
বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণের সক্ষমতা ও পরিশোধের সামর্থ্য ইতিবাচক : সিপিডির সম্মানিত ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান

বিশ্বজিৎ দত্ত : বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ গ্রহণকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের(সিপিডির)সম্মানিতফেলো ড.মোস্তাফিজুর রহমান। গতকাল এক সাক্ষাতকারে বলেন, বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ গ্রহণের সক্ষমতা ও পরিশোধের সামর্থ্য রয়েছে।
তিনি বলেন, এই সক্ষমতা অর্জন হয়েছে অর্থনীতির ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধির কারণে। এখন পর্যন্ত প্রবৃদ্ধির হার সাড়ে ৫ শতাংশ রয়েছে। গত ৫ বছরে এটি কখনো ৫ শতাংশের নিচে যায়নি। এছাড়া ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ কখনো খেলাপি হয়নি। আইএমএফ ৪ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিচ্ছে। তার কিছুটা বাজেটারি সহায়তা হিসেবে দেয়া হচ্ছে। আবার প্রকল্প সাহায্য হিসেবেও ঋণ দেয়া হচ্ছে। দুটিই ভাল । কারণ এই ঋণ রিজার্ভের ওপর চাপ কমাচ্ছে। তবে তিনি সতর্ক করেন বৈদেশিক ঋণের ব্যবহার নিয়ে। ঋণ নিয়ে কোথায় বিনিয়োগ করা হবে তা সরকারকে নির্ধারণ করতে হবে।
আন্তর্জাতিক ঋণদানকারী সংস্থাগুলো এমন হিসাব করে ঋণ দেয় যাতে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের পর ওই প্রকল্পের আয় থেকে সরকার ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে পারে। অথবা প্রকল্পটি যেন জাতীয় আয় বাড়াতে পারে। প্রকল্পটি যদি নিজেই ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা তৈরি করতে না পারে তাহলে ওই ঋণ জাতীয় অর্থনীতিতে চাপ তৈরি করবে।
এভাবে কয়েকটি মেগা প্রকল্প যদি যথাসময়ে শেষ করতে না পারে বা ঋণ পরিশোধের রেয়াতকালের মধ্যে শেষ করতে না পারে, তাহলে সেগুলো জাতীয় অর্থনীতিতে বিশাল চাপ তৈরি করতে পারে। এর বাইরেও বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে সরকারকে মনোযোগ দিতে হবে রপ্তানি, রেমিটেন্স ও এফডিআই বৃদ্ধির দিকে। তিনি বলেন, কর জিডিপি অনুপাতে রাজস্ব আয় বৃদ্ধি না পাওয়ায় সরকার আভ্যন্তরীণ খাত থেকে ঋণ নিচ্ছে। বিশেষ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ মূল্যস্ফিতিতে চাপ সৃষ্টি করছে।
সিপিডির ২৭ মার্চ প্রকাশিত বাংলাদেশের উন্নয়ন পর্যালোচনার রিপোর্টে দেখানো হয়েছে জুলাই ও ফেব্রæয়ারিতে রপ্তানি বৃদ্ধি পেয়েছে ৯.৬ শতাংশ। যদিও পোশাকখাতের বাইরের রপ্তানি কমেছে -৯.৯ভাগ। এই সময়ে রেমিটেন্স বৃদ্ধি পেয়েছে ৪.৩ শতাংশ। জুলাই থেকে ফেব্রæয়ারিতে জনশক্তি রপ্তানিও বৃদ্ধি পেয়েছে ২৭.৫ শতাংশ। এই সময়ে বৈদেশিক সহায়তা ১২.২ শতাংশ কমলেও বৈদেশিক বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেয়েছে ৪.১ শতাংশ।
ড. মোস্তাফিজুর রহামান জানান,আইএমএফের হিসাব অনুযায়ী সরকারি খাতের ঋণ জিডিপির অনুপাতের সীমার নীচেই আছে। আইএমএফের হিসাবে একটি দেশ তার মোট জিডিপির ৫৫ শতাংশ পর্যন্ত নিতে পারে। ২০১৪ সালে বাংলাদেশের সরকারি খাতে বৈদেশিক ঋণ ছিল জিডিপির ১৮.৭ শতাংশ। ২০২৩ সালে এটি বৃদ্ধি পেয়ে ৪২.৬ শতাংশ হয়েছে। বাংলাদেশে বর্তমানে ৭১.৯৩ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক ঋণ রয়েছে।
উল্লেখ্য,২০১০ সালের সঙ্গে বর্তমান অর্থনীতির তুলনা করলে দেখা যায়, জিডিপিতে কৃষিজ উৎপাদনের অংশ ৪০ শতাংশ থেকে কমে সাড়ে ১২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
অন্যদিকে সেবা খাতের অংশ ৩৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ৫৫ শতাংশ হয়েছে। শিল্পোৎপাদনের অংশ (নির্মাণশিল্প সমেত) ২৮ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৩৬ শতাংশ হয়েছে। অর্থনীতির প্রধানতম ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে সেবা খাত।ক্ষেত্রভিত্তিক প্রবৃদ্ধি হার অপরিবর্তিত রয়েছে ধরে নিলে সেবা ক্ষেত্রের দ্রæত বৃদ্ধি অর্থনীতির সার্বিক বিকাশকেই বোঝায়।
