চত্বরে বহুমুখী আধুনিক আন্ডারপাস নির্মাণের পরিকল্পনা ১ হাজার ১৮৪ কোটি টাকা ব্যয়ে শাহজালাল বিমানবন্দর
সোহেল রহমান : হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকায় একটি বহুমুখী আধুনিক আন্ডারপাস নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। প্রায় ১ হাজার ৭০ মিটার দৈর্ঘ্যরে প্রস্তাবিত আন্ডারপাস প্রকল্পটি যৌথভাবে বাস্তবায়ন করবে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর এবং সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড। এটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ১৮৩ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। প্রকল্পের মূল ব্যয়ের অর্ধেক-ই ব্যয় হবে টানেলের অবকাঠামো নির্মাণে। প্রাথমিক প্রস্তাব অনুযায়ী, সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নেই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ ধরা হয়েছে দুই বছর।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ সূত্রে জানা যায়, প্রস্তাবিত আন্ডারপাসটিতে ৯টি প্রবেশ ও বহির্গমন পথ থাকবে। এগুলো হচ্ছেÑ হজ ক্যাম্প, আশকোনা, বিমান বন্দর রেলওয়ে (বিআরটি) স্টেশন, বিমানবন্দর টার্মিনাল-১, ২ ও ৩, বিমান বন্দর উত্তর গেট, দক্ষিণ গেট এবং এমআরটি স্টেশন। আন্ডারপাসটি হবে শতভাগ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। এতে থাকবে ৮টি লিফট, ২৮টি এসকেলেটর ও ২৫টি ট্রাভেলেটর।
জানা যায়, প্রস্তাবিত আন্ডারপাস ব্যবহার করে হজ ক্যাম্প থেকে সরাসরি বিমানবন্দরের টার্মিনালে যাওয়া যাবে। আবার বিমানবন্দর টার্মিনাল থেকে সরাসরি এমআরটি (মেট্রোরেল) স্টেশনে যাওয়া যাবে। যারা বিআরটি পরিবহন ব্যবহার করবে তারা আন্ডারপাসের মাধ্যমে রাস্তা পারাপার হতে পারবে। ভবিষ্যতে আন্ডারপাসটি একটি মাল্টিমোডাল হাব হিসেবে বিবেচিত হবে।
প্রস্তাবে বলা হয়েছে, প্রথমবারের মতো এই ধরনের আন্ডারপাস তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। উন্নত দেশগুলোর মতো যাত্রী সেবা ট্রাভেলেটর থাকবে এই আন্ডারপাসে। চলমান ওয়াকওয়ে হিসেবে পরিচিত ট্রাভেলেটর সাধারণত বিমানবন্দর, ট্রেন স্টেশন বা শপিং মলের মতো জায়গায় মানুষের চলাচলে সুবিধার জন্য ব্যবহৃত হয়। রেলওয়ে স্টেশন এবং এর চারপাশে অবস্থিত বেশ কয়েকটি বাস এবং মেট্রো স্টেশনসহ রাজধানীর ব্যস্ততম পয়েন্টগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর গোলচত্বর। এই এলাকায় একটি মাত্র ফুটওভার ব্রিজ থাকায় ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন লাখ লাখ যাত্রী এ সড়কে চলাচল করে। গাজীপুর হয়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের সঙ্গে যুক্ত বিমানবন্দর সড়কে প্রতিনিয়ত তীব্র যানজট দেখা যায়। ফুটওভার ব্রিজ অপ্রতুল হওয়ায় বিপুল সংখ্যক যাত্রী ও পথচারী এর নিচ দিয়েই রাস্তা পার হওয়ার চেষ্টা করে বিধায় এ জায়গায় প্রায়ই তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়; ঘটে দুর্ঘটনা। প্রস্তাবিত আন্ডারপাসটি তৈরি হলে যানজট ও দুর্ঘটনা কমবে। যাত্রী ও পথচারীরা এর মাধ্যমে নিরাপদে বাস, বিমানবন্দর ও রেলস্টেশনে পৌঁছাতে পারবেন। জানা যায়, ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত আন্ডারপাস নির্মাণের প্রস্তাব দেন। ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রæয়ারিতে সড়ক যোগাযোগ ও সেতু মন্ত্রণালয় পথচারি আন্ডারপাস অ্যালাইনমেন্ট চূড়ান্ত করতে একটি কমিঠি গঠন করে।
কমিটি পুনরায় পরিদর্শন করে ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রæয়ারি অ্যালাইনমেন্ট চ‚ড়ান্ত করে। ২০১৯ সালের মার্চে বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয় আন্ডারপাস নির্মাণের জন্য ভ‚মি ব্যবহারের অনুমোদন দেয়। স¤প্রতি আন্ডারপাসের নকশা প্রধানমন্ত্রীর সামনে উপস্থাপন করা হলে তিনি এতে সম্মতি দেন বলে জানা গেছে।