বীমা খাতের কোম্পানির শেয়ারে কল্যাণে চলতি বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ শেয়ারবাজারে লেনদেনের রেকর্ড
মাসুদ মিয়া: দেশের শেয়ারবাজার গত কয়েক দিনের ধারাবাহিকতায় গতকাল সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার দাপট দেখিয়েছে বীমা খাতের কোম্পানিগুলো। একাধিক বীমা কোম্পানির শেয়ার দাম দিনের সর্বোচ্চ পরিমাণ বেড়েছে। বীমা খাতের কল্যানে শেয়ারবাজারে সূচকের বড় উত্থান হয়েছে। সেই সঙ্গে চলতি বছরের মধ্যে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ডিএসইর সর্বোচ্চ লেনদেনের রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। গতকাল লেনদেনের শুরু থেকেই শেয়ারবাজারে দাম বাড়ার ক্ষেত্রে দাপট দেখাতে থাকে বীমা খাতের কোম্পানিগুলো।
এদিন প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন শুরু হতেই প্রায় সবকটি বীমা কোম্পানির শেয়ার দাম বেড়ে যায়। লেনদেনের সময় গাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে দাম বাড়ার ক্ষেত্রে বীমা কোম্পানিগুলোর দাপট বাড়তে থাকে। লেনদেনের আধাঘণ্টার মধ্যেই একাধিক বীমা কোম্পানির শেয়ার দাম দিনের সর্বোচ্চ পরিমাণ বেড়ে যায়। লেনদেনের শুরুতে দেখা দেওয়া বীমা কোম্পানিগুলোর এ দাপট লেনদেনের শেষ পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। ফলে সার্বীক শেয়বাজারেও ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। দিনের লেনদেন শেষে মূল্যসূচক ও লেনদেন বাড়ার পাশাপাশি দাম বাড়ার তালিকায় স্থান করে নেয় বেশিসংখ্যক প্রতিষ্ঠান। দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে সব খাত মিলে ১০২টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। বীপরীতে ৭৭টির দাম কমেছে। আর ১৮২টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। দাম বাড়ার তালিকায় থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ১৫টির শেয়ার ও ইউনিটের দম একদিনে যতটুকু বাড়া সম্ভব ততটুকুই বেড়েছে। লেনদেনের একপর্যায়ে এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের বীক্রেতা উধাও হয়ে যায় এবং দিনের সর্বোচ্চ দামে বীপুল পরিমাণ ক্রয় আদেশ আসে।
দিনের সর্বোচ্চ পরিমাণ দাম বাড়ার তালিকায় থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বীমা কোম্পানি রয়েছে ৭টি। লেনদেনের অল্প সময়ের মধ্যেই এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বেড়ে দিনের সর্বোচ্চ সীমায় চলে যায়। অবশ্য শুধু এ সাত বীমা কোম্পানি নয়, প্রায় সবকটি বীমা কোম্পানির শেয়ার আজ দাম বাড়ার ক্ষেত্রে দাপট দেখিয়েছে। বীমা খাতের ৫০টি কোম্পানির শেয়ার দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বীপরীতে দাম কমেছে ৪টির।
বীমা কোম্পানিগুলোর শেয়ার দাম বাড়ার এমন দাপটের কারণেই মূল্যসূচকেও ঊর্ধ্বমুখীতার দেখা মিলেছে। দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ১৪ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ৩৩৯ পয়েন্টে অবস্থান করছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ্ আগের দিনের তুলনায় দশমিক ২৮ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৩৭১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আর বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ১৯৯ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
মূল্যসূচক বাড়ানোর পাশাপাশি লেনদেনের গতি বাড়াতেও ভ‚মিকা রেখেছে বীমা খাতের কোম্পানিগুলো। ফলে ডিএসইতে বছরের সর্বোচ্চ লেনদেনের ঘটনা ঘটেছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ১৭৪ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ১ হাজার ৩৬ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন বেড়েছে ১৩৮ কোটি ২ লাখ টাকা।
লেনদেন শুধু আগের দিনের তুলনায় বাড়েনি, গত বছরের ৮ নভেম্বরের পর ডিএসইতে সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছে। গত বছরের ৮ নভেম্বর ডিএসইতে ১ হাজার ৪৯৪ কোটি ৫৪ লাখ টাকার লেনদেন হয়। এরপর বাজারটিতে আর ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকার লেনদেনের দেখা মিলেনি।
ডিএসইতে বছরের সর্বোচ্চ লেনদেন হওয়ার দিনে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে আনোয়ার গ্যালভানাইজিংয়ের শেয়ার। কোম্পানিটির ৭২ কোটি ৩২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা নাভানা ফার্মার ৩৫ কোটি ২ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। ৩৩ কোটি ৯৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং স্টেশন।
লেনদেনের ভিত্তিতে কো¤পানি হলো:- লাফার্জহোলসিম, সী পার্ল বীচ, বিএসসি, প্রভাতী ইন্স্যুরেন্স, জেএমআই হসপিটাল, রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স ও মেঘনা লাইফ ইন্স্যুরেন্স।
দর বৃদ্ধির শীর্ষে প্রধান ১০টি কো¤পানি হলো:- প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্স, ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ ইন্সুরেন্স, লিগ্যাসী ফটওয়ার, গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স, ঢাকা ইন্স্যুরেন্স, ইউনিয়ন ক্যাপিটাল, ফেডারেল ইন্স্যুরেন্স, মেঘনা ইন্স্যুরেন্স, স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্স ও আরএসআরএম স্টীল।
দর কমার শীর্ষে প্রধান ১০টি কো¤পানি হলো:- সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ, জুট স্পিনার্স, ইয়াকিন পলিমার, মনোস্পুল পেপার, তমিজুদ্দিন টেক্সটাইল, অ্যাপেক্স ফুডস, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক, মেট্রো স্পিনিং ও পেপার প্রসেসিং।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বীক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ৪৭ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন অংশ নেওয়া ২৪৭টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৮৪টির দাম বেড়েছে। বীপরীতে দাম কমেছে ৫৭টির এবং ১০৬টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ১৯ কোটি ২৮ লাখ টাকা।