বাজেটের আগে জ্বালানির দাম বাড়ছে না : নসরুল হামিদ
সোহেল রহমান : আসন্ন বাজেটের আগে জ্বালানির দাম বাড়ছে না বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
শনিবার দেশের ব্যবসায়ীদের সংগঠন ‘ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রি’ (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘স্টেক হোল্ডারস ডায়ালগ অন এনার্জি স্ট্র্যাটেজি: টুয়ার্ডস অ্যা প্রেডিক্টেবল ফিউচার’ শীর্ষক এক সেমিনারে তিনি এ কথা জানান।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা পলিসি করছি, আগামীতে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে জ্বালানির মূল্য সমন্বয় করা হবে।
তিনি বলেন, আমরা চাই কারখানা হোক। শিল্প গড়ে উঠলে অর্থনীতি বড় হবে। কিন্তু দেশে শিল্প গড়ে ওঠেছে অপরিকল্পিত ও বিচ্ছিন্নভাবে। অপরিকল্পিত কারখানার কারণে গ্যাস সংকট ঘণীভ‚ত হয়েছে এবং বিচ্ছিন্নভাবে যেখানে-সেখানে গ্যাস সংযোগ দিতে অনেক সমস্যা হয়। অন্যদিকে অনেক বড় বড় কারখানা রয়েছে, যারা একটা গ্যাস লাইনের অনুমোদন নিয়েছে। কিন্তু পাশাপাশি তারা তাদের কারখানায় আরও একটি অবৈধ বাইপাস লাইন বসিয়ে গ্যাস নিচ্ছেন। তাদের এ অনৈতিক কাজের কারণে অন্যরা গ্যাস পাচ্ছে না। প্রতিদিন আমরা অবৈধ গ্যাস বিচ্ছিন্ন করছি, আবার প্রতিদিন তারা নিচ্ছেন। এই অবৈধ গ্যাস লাইনের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা চান তিনি।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, অনেকে বলেন যে, আমরা গ্যাসের ওপরে ভাসছি। আসলে এটা সত্য নয়। যদি কাতারের সঙ্গে তুলনা করি, তাহলে আমরা কোথায়? আমাদের নানা জায়গায় গ্যাস পাওয়া গেলেও তা ওঠানো সম্ভব হয় না। এ কারণে পরিমাণেও কমতে থাকে। একটা গ্যাসের ক‚প খনন করতে ৯ বিলিয়ন থেকে ২১ মিলিয়ন ডলার খরচ হয়। এরপর আবার সেখানে গ্যাস না-ও পাওয়া যেতে পারে। এমন ১০টি ক‚পের মধ্যে ৩ থেকে ৪টি ক‚পে গ্যাস পাওয়া যায়। কিন্তু এর মধ্যে অনেক অর্থ চলে যায়। এর পরেও ঝুঁকি নিয়ে বিনিয়োগ করতে হচ্ছে। অনেক গ্যাসক্ষেত্রের উত্তোলন বাধ্য হয়েই বন্ধ করতে হয়। প্রথমদিকে দেশীয় গ্যাসের কোনো মূল্য দেয়া হতো না, কিন্তু এখানেও বড় খরচ হয়। আমরা আসার পর একটি মিনিমাম দাম নির্ধারণ করে দেই।
তিনি জানান, দেশে গ্যাস ও বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে। দেশে বর্তমানে ৩ হাজার ৫০০ এমএমসিএফডি গ্যাসের চাহিদা রয়েছে। চাহিদা মেটাতে ২০২৫ সালের মধ্যে সাড়ে ৪ হাজার এমএমসিএফডি গ্যাস লাগবে। একটি গ্যাসক‚প খনন সময় সাপেক্ষ। ক্রমবর্ধমান গ্যাসের চাহিদা পূরণে ভোলা থেকে গ্যাস আনার চেষ্টা করছি।
প্রসঙ্গক্রমে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে ৩ হাজার ৫০০ এমএমসিএফডি গ্যাসের চাহিদার বিপরীতে দেশে ২ হাজার ৯০৭ এমএমসিএফডি গ্যাস সরবরাহ রয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে সবচেয়ে বেশি গ্যাস খরচ হচ্ছে। আগে দেশীয় গ্যাস দিয়ে সার তৈরি করা হতো, তখন শিল্প খাতে এত বেশি গ্যাসের চাহিদা ছিল না। সার উৎপাদনের পর গ্যাস দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়। বর্তমানে শিল্প খাতে গ্যাসের চাহিদা ব্যাপক বেড়েছে।
তিনি জানান, মোট গ্যাসের ৪২ শতাংশ ব্যবহার করা হয় বিদ্যুৎ খাতে। এছাড়া শিল্প খাতে ব্যবহার হচ্ছে ১৮ শতাংশ, ক্যাপটিভে ১৭ শতাংশ, সার উৎপাদনে ৬ শতাংশ, সিএনজিতে ৩ শতাংশ এবং কমার্শিয়াল অ্যান্ড চা খাতে ১ শতাংশ গ্যাসের ব্যবহার হচ্ছে।
সেমিনারে এফবিসিসিআই ও বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান, প্রাণ-আরএফএল গ্রæপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী, আনোয়ার গ্রæপের চেয়ারম্যান মানোয়ার হোসেন, এফআইসিসিআই’র সভাপতি ও স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের সিইও নাসের এজাজ বিজয় প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।