
নানা সমস্যার মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে গার্মেন্টস এক্সসোরিজ ও প্যাকেজিং শিল্প

মো. শাহরিয়ার
৮০ দশকে যখন একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে গার্মেন্টস রপ্তানি শুরু হয়েছিল তখন দেশে কোন এক্সেসরিজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ছিল না। গার্মেন্টস শিল্প বিকাশ লাভ শুরু করলেও তার পশ্চাৎসংযোগ শিল্প এক্সেসরিজ ও প্যাকেজিং শিল্প দেশে পড়ে না উঠায় সকল প্রকার এক্সসরিজ ও প্যাকেজিং বিদেশ হতে আমদানি করতে হতো। আন্তর্জাতিক মূল্যে এক্সসোরিজ ও প্যাকেজিং পণ্য আমদানিতে যেমন সময় ব্যয় হতো তেমনি উৎপাদন খরচও বড়তো। এরূপ অবস্থা চলতে থাকলে আমাদের পোশাক শিল্পের কোনদিনও বর্তমান পর্যায়ে আসা সম্ভব ছিল না।
নানা সমস্যার মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে গার্মেন্টস এক্সসোরিজ ও প্যাকেজিং শিল্প। সরকারের পক্ষ্য থেকে একটু সহযোগিতা পেলে এই খাতে ভালো কিছু করা সম্ভব। আমরা চাইলে গার্মেন্টস এক্সসোরিজ ও প্যাকেজিং শিল্পকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারি। এই খাতে কিছু সমস্যা রয়েছে এগুলো সরকার চাইলে সমাধান করতে পারে। আমরা দীর্ঘ দিন যাবত বলে আসছি শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপন ও ব্যবসা পরিচালনায় প্রয়োজনীয় সব ধরনের সনদ বা লাইসেন্সের মেয়াদ পাঁচ বছর করা প্রয়োজন।
শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপন, রপ্তানি ও ব্যবসা পরিচালনায় গতি আনতে ট্রেড লাইসেন্স, বিডার অনুমোদন, ফায়ার লাইসেন্স, পরিবেশ ছাড়পত্রসহ ৩৩ ধরনের সনদ লাগে। এসবের অধিকাংশই প্রতিবছর নবায়ন করতে হয়। তাতে প্রতিষ্ঠানের অর্থ ও সময় দুটোই ব্যয় হয়। ফলে অগ্রিম ফি বা কর জমা দেওয়া সাপেক্ষে শিল্প স্থাপন ও ব্যবসা পরিচালনায় প্রয়োজনীয় সনদ পাঁচ বছরের জন্য প্রদান করা হলে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সময় ও অর্থ সাশ্রয় হবে।
দেশের বিনিয়োগ ও পণ্য রপ্তানির সম্ভাব্য সমস্যা বিবেচনায় নিয়ে কমপক্ষে সাত বছরের জন্য শুল্ক ও করকাঠামো প্রণয়ন করা দরকার। আগামী বাজেটে বাস্তবায়নের জন্য তৈরি পোশাক খাতের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম এবং মোড়ক পণ্য (প্যাকেজিং) রপ্তানিতে উৎসে কর আগামী পাঁচ বছরের জন্য ১ শতাংশের পরিবর্তে দশমিক ২৫ শতাংশ করা প্রয়োজন।
তৈরি পোশাকের পাশাপাশি সরঞ্জাম এবং মোড়ক পণ্য রপ্তানিতে নগদ সহায়তা দেশীয় শিল্পের বিকাশের জন্য বন্ড কিংবা নন-বন্ড সুবিধায় তৈরি পোশাক খাতের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম যেমন জিপার, ইলাস্টিক, বক্স, ওভেন লেবেল ইত্যাদি শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানি বন্ধ করা দরকার। সেটি হলে সরকারের রাজস্ব বাড়বে। বৈদেশিক মুদ্রাও সাশ্রয় হবে।
পোশাক খাতের বিভিন্ন ধরনের সরঞ্জাম এবং পোশাকসহ অন্য খাতের মোড়ক পণ্য উৎপাদনে দেশ এখন স্বাবলম্বী। বর্তমানে কার্টন, পলিব্যাগ, হ্যাঙ্গার, বোতামসহ পোশাক খাতের ৩০-৩৫ ধরনের সরঞ্জাম এবং অন্যান্য খাতের মোড়ক তৈরি করে এ খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে তৈরি পোশাকের ক্রয়াদেশ কমে গেছে। তার প্রভাবে সরঞ্জাম ও মোড়ক পণ্য উৎপাদনে নিয়োজিত কারখানাগুলোর মধ্যে অধিকাংশ কারখানা ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ উৎপাদহন সক্ষমতায় চলছে।
সারা বিশ্বে সরঞ্জাম ও মোড়ক পণ্যের ৭০ হাজার কোটি ডলারের বাজার রয়েছে। আমাদের দেশের প্রতিষ্ঠানগুলো সরঞ্জাম ও মোড়ক পণ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। উন্নত মানের এসব পণ্য সহজেই সরাসরি রপ্তানি করা সম্ভব। চীনে এ ধরনের পণ্য রপ্তানিতে ৫-১২ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়া হয়। সে কারণে আমরা তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পারছি না। তবে চীনের মতো নগদ সহায়তা দেওয়া হলে বাংলাদেশ থেকেও সরঞ্জাম ও মোড়ক পণ্য সরাসরি রপ্তানি করা সম্ভব। আমাদের দেশীয় কোম্পানিগুলোকে টিকিয়ে রাখতে সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। কারণ, বর্তমান বৈশ্বিক অস্থিরতায় ক্রয়াদেশ কমে যাওয়ায় ছোট কারখানাগুলো কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
তাই বিদেশ থেকে শুল্কমুক্ত সুবিধায় সরঞ্জাম ও মোড়ক পণ্য আমদানি করা প্রয়োজন। এমন ব্যবস্থা নিলে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা তৈরি হবে না। রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকশিল্পের সহযোগী হিসেবে সরঞ্জাম ও মোড়কীকরণ উপখাত হিসেবে আমরা কাজ করছি।
আমাদের যেন মিনিমাম প্রণোদনা দেয়া হয়। এই খাত বর্তমানে উদিয়োমান খাতগুলোর মধ্যে অন্যতম। করোনার আগে আমাদের এই খাতের অগ্রতি ছিলো উল্লেখ করা মতো। সেই সময়ে বেশি কিছু কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। যারা টিকে আছি তাদেরও নানা সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। সরকারের পক্ষ্য থেকে যদিও প্রনোদনা দেয়া হয় যার সুদ হার মিনিমাম রাখতে হবে।
সারা বিশ্ব এখন জানে বাংলাদেশ গার্মেন্টস রপ্তানিত হয়। এখন রপ্তানির প্রথম খাত গার্মেন্টস এবং তারপরই প্রবাসীর রেমিটেন্স। এই গার্মেন্টস শিল্পকে পিছন দিক থেকে যে খাতটি সহযোগিতা করে থাকে সেটা হচ্ছে এক্সেসরিজ খাত। আমাদের অনেক অবদান থাকলেও সরকারিভাবে সেইভাবে শিকৃতি পাইনি। আমাদেরকে পরিচিতিও করা হয়নি। এভাবে অবহেলায় রাখলে বেসরকারিভাবে একটি খাতে কখনো ভালো কিছু করা সম্ভব না।
লেখক : বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যাকসেসরিজ ও প্যাকেজিং ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএপিএমইএ) পরিচালক।
