বৈশ্বিকভাবে আয়ারল্যান্ড, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, আর্জেন্টিনার সমপর্যায়ে থাকবে বাংলাদেশ বাংলাদেশের অর্থনীতি ২০২৮ সালে কি ভাবছে আইএমএফ
বিশ্বজিৎ দত্ত: গত একযুগে বা তার চেয়ে বেশি সময়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি নাটকীয় ভাবে বদলে গিয়েছে। ২০১০ সালের সঙ্গে বর্তমান অর্থনীতির তুলনা করলে দেখা যায়, জিডিপিতে কৃষিজ উৎপাদনের অংশ ৪০ শতাংশ থেকে কমে সাড়ে ১২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। অন্য দিকে সেবা খাতের অংশ ৩৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ৫৫ শতাংশ হয়েছে।। শিল্পোৎপাদনের অংশ (নির্মাণশিল্প সমেত) কিন্তু ২৮ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৩৬ শতাংশ হয়েছে।
আন্তর্জাতিক মূদ্রা তহবিল (আইএমএফ) সম্প্রতি২০২৮ সালে বিশ্বের প্রধান অর্থনীতির একটি তালিকা প্রকাশ করেছে সেখানে বাংলাদেশের অবস্থান দেখানো হয়েছে ২৬ তম ।বাংলাদেশের সঙ্গে অথনীতির দিক থেকে সমস্থানে রয়েছে আয়ারল্যান্ড, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড ও আর্জেন্টিনা। দক্ষিণ এশিয়ার এই তালিকায় ভারতের পরেই রয়েছে বাংলাদেশের স্থান। বিশ্বের নিরিখে,এক নম্বর অর্থনীতিতির দেশ যুক্তরাষ্ট্র, তাদের অর্থনীতির পরিমাণ ৩২. ৩ ট্রিলিয়ন ডলার। এরপরে রয়েছে চীন তাদের অর্থনীতির পরিমাণ ২৭ ট্রিলিয়ন ডলার। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ভারত তাদের অর্থনীতির পরিমাণ হবে ৫.৩ ট্রিলিয়ন। আর বাংলাদেশের অর্থনীতির পরিমাণ হবে দশমিক ৭ ট্রিলিয়ন।
অর্থমন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত সমিক্ষা থেকে জানা যায়, অর্থনীতির সব থেকে ধীরগতির ক্ষেত্র কৃষি অন্যদের তুলনায় অবনমনই ঘটেছে। তবে কৃষিতে কর্মসংস্থান এখনো ৪০ শতাংশ। আর সবচেয়ে দ্রæতগতীর (সব চেয়ে দ্রæতগতির) অর্থনীতির প্রধানতম ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে সেবা খাত।ক্ষেত্রভিত্তিক প্রবৃদ্ধি হার অপরিবর্তিত রয়েছে ধরে নিলে সেবা ক্ষেত্রের দ্রæত বৃদ্ধি অর্থনীতির সার্বিক বিকাশকেই বোঝায়। তিনটি ক্ষেত্রের মধ্যে যে পরিবর্তন ঘটেছে,তাতে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ধারাবাহিকভাবেই ৬ শতাংশ থেকে ৭ শতাংশের মধ্যেই রয়েছে। অন্যান্য ক্ষেত্রেও বাংলাদেশের কিছু পরিবর্তন হয়েছে, আয়ুসীমা। ১৯৮০-র দশকে যা ছিল ৫৪ বছর, এই মুহূর্তে তা ৭৪ বছরে দাঁড়িয়েছে। অন্য দিক থেকে ভাবলে গড় হিসেবে প্রায় কোনও বাংলাদেশিই আর আর কর্মরত বয়সে মারা যান না। সে কারণে উৎপাদনশীলতাও বৃদ্ধি পেয়েছে। শিক্ষার বিস্তারও দ্রæতগতিসম্পন্ন হওয়ার কথা। স্কুলগুলিতে নথিভুক্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা সত্যিই দ্রæত বেড়েছে। অবশ্য শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন থেকেই গিয়েছে। একই সঙ্গে ডিজিটালাইজেশনের মতো দক্ষতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও জোয়ার এসেছে।
আইএমএফ মনে করে, অর্থনৈতিক বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সম্ভাবনা কিছুটা অতিমারি এবং বাকিটা অন্যান্য কারণে মার খাচ্ছে। আইএমএফের প্রধান অর্থনীতিবিদ পিয়ের অলিভার গোরনিকাস গত মাসে বিশ্ব অর্থনীতির বৃদ্ধির বিষয়ে বলতে গিয়ে দেখিয়েছেন যে, চলতি বছরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক বৃদ্ধি হবে সাড়ে ৫ শতাংশ।
এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ ড. আরএম দেবনাথ বলেন, অর্থনীতির উপর কোভিড অতিমারির মাঝারি মাপের প্রভাবের বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। যার ফল হিসাবে বহু মানুষকেই জীবনধারণের জন্য অর্থনীতির অপেক্ষাকৃত দুর্বল ক্ষেত্র
কৃষিতে ফিরে যেতে হয়েছে। দেশের মোট জনসংখ্যার সঙ্গে আনুপাতিক হিসাবে শ্রমজীবী জনসংখ্যা কমেছে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি মাপের উদ্যোগগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভোগ এবং বিনিয়োগের চাহিদায় পতন দেখা দিয়েছে। বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক এবং বাণিজ্যিক কর্মকাÐের গতি শ্লথ হয়ে পড়ার বিষয়টিকেও এ ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে। সেই সঙ্গে মাথায় রাখতে হবে ক্রমবর্ধমান পরিবেশ দূষণকে। এই সমস্ত কিছু বিবেচনা করেই দেশের অর্থনীতির দীর্ঘমেয়াদি বৃদ্ধির বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হবে।