
বাংলাদেশি গার্মেন্টের চাহিদা বৃদ্ধি যুক্তরাষ্ট্রে নিষেধাজ্ঞার কারণ নেই বলছেন রপ্তানিকারকরা

বিশ্বজিৎ দত্ত : সম্প্রতি বাংলাদেশে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা চলছে। ২০১৩ সালের ২৭ জুন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পোশাক খাতের জিএসপি সুবিধা বাতিল করে। ওই সময়ে ২ জুলাই ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল একটি রিপোর্ট করেছিল রাণা প্লাজার ঘটনায় শাস্তি দিতে বাংলাদেশের জিএসপি বাতিল করেছে যুক্তরাষ্ট্র। সামাজিক মাধ্যমে এবারো বলা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের তরফে এমন কোন বিপদ হতে পারে। এ বিষয়ে পোশাক খাতের সংশ্লিষ্টরা যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে বাংলাদেশের পোশাকের অবস্থান ও ভবিষ্যৎ সম্পর্কে জানান, যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশি পণ্যে নিষেধাজ্ঞার কোন সম্ভাবনাই নাই। আবার বাংলাদেশের কারখানাতে এমন কোন পরিস্থিতি নেই যেখানে যুক্তরাষ্ট্র রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, একক দেশ হিসাবে যুক্তরাষ্ট্রেই সবচেয়ে বেশি গার্মেন্ট পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ। যা মোট গার্মেন্ট রপ্তানির প্রায় সাড়ে ১৭ শতাংশ। টাকার অংকে যার পরিমাণ প্রায় সাড়ে ৭ বিলিয়ন ডলার। গার্মেন্ট ছাড়াও, টেরিটাওয়েল, ওষুধ, ফ্রোজেন ফিস, চামড়াজাত পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হয়। সব মিলিয়ে ১০.৪ বিলিয়ন ডলারের বাংলাদেশি পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হয়। ২০২১-২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের মোট রপ্তানির হার ছিল প্রায় ২০ শতাংশ।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী গত ২০২১-২২ সালে(জুন থেকে জুলাই) বিশ্বে রপ্তানি হয়েছিল ৪৯.০৩ বিলিয়ন ডলারের পণ্য।এরমধ্যে গার্মেন্ট পণ্য রপ্তানি হয়েছিল ৪২.৫৫ বিলিয়ন ডলারের। এই রপ্তানির মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির পরিমাণ ছিল প্রায় সাড়ে ৭ বিলিয়ন ডলারের। অন্যান্য পণ্য রপ্তানি হয় আড়াই বিলিয়ন ডলারের।
চলতি বছর (২০২২-২৩) জুন থেকে এপ্রিল পর্যন্ত বিশ্বে রপ্তানি হয়েছে ৪৭.৩১ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। এরমধ্যে গার্মেন্ট পণ্য রপ্তানি হয়েছে ৭.৯৫ বিলিয়ন ডলারের। অন্যান্য পণ্যের রপ্তানি এই সময়ে কমে গেছে।
এ বিষয়ে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর মহাপরিচালক মাহবুবুর রহমান বলেন, একক দেশ হিসাবে যুক্তরাষ্ট্র আমাদের বড় ক্রেতা। বাংলাদেশের মোট রপ্তানির প্রায় ২০ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হয়। এরপরে রয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন সেখানে আমাদের মোট রপ্তানির প্রায় ৪৫ শতাংশ রপ্তানি হয়। বাংলাদেশ ডাবিøউটিও’র সদস্য হিসাবে অগ্রাধীকার মূলক দেশ (এমএফএন) হিসাবে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি করে। যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রফতানিতে চীনের পরেই রয়েছে বাংলাদেশ। আমরা কমমূল্যের পোশাক রপ্তানি করি। সেই হিসাবে আমরা যুক্তরাষ্ট্রে অপ্রতিদ্ব›িদ্ব। আমাদের পরে রয়েছে ভিয়েতনাম। কিন্তু আমরা যে সূতায় পোশাক তৈরী করি সেটি হলো মেশিন মেইড। আর ভিয়েতনামের হলো হাতে তৈরী সূতা। তাদের পোশাকের দাম বেশি কিন্তু পরিমাণ কম। সুতরাং এই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক বর্তমান অবস্থায় আমাদের পোশাক ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের উপায় নেই।
এ বিষয়ে বিকেএমইইএর নির্বাহী সভাপতি মোহম্মদ হাতেম জানান, যুক্তরাষ্ট্রের কাস্টমস চীনের সূতায় তৈরী ভিয়েতনামের পোশাক জব্দ করেছে। চীনের উপরেও যুক্তরাষ্ট্রের নানা ধরণের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এই মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে আমরাই এগিয়ে রয়েছি।
এ বিষয়ে বিজিএমএই’র সভাপতি ফারুক হাসান জানান, যুক্তরাষ্ট্র কোন দেশের পণ্য আমদানি বন্ধ করার জন্য যে যে কারণগুলো দেখায় তা হলো, যার পণ্য আমদানি বন্ধ হবে সেই দেশটির বিশেষ দেশের সঙ্গে ষড়যন্ত্র বা গোপন চুক্তি করেছে কিনা। সে দেশ মার্কিন নাগরিকদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করেছে, যে দেশ কোনো আন্তর্জাতিক জঙ্গি ব্যক্তি বা সংগঠনকে প্রশ্রয় বা মদদ দান করে কিংবা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের গৃহীত ব্যবস্থাকে সমর্থন না করে ইত্যাদি।
এ ছাড়া বাধ্যতামূলক পূর্বশর্ত হচ্ছে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত শ্রম অধিকার (যথা ট্রেড ইউনিয়ন, নি¤œতম আয়সহ উপযুক্ত কর্মপরিবেশ, নির্ধারিত কর্মঘণ্টা, স্বাস্থ্যসেবা) প্রদানের জন্য ব্যবস্থা নেওয়া এবং নিকৃষ্টতম শিশুশ্রম বন্ধের জন্য তাদের অঙ্গীকার পূরণ করা এসব শর্ত। এসব শর্ত ঠিক থাকলে দেখা হয় নির্দিষ্ট পণ্যটির অন্যূন ৩৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন রপ্তানিকারক করেছে কিনা। না হলে কোন দেশের পণ্য নিষিদ্ধ করতে পারে না যুক্তরাষ্ট্র।
