এজেন্ট ব্যাংকিং এবং এর ভবিষ্যৎ
নার্গিস আক্তার
বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। কিন্তু আমাদের দেশে বেশ লম্বা সময় ধরে আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়েছে। ছিল না সহজ এবং সরাসরি/তৎক্ষনাৎ অর্থ আদান প্রদানের ব্যবস্থা। তাই কেনাকাটা কিংবা বিল প্রদানের মত দৈনন্দিন কাজগুলোয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইন দেয়া কিংবা মোটা অংকের টাকা নিয়ে ঘোরার মত সমস্যা ছিল প্রতিনিয়ত। কিন্তু তা আজ অনেকটাই অতীত। বর্তমানে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অর্থ আদান-প্রদানের একটি সুন্দর মাধ্যম এজেন্ট ব্যাংকিং।
এজেন্ট ব্যাংকিংকে আমরা মোবাইল ব্যাংকিংও বলে থাকি। এখানে মুলত মোবাইল সার্ভিসের মাধ্যমে আমরা টাকা লেনদেন করে থাকি। এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে সকল ব্যবহারকারির ব্যক্তিগত একাউন্টে থাকে যেখানে সে নিরাপদে তার অর্থ জমা রাখতে পারে। অর্থ জমা রাখা বা ব্যবহার করা ছাড়াও এখানে আরও অনেক সুবিধা থাকে। প্রতিনিয়ত সেই সুবিধার পরিমান বেড়েই চলেছে। তার মাঝে কয়েকটি সুবিধা উল্লেখ না করলেই নয় যেমন শপিং, বিল প্রদান, কর্মচারীদের বেতন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের খরচ এবং আরও অনেক কিছুই সম্ভব।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছরের ডিস্মেবরের শেষে এজেন্টের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১৫ হাজার ৫৬। ডিস্মেবরের শেষে আউটলেট বেড়ে হয়েছে ২০ হাজার ৬২১টি। এর মধ্যে গ্রামে আউটলেট ১৭ হাজার ৭৭৮ ও শহরে ২ হাজার ৮৪৩ টি।গত ডিস্মেবরে এই সেবার গ্রাহক বেড়ে হয়েছে ১ কোটি ৭২ লাখ ৫১ হাজার।
২০২১ সালের ডিস্মেবরে গ্রাহক ছিলেন ১ কোটি ৩৫ লাখ ৭ হাজার। এক বছরে গ্রাহক বেড়েছে প্রায় ৩৭ লাখ। আর ২০২০ সালের মার্চে গ্রাহক ছিলেন ৬৪ লাখ ৮৫ হাজার। অর্থাৎ করোনা শুরুর পর গ্রাহক বেড়েছে ১ লাখ ৮ হাজার। তারমানে ২০১৪ থেকে ২০১৯ সালে যত গ্রাহক পেয়েছে, তারচেয়ে বেশি গ্রাহক পেয়েছে গত তিন বছরে।
তাই এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের ভবিষ্যৎ বলতে গেলে আমরা এই সুবিধাগুলোর আরও নতুন সংযোজন আশা করতে পারি। যেমন, এখন আমরা চাইলেই বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রমে যোগ দিতে পারি সরাসরি আর্থিক সাহায্যের মাধ্যমে। এমনকি বিভিন্ন ব্যাংকগুলো এখন এজেন্ট ব্যাংকিং এর মাধ্যমে ঋণও দিচ্ছে। এতে করে হাজারো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা লাভবান হচ্ছে। এজেন্ট ব্যাংকিং সব থেকে বড় পরিবর্তন যেটা এনেছে তা হল এই ক্ষুদ্র ব্যবসায় গুলোতেই।
করোনা পরবর্তী সময়ে আমরা এখন ব্যাপকহারে অনলাইন বিজনেসের প্রভাব দেখতে পাচ্ছি। এটা সম্ভব হচ্ছে কেবলমাত্র এজেন্ট ব্যাংকিং এর জন্য। চাইলে আমরা অনলাইনে পেমেন্ট করতে পাচ্ছি এবং নিশ্চিন্তে পণ্য গ্রহন করছি। তাই এজেন্ট ব্যাংকিং এর বর্তমান এবং ভবিষ্যতে বেশ স্থায়ী। যেহেতু এখনই আমরা ব্যাংকগুলো থেকে সরাসরি অর্থ এজেন্ট ব্যাংকিং এর মাধ্যমে গ্রহন করে ব্যবহার করতে পারি, সেহেতু সম্পূর্ণ ব্যাংকিং সিস্টেমটাই এজেন্ট ব্যাংকিং পরিবর্তন হয়ে যাওয়াটা কেবল মাত্র সময়ের অপেক্ষা। তাই আশা করাই যায় যে খুব অল্প সময়ের মধ্যে আমরা অর্থনীতির গঠনে বিশাল পরিবর্তন দেখতে পারবো এজেন্ট ব্যাংকিং এর হাত ধরে। লেখক : শিক্ষার্থী জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগ