৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট আসছে
সোহেল রহমান : বিশাল ব্যাংক ঋণ নির্ভর বাজেট আসছে। আগামী ১ জুন বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। আগামী অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতার শিরোনাম হচ্ছেÑ ‘উন্নয়নের দেড় দশক : স্মার্ট বাংলাদেশের অভিমুখে’। বাজেট বক্তৃতায় মোট ১১টি অধ্যায় রয়েছে। দীর্ঘ এই বাজেট বক্তৃতায় বর্তমান সরকারের গত দেড় দশকে দেশের আর্থ-সামাজিক ও অবকঠামো উন্নয়নের সংক্ষিপ্ত চিত্র তুলে ধরা হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটের আকার নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। বাজেটে সার্বিক ঘাটতির পরিমাণ ধরা হয়েছে ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। জিডিপি’র অংশ হিসেবে ঘাটতির পরিমাণ ৫ দশমিক ২ শতাংশ। ঘাটতি মেটানোর জন্য ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে নীট ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা। চলতি ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের বাজেটে এর পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ নেয়ার পরিমাণ বাড়বে ২৬ হাজার ৬১ কোটি টাকা। শতকরা হিসেবে ২৪ শতাংশ।
সূত্র জানায়, আগামী বাজেটে জিডিপি’র প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন করা হয়েছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে একই প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত ছিল। কিন্তু সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে ৬ দশমিক ০৩ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। অন্যদিকে, আগামী বাজেটে মূল্যস্ফীতির সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে মূল্যস্ফীতির সীমা বাড়িয়ে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
জানা যায়, আগামী অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে মোট আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ লাখ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-এর আওতাধীন রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধনা হয়েছে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া রাজস্ব বহির্ভূত (নন-এনবিআর) খাত থেকে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২০ হাজার কোটি টাকা এবং কর ব্যতিত রাজস্ব (এনটিআর) প্রাপ্তির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫০ হাজার কোটি টাকা।
আগামী বাজেটে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা বাড়লেও সঞ্চয়পত্র খাত থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা কমছে। আগামী অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে নীট ঋণ গ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২৩ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে এর পরিমাণ ছিল ৩৫ হাজার কোটি টাকা। সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে কড়াকড়ি আরোপ করায় এটির বিক্রিতে চলতি বছরের ধস নেমেছে। ফলে সংশোধিত বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৫ হাজার কোটি টাকা।
অন্যদিকে আগামী বাজেটে বৈদেশিক নীট ঋণ প্রাপ্তির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯ কোটি টাকা। এর বাইরে অনুদান হিসেবে আরও আসবে ৩ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে বিদেশী ঋণের নীট লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৯৫ হাজার ৪৫৮ কোটি টাকা।
প্রসঙ্গত: আগামী অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি)-এর আকার নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারের অর্থায়নের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ১ লাখ ৬৯ হাজার কোটি টাকা (এডিপি’র ৬৪.২৬%) এবং বিদেশী প্রকল্প সহায়তার লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৯৪ হাজার কোটি টাকা (এডিপি’র ৩৫.৭৪%)।
আগামী অর্থবছরে টাকার অঙ্কে মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি’র আকার ধরা হয়েছে ৫০ লাখ ৬ হাজার ৬৮২ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে এর আকার ধরা হয়েছিল ৪৪ লাখ ৪৯ কোটি ৯৫৯ কোটি টাকা।