
আসন্ন বাজেটে অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে শুল্ক-কর বাড়তে পারে
সোহেল রহমান : আসন্ন বাজেটে দেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে শুল্ক-কর বাড়ানো হতে পারে। অর্থনৈতিক অঞ্চলের বিনিয়োগকারীদের প্রাপ্ত সরবরাহের ওপর বর্তমানে ভ্যাট মওকুফ থাকলেও আসন্ন বাজেটে ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব করা হতে পারে। এর ফলে বিশেষ এ অঞ্চলগুলোতে বিনিয়োগকারীদের কিছু সুযোগ-সুবিধা কিছু কমবে। দেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে বিনিয়োগকারী ও অন্যান্য শিল্প খাতের সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিদ্যমান বৈষম্য দূরীকরণে এ ধরনের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বাংলাদেশ ইকনোমিক জোনস অথরিটি-বেজা)-এর আওতায় বিনিয়োগকারী শিল্প প্রতিষ্ঠানের মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানিতে কোনো শুল্ককর না থাকলেও, এর ওপর অন্যান্য শিল্পের মতো ১ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হতে পারে। একইভাবে, নির্মাণ সামগ্রীতে বর্তমানে কোনো ট্যাক্স দিতে না হলেও আগামী বছর থেকে প্রযোজ্য সব ধরনের কর দিতে হবে। এছাড়া, অর্থনৈতিক অঞ্চলে স্থাপিত শিল্প কর্তৃক ব্যবহৃত যানবাহন আমদানির ক্ষেত্রেও উঠে যেতে পারে শুল্কম্ক্তু সুবিধা। ফলে দিতে হবে স্বাভাবিক কর, যা সর্বোচ্চ ৮০০ শতাংশ। অন্যদিকে অর্থনৈতিক অঞ্চলের জমি ইজারার ক্ষেত্রে দীর্ঘদিনের বহুল আলোচিত ভ্যাট ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ শতাংশ করা হতে পারে।
প্রসঙ্গত: দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য বেজা’র আলোচ্য সুবিধা ছাড়াও এখানকার শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ, জ্বালানির ওপর ভ্যাট প্রত্যাহার সুবিধা উপভোগ করে। এছাড়া, বিনিয়োগের প্রথম তিন বছরে কর ছাড় সুবিধা (ট্যাক্স এক্সেম্পশন) দেয়া হয়; পরবর্তী ৭ বছরে ট্যাক্স দেয়া হয় হলিডে সুবিধা। এসব বিষয় নিয়ে অর্থনৈতিক অঞ্চলের বাইরের বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে ভ্যাট-ট্যাক্সের ক্ষেত্রে বৈষম্য থাকায় বেজা’র বাইরের বিনিয়োগকারীরা আপত্তি জানিয়ে আসছিলেন অনেকদিন ধরে।
অর্থনৈতিক অঞ্চলের বাইরের শিল্পের সঙ্গে বৈষম্য কমিয়ে আনতে সরকার এ ধরনের উদ্যোগ নিলে তা যৌক্তিক হবে বলে মনে করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড।
অর্থনৈতিক অঞ্চলের বিনিয়োগকারীরা বলছেন, সরকার এমন উদ্যোগ নিলে তাতে স্থানীয় ও বিদেশি বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হতে পারে। কারণ সরকার এ ধরনের সুবিধা দেয়ার কারণেই বেজা’য় শিল্প স্থাপনে স্থানীয় ও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এগিয়ে আসছে। অন্যান্য বিকল্পগুলো বিবেচনা করেই তারা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
প্রসঙ্গত: স্থানীয় ও বিদেশি সরাসরি বিনিয়োগকে আকৃষ্ট করতে এবং দীর্ঘদিন ধরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা শিল্প ইউনিটগুলোকে একত্র করার লক্ষ্য নিয়ে ২০১০ সালে ‘বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ’ (বেজা) প্রতিষ্ঠা করে সরকার। সারাদেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বেজা, যা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অন্তত ১ কোটি মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করবে এবং এই অঞ্চল থেকে ৪০ বিলিয়ন ডলার সমমূল্যের পণ্য ও পরিষেবা উৎপাদিত হবে।
বেজা সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য মতে, সরকার ইতোমধ্যে ৯৭টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের অনুমোদন দিয়েছে। এর মধ্যে ২৯টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের উন্নয়ন কাজ চলছে এবং ১০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলে ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে উৎপাদন কার্যক্রম। এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে ২ হাজার ৬০০ কোটি ডলারের বিনিয়োগ প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। অনুমোদিত এই বিনিয়োগ প্রস্তাবগুলো প্রায় ১০ লাখ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে।
এখানে অন্তত ৮টি কোম্পানি বাণিজ্যিক উৎপাদনে রয়েছে এবং ৭০টি শিল্প বর্তমানে নির্মাণাধীন। এই শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো প্রায় ৫০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান তৈরির পাশাপাশি প্রায় ৪৫০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে।
