
ল্যান্ড ও’লেকস ভেনচারের সাথে সমঝোতা কোল্ড চেইন গড়ে তুলতে সহযোগিতা করবে যুক্তরাষ্ট্র
আমিনুল ইসলাম : দেশে আন্তর্জাতিক মানের হিমাগার বা কোল্ড চেইন ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে সহযোগিতা করবে যুক্তরাষ্ট্র। এ লক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের অর্থায়নে বাংলাদেশ ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন প্রজেক্ট বাস্তবায়নকারী সংস্থা ল্যান্ড ও’লেকস ভেনচার ৩৭ এর সাথে সমঝোতা চুক্তি করেছে বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএসএ)।
গত রোববার এ চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএসএ) পক্ষে এ সমঝোতায় চুক্তিতে সই করেন সংগঠনটির সভাপতি এবং ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সিনিয়র সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু। ল্যান্ডস ও’লেকস ভেনচার ৩৭ এর পক্ষে চুক্তিতে সই করেন সংস্থাটির প্রকল্প পরিচালক মাইকেল জে. পার।
এ চুক্তির আওতায় দেশের হিমাগার শিল্পে নিয়োজিত জনবলের কারিগরি দক্ষতা বৃদ্ধি, প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিতকরণ, বিদ্যমান হিমাগারগুলোর সক্ষমতা উন্নয়নে কাজ করা হবে। পাশাপাশি হিমাগার ব্যবস্থাপনায় যুগোপযোগী বাণিজ্যিক কৌশল অনুসরণ এবং টেকসই ও লাভজনক হিমাগার শিল্প গড়ে তুলতে কাজ করবে দুই পক্ষ। চুক্তির বিষয়ে বিসিএসএ এর সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু জানান, এই উাদ্যোগের মাধ্যমে সারাদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা হিমাগারগুলোকে আন্তর্জাতিক মানের করে গড়ে তোলা হবে। যা দেশে কৃষিপণ্য সংরক্ষণ ও সরবরাহ ব্যবস্থায় আমুল পরিবর্তন নিয়ে আসবে। বর্তমানে আলুসহ অন্যান্য শাক-সবজি, ফলমুলের উৎপাদন বৃদ্ধি, কৃষিপণ্য বহুমুখীকরণ এবং রপ্তানি স¤প্রসারণকে অগ্রাধিকার দিয়ে বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএসএ) জোরালোভাবে কাজ করছে বলে জানান মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু।
দেশে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং সারাদেশে সুষম সরবরাহ ব্যবস্থা বাস্তবায়নে ভবিষ্যতেও উদ্ভাবনী ধরণা এবং কৌশল নিয়ে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন এই ব্যবসায়ী নেতা।
সমঝোতা সাক্ষর অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ল্যান্ড ও’লেকস ভেনচার ৩৭ এর ডেপুটি চিফ অব পার্টি ফুয়াদ এম খালিদ হোসেন, সিনিয়র অ্যাডভাইজর মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান পাটোয়ারী, ইনভেস্টমেন্ট অ্যাডভাইজর নাবা নাশিত তারিক, টেকনিক্যাল কো-অর্ডিনেটর নাবিল খান।
বাজেটে ওয়াশ খাতের বরাদ্দে আঞ্চলিক অসমতা হ্রাস ও বৈষম্য নিরসনে অগ্রাধিকার প্রয়োজন : হোসেন জিল্লুর রহমান
এস.ইসলাম জয় : অর্থনীতিবিদ ও পিপিআরসি চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেছেন, চর, হাওর ও পাহাড়ি অঞ্চলসহ জলবায়ুগত ঝুকিতে সুবিধাবঞ্চিত এলাকা এবং আন্তঃনগর বৈষম্য এই দুইটি বিষয়ে আঞ্চলিক বৈষম্য নিরসনের উপর গুরুত্বারোপ প্রয়োজন। নিরাপদভাবে ব্যবস্থাকৃত শতভাগ পানীয় জল এবং স্যানিটেশন সংক্রান্ত জাতীয় ও এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে একটি বহুখাত ভিত্তিক (মাল্টি-এজেন্সি) সমন্বয় নীতি অবলম্বনের মাধ্যমে আমাদের মাঝারী শহর (সেকেন্ডারি টাউন) এবং নগরায়ন প্রক্রিয়ার আওতাধীন গ্রামগুলোতে (আরবানাইজড ভিলেজ) পয়ঃবর্জ্য (ফিকল ¯øাজ) ব্যবস্থাপনার জন্য তহবিল বরাদ্দে গুরুত্ব দেওয়া উচিৎ যা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনেরও অন্যতম পূর্বশর্ত।
মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ওয়াটারএইড, পিপিআরসি, ইউনিসেফ, ফানসা, বাউইন, এফএসএম নেটওয়ার্ক, স্যানিটেশন অ্যান্ড ওয়াটার ফর অল, এন্ড ওয়াটার পোভার্টি, ওয়াশ অ্যালায়েন্স ইন্টারন্যাশনাল এবং এমএইচএম প্ল্যাটফর্মের যৌথ আয়োজনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
ওয়াটারএইডের পিপিআরসি পরিচালিত ওয়াশ খাতে বাজেট বরাদ্দ বিষয়ক প্রাপ্ত গবেষণা ফলাফল থেকে দেখা যায়, ওয়াশ খাতে এডিপি বরাদ্দ আপাত ঊর্ধ্বমুখী হলেও বস্তুত পূর্ববর্তী অর্থবছরের তুলনায় এই আনুপাতিক বৃদ্ধির হার (৫.৪৪%) সামগ্রিক বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বৃদ্ধির হারের (৭.৪%) তুলনায় কম। পারিবারিক আয় ও ব্যয় জরিপ ২০২২ অনুযায়ী শতকরা ৯২.৩২ ভাগ জনসংখ্যা উন্নত টয়লেট সুবিধার আওতাভুক্ত, অন্যদিকে ওপেন ডেফিকেশন (উন্মুক্ত স্থানে মলত্যাগ) এর আওতায় এখনো রয়েছে ০.৬৯ ভাগ জনগোষ্ঠী। সংবাদ সম্মেলনে ডিপিএইচই’এর ওয়াশ, ডিআরআর এবং ফিকল ¯øাজ অ্যান্ড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট (এফএসডবিøউএম) এর আওতাধীন প্রকল্পগুলোকে দুর্যোগ ঝুকি মোকাবিলায় যোগাযোগ এবং সামাজিক সম্পৃক্ততার মাধ্যমে উন্নত সহনশীলতা গঠনের জন্য ভ‚য়সী প্রশংসা করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে ওয়াশ বরাদ্দে আন্তঃনগর বৈষম্যের ফলে বিদ্যমান সমস্যার বিষয়টি তুলে ধরা হয় এবং ২০২৩-২৪ এডিপি বরাদ্দে আরও যৌক্তিক এবং ন্যায়সঙ্গত তহবিল বন্টনের প্রস্তাব করা হয়। আলোচনায় চারটি পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষের (ওয়াসা) জন্য এডিপি বরাদ্দ বৃদ্ধির আহŸান জানানো হয় এবং এগুলোর মধ্যকার বৈষম্যে নিরসনে নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে গুরুত্বারোপের আশা ব্যক্ত করা হয়। শহর ও গ্রামাঞ্চলের ওয়াশ খাতের বরাদ্দ বৈষম্য মোকাবিলায় এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা ৬-এর সাথে সম্পৃক্ত ওয়াশ খাতের অগ্রাধিকার লক্ষ্যমাত্রা (এনপিটি) অর্জনের ওপর জোর দেওয়া হয়। ওয়াশ খাতের সাথে সংশ্লিষ্ট পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন এবং দুর্যোগ সম্পর্কিত উদ্যোগ গঠনে উৎসাহদানের ওপরও এ সময় গুরুত্বারোপ করা হয়। এছাড়াও, সংবাদ সম্মেলনে পরিবেশগত পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কিত সফল প্রকল্পগুলো পরিবর্ধন, জলবায়ু ঝুকিপূর্ণ এলাকায় আরও নতুন নতুন প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং জরুরি পরিস্থিতিতে ওয়াশ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং দূর্যোগ ঝুকি সংক্রান্ত যোগাযোগ ও সামাজিক সম্পৃক্ততা বৃদ্ধির (আরসিসিই) জন্য তহবিল বরাদ্দের সুপারিশ করা হয়।
ওয়াটারএইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর হাসিন জাহান বলেন, বিগত কয়েক বছর ধরে প্রস্তাবিত বাজেটে ওয়াশ খাতে বরাদ্দ বাড়লেও এখনও প্রয়োজনের তুলনায় তা নগন্য। এরই ধারাবাহিকতায় হাওর, পার্বত্য এলাকা, উপক‚লীয় অঞ্চল ও চরে বসবাসকারী মানুষের জন্য ওয়াশ বরাদ্দ বাড়ানোর বিষয়টি সময়ের দাবী। কারণ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পানি এবং উন্নত স্যানিটেশন বিষয়ক এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের কঠিন কাজকে আরও কঠিনতর করে তুলেছে। শুধু কাভারেজ অর্জন নয়, গুণগতমানসম্পন্ন এবং নিরাপদভাবে ব্যবস্থাকৃত পানি, স্যানিটেশন এবং হাইজিন পরিসেবা নিশ্চিতে অর্থ বরাদ্দের পাশাপাশি অর্থের যথাযথ ব্যবহার ও প্রকল্প বাস্তবায়নে কারিগরি দক্ষতার বিষয়টিতে তাই আরো গুরুত্বারোপ জরুরী।
সম্মেলনে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এডিপি বরাদ্দের ক্ষেত্রে কিছু বিষয় তুওে ধরা হয়। এর মধ্যে দুর্গম এলাকা (চর, উপক‚ল, জলবায়ু ঝুকিপূর্ণ এলাকা, হাওর এবং পাহাড়ি অঞ্চল) এবং আন্তঃনগর বৈষম্যের প্রতি আরও গভীর মনোযোগ প্রয়োজন। পরবর্তী এডিপি বাজেটে আধা-শহর, ক্রমঃবর্ধমান অঞ্চল এবং নগরায়ন প্রক্রিয়ার আওতাধীন গ্রামগুলোতে নতুন করে সৃষ্ট ওয়াশ চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় বর্ধিত এফএসএম (ফিকাল ¯øাজ ম্যানেজমেন্ট) অর্থায়ন প্রয়োজন। স্বাস্থ্যবিধি সংক্রান্ত আন্তঃখাতসমূহে প্রচারণা বৃদ্ধির পাশপাশি অর্থ বরাদ্দ বৃদ্ধিও ইতিবাচক ফলাফল আনতে পারে, তবে কেবল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এর বাস্তবায়ন আশানুরূপ ফল বয়ে আনবে না। এ লক্ষ্যে একটি মাল্টি-এজেন্সি নীতি গ্রহণে জোর দেওয়া উচিত, সেই সাথে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের হ্যান্ড হাইজিন ফর অল রোডম্যাপেরও বাস্তবায়ন প্রয়োজন। ওয়াশ খাতে উচ্চতর নীতিগত অগ্রাধিকার নিশ্চিতের লক্ষ্যে এডিপি বরাদ্দের ক্ষেত্রে পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন এবং দুর্যোগের কেন্দ্রস্থল সমূহের উপর মনোনিবেশ করা প্রয়োজন। এবং সংশ্লিষ্ট খাতে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্য এডিপি বরাদ্দের ক্ষেত্রে জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগ সহনশীলতা সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রকল্প নেওয় যেতে পাওে বলে মনের বক্তারা।
