
হিলিতে মানববর্জ্য থেকে তৈরি হবে জৈবসার
সিনথিয়া চিছাম : কৃষিতে বিপ্লব ঘটাতে নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি এবং উচ্চফলন পেতে কৃষি বিভাগ সবসময়ই কৃষকদের রাসায়নিক সারের পরিবর্তে জৈবসার ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। অনেক সময় চাহিদামতো জৈবসার না পাওয়ায় রাসায়নিক সারের ওপরেই ভরসা করতে হয় কৃষকদের। তবে সেই ঘাটতি যেন অনেকটাই পূরণ করবে মানববর্জ্য থেকে উৎপাদিত জৈবসার।
প্রথমবারের মতো দিনাজপুরের হিলিতে এই জৈবসার উৎপাদনকেন্দ্র নির্মাণ করছে সরকার। হিলি পৌর এলাকার বিভিন্ন বাসাবাড়ির সেপটিক ট্যাংক থেকে মানববর্জ্য সংগ্রহ করে বিশেষ এক গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হবে সার উৎপাদনকেন্দ্রে। সেখানে দুটি বিশেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তৈরি করা হবে জৈবসার।
গরুর গোবর এবং কেঁচো থেকে জৈব সার তৈরির প্রচলন থাকলেও, প্রথমবারের মতো হিলিতে তৈরি হবে মানববর্জ্য থেকে জৈবসার উৎপাদনকেন্দ্র। সাড়ে ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সরকারি এ প্রকল্পটির কাজ এরই মধ্যে ৬০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে।
স্থানীয় এবং সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, কৃষিজমিতে জৈবসারের ঘাটতি মেটাবে উৎপাদিত এ সার। কেন্দ্রটিতে কর্মসংস্থান হবে স্থানীয় অনেকের।
স্থানীয় কৃষক মোজাফ্ফর মিয়া বলেন, রাসায়নিক সার দিয়ে ফলন আর আগের মতো হয় না। জমিতে জৈবসারের ঘাটতি। বাড়ির পাশে জৈবসার তৈরির কারখানা নির্মাণ হচ্ছে। এখন থেকে এ সার তৈরির কারখানা থেকে আমরা জৈবসার সংগ্রহ করতে পারব। এতে আবাদ ভালো হবে।
স্থানীয় রহমত উল্লাহ বলেন, জৈবসার তৈরির কারখানা আমাদের উপকারে আসবে। অনেক সময় টাকা থাকলেও চাহিদামতো আমরা জৈবসার কিনতে পাই না। এখন জৈবসারের আর অভাব থাকবে না।
প্রকল্পটির নির্মাণকাজ এরইমধ্যে ৬০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। প্রকল্পটি চালু হলে যেমন জৈবসারের চাহিদা মিটবে, পাশাপাশি স্থানীয় অনেকের কাজের ক্ষেত্র তৈরি হবে। আগামী ডিসেম্বর মাসে প্রকল্পটি চালু করা সম্ভব হবে এবং এ প্রকল্পের মাধ্যমে মাটির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি এবং পরিবেশ রক্ষা করা সম্ভব হবে, এমনটাই মত সংশ্লিষ্ট এবং জনপ্রতিনিধিদের।
হাকিমপুর পৌর মেয়র জামিল হোসেন চলন্ত বলেন, জৈবসার উৎপাদনকেন্দ্র নির্মাণের ফলে এলাকার অনেক লোক সেখানে কাজের সুযোগ পাবে এবং এ এলাকার জৈবসারের ব্যবহার দিনদিন বৃদ্ধি পাবে। এতে রাসায়নিক সারের প্রভাব কমে যাবে। এটা আমাদের এলাকা এবং দেশের জন্য ভালো।
দিনাজপুর-৬ আসনের সংসদ সদস্য শিবলী সাদিক বলেন, বর্জ্যগুলো খোলা আকাশের নিচে পড়ে থাকত। এতে দুর্গন্ধ ছড়ানোর পাশাপাশি পরিবেশ নষ্ট করত। এখন এসব বর্জ্য জৈব সারের রূপান্তরিত করা হবে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রামবাংলার জৈবসারের চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে। চায়না বিভিন্ন দেশ থেকে ময়লা সংগ্রহ করে তারা নিজেদের দেশে নিয়ে যায়। এসব ময়লা দিয়ে তারা বিদ্যুৎ ও সার তৈরি করছে। এখন আমরা সার উৎপাদন শুরু করলাম। আগামী দিনে আমরাও বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ তৈরির লক্ষ্যে কাজ করব।
একযোগে দেশের ৩২টি পৌরসভায় পানি সরবরাহ ও মানববর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ এনভায়রনমেন্টাল স্যানিটেশন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর। প্রতিটি প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে সাড়ে ৭ কোটি টাকা। সূত্র : সময়টিভি অনলাইন
