শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনের সাথে আড়াই ঘন্টা বৈঠক করলেন শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ
আমিনুল ইসলাম : শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনের সাথে আড়াই ঘন্টা বৈঠক করলেন শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার। সম্প্রতি ইকোনমিক রিপোর্টাস ফোরামের এক কর্মশালায় দ্রব্যমূল্য,ব্যবসায়ী ও মন্ত্রীদের সিন্ডিকেট, আমলাদের ক্ষমতা, দুর্নীতি ও অনিয়মসহ নানা বিষয় নিয়ে বক্তব্য দিয়ে গণমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনায় আসেন শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার। এরপর দৈনিক যুগান্তরে এক সাক্ষাতকারে তিনি তার নিজ মন্ত্রণালয় শিল্পমন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন সংস্থার সিদ্ধান্ত নিতে তার মতামত নেয়া হয়না বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, আমাদের অনেক সংস্থা আছে। আমার কাছে কোনো ফাইল আসে না। শুধু ছোটাছুটির ফাইল আমার কাছে পাঠায়। আমাদের একটি ফার্মাসিউটিক্যাল প্রতিষ্ঠানের বিদেশি শেয়ারহোল্ডাররা চলে যাবে। আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম নিজেরা এই শেয়ার রাখব। হঠাৎ করে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হয়ে গেল। জার্মানির অংশটা কিনে নিল স্থানীয় একটি ওষুধ কোম্পানির মালিক। আমাদের আর দিল না। পরে তিনি পুরোটাই দাবি করে বসেন। আমার মন্ত্রী-সচিব পর্যন্ত তার পক্ষে নোট দিয়েছেন। আমার কাছে ফাইল আসার পরে আমি উলটো নোট দিয়েছি। আমি বলেছি, এটা দেওয়া যাবে না। বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে হলে এটা সরকারের কাছে থাকতে হবে। শিল্পমন্ত্রী আমাকে ওই ব্যবসায়ীর পক্ষে লিখতে বললেন। কিন্তু আমি শুনিনি। পরে আমার নোট অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দেন। এছাড়া বাফার গুডাউন নির্মাণে লাল ফিতার দৌরাত্ম ইত্যাদি বিষয় নিয়ে মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর মধ্যে একটু দুরত্ব সৃষ্টি হয়। তাদের মধ্যকার এদুরত্ব দুর করতে গতকাল বুধবার হঠাৎ করেই এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। দুপুর ১২ টায় এ বৈঠক শুরু হয়। শেষ হয় পৌনে ৩টার দিকে। বৈঠকে শিল্পসচিব, সেনা কল্যাণ সংস্থার চেয়ারম্যান এবং বিসিআইসির চেয়ারম্যান উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, যুগান্তরকে দেয়া ওই সাক্ষাতকারে শিল্প প্রতিমন্ত্রী বলেছিলেন, আমাদের মন্ত্রণালয়ের অধীনে ১৯টি সংস্থা আছে। কোনো সংস্থায় চেয়ারম্যান হেড। কোনো সংস্থায় ডিজি হেড। এখানে যে আইন আছে সে অনুযায়ী সংস্থার হেডরাই সব ক্ষমতার অধিকারী। মিনিস্টার হিসাবে একটা পিওনের চাকরি দেওয়ারও ক্ষমতা নেই আমার। আর চেয়ারম্যান ইচ্ছা করলে এক দিনে ১০ জনকে নিয়োগ দিতে পারে। এই আইনগুলোর পরিবর্তন করতে হবে। আইনের পরিবর্তন না হলে তাদের স্বেচ্ছাচারিতা, লুটপাট দমানো যাবে না। তারা মন্ত্রীর কথা না শুনলে কিছু করার নেই। সব ক্ষমতা চেয়ারম্যানদের। ৫০ কোটি টাকার বেশি কাজ হলে সেটা মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে হয়। মন্ত্রীদের অনুমতি নিতে হয়। এখন তারা এটাকে ভেঙে ভেঙে টেন্ডার করে। তাহলে আর আমাদের কাছে আসতে হবে না। স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা নেই। এছাড়া তিনি আরো বলেছিলেন, সুগার মিলগুলো লুজিং কনসার্ন। আমরা লোকসান দিচ্ছি। অথচ সুগার মিলগুলো লোকসান হওয়ার কথা নয়। ওখানে যারা কৃষক তারাই শ্রমিক। যা ইচ্ছা তাই করছে। যেখানে কর্মকর্তা-কর্মচারী লাগার কথা না সেখানে লোক নেওয়া হয়েছে। ছয় মাস আখের মৌসুম। বাকি সময় কাজ না থাকলেও কর্মচারীদের বেতন-ভাতা, ওভারটাইম দিতে হচ্ছে। বর্তমান চেয়ারম্যানের আগে সুগার কপরোরেশনে একজন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ছিলেন। সে যদি আর কিছু দিন থাকত তাহলে মিলের যন্ত্রপাতি, লোহালক্কড়সহ বিক্রি করে দিত। অনেক জায়গা থেকে টেলিফোন আসার পরও আমি তাকে সরিয়েছি। দীর্ঘ দিন ধরে জমতে জমতে সুগার মিলের একটা বড় অঙ্কের ঋণ হয়ে গেছে। আমি অর্থমন্ত্রীকে বলেছি, আপনারা এত ঋণ মওকুফ করে দিচ্ছেন। সুগার মিলের ঋণটা মওকুফ করেন না কেন। এটা মওকুফ করে দেন দেখেন সুগার মিলের লাভ হয় না লস হয়। গতকাল শিল্পমন্ত্রী ও শিল্প প্রতিমন্ত্রীর মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এসব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে।