-রোজগার হবেÑ এ নিয়ে প্রতিনিয়তই সাধারণ মানুষকে ভাবতে হয়। আজ কাজ আছে তো, কাল নেই। আজ চাকরি আছে, কাল থাকে কিনা সেটারও নিশ্চয়তা নেই। বিশেষ করে বেসরকারি খাতের কথা বলছি। এই যখন পরিস্থিতি তখন সরকার কিছু দিন পর পর জনগণের ওপর একেকটা বাড়তি চাপ নিয়ে আসে। এই বিদ্যুতের দাম বাড়ে তো, তেলের দাম বাড়ে, আবার গ্যাসের দামও বাড়ায়। এতে জনগণের জীবন যন্ত্রণাকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্যথা উপশমের কোনো চেষ্টা নেই। কেউ সেই চেষ্টা করছেও না।
গত দুই-আড়াই বছরে মানুষের ব্যয় বেড়েছে বহু গুণে, কিন্তু আয় বাড়েনি একটুওÑএমন মানুষের সংখ্যাই বেশি। অনেকের আবার কাজ নেই। চাকরি নেই। ব্যবসায় লস। চারদিকে অন্ধকার। ভীষণ এই কষ্টের সময়ে মরার ওপর খাড়ার ঘা হিসেবে হাজির তিতাস গ্যাস কোম্পানি। তারা রান্নার কাজে ব্যবহৃত গ্যাসের দুই চুলার ক্ষেত্রে মাসিক ৫১২ টাকা আর এক চুলায় ৩৯০ টাকা বাড়াতে চায়। এটা কি কখনো জনবান্ধব কোনো উদ্যোগ? জনবান্ধব কোনো সিদ্ধান্তের চেষ্টা? মানুষ যেখানে সরকারের কাছ থেকে সহযোগিতা চায় টিকে থাকতে, সেখানে এ ধরনের সিদ্ধান্ত কখনোই সঠিক হতে পারে না।
সরকারকে কেন মানুষের রান্নার কাজে ব্যবহৃত গ্যাসের চুলার দামও বৃদ্ধি করতে হচ্ছে? কারণ বঙ্গোপসাগরে মজুত থাকার পরও আমরা গ্যাস উত্তোলণে উদ্যোগী নই। বঙ্গোপসাগরের ১২ নম্বর ক‚পে অফুরন্ত গ্যাসে আছে। আমাদের ক‚পের পাশের ক‚প থেকে মিয়ানমার গ্যাস তুলছে। সেই গ্যাস কিনছে ভারত, চীনসহ অন্যরা। অথচ আমরা গ্যাস উত্তোলনে উদ্যোগী নই। এতে একদিকে আমাদের চাহিদা মেটাতে পারছি না, বেশি দামে গ্যাস কিনতে হচ্ছে। মিয়ানমার ১১ নম্বর ক‚প থেকে গ্যাস তোলা শুরু করায় বাংলাদেশের ১২ নম্বর ক‚পের গ্যাস অচিরেই এগারো নম্বর ক‚পের দিকে ধাবিত হবে! সেদিকে আমাদের কোনো ভ্রæক্ষেপ নেই। চেষ্টা নেই। ইচ্ছা নেই। আমরা কি তবে অন্যদের সুবিধা দিতে গিয়ে গ্যাস উত্তোলন থেকে বিরত থাকছি? ১২ নম্বর গ্যাসের সম্ভাব্য প্রাচুর্য্য দেখে বাংলাদেশকে এনার্জির হাব হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। তাহলে দেশীয় জ¦ালানি উত্তোলনে আমাদের যথাযথ উদ্যোগ পরিলক্ষিত হয় না কেন? আমরা যদি দেশীয় জ¦ালানি উত্তোলন করি, করার চেষ্টা করি, তাহলে আমরা আমাদের চাহিদা অনেকাংশেই মেটাতে পারি। তাতে বেশি দামে গ্যাস কিনতে হবে না আর।
সরকারকে জনগণের কষ্টের কথা চিন্তা করতে হবে। এ ধরনের সিদ্ধান্তের আগে বারবার ভাবতে হবে। কয়দিন পরপর বিদ্যুৎ, গ্যাস, তেলের দাম বাড়িয়ে মানুষকে হতাশার সাগরে ফেলবেন না। কষ্ট বাড়িয়ে দেবেন না। জনগণের জীবনকে সহজ করার, কষ্ট কমানোর উদ্যোগ নিন। মানুষ কষ্ট থাকলে আপনারাও সুবিধায় থাকবেন না। সুযোগ বুঝে মানুষ তার কষ্টের হিসাব নেবে। সেই কথা মাথায় রাখলে ভালো, না হলে এর ফল সুখকর নাও হতে পারে।
পরিচিতি : সাবেক মহাপরিচালক, পাওয়ার সেল