যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানির প্রবৃদ্ধিতে বাংলাদেশ প্রথম এখানে বাংলাদেশ তার সক্ষমতার প্রমান দিয়েছে:সিপিডি
বিশ্বজিৎ দত্ত : যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানির প্রবৃদ্ধির দিক থেকে বাংলাদেশ প্রথম স্থানে রয়েছে। এই প্রবৃদ্ধি ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশ বজায় রেখেছে। যুক্তরাষ্ট্রের অফিস অফ টেক্সটাইল এন্ড এ্যাপারেলের (ওটেক্সা) হিসাবে পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ২০২২ সালে ৩৬ দশমিক ৪ শতাংশ।২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত প্রতিযোগি চীন ও ভিয়েতনামের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি কমলেও বাংলাদেশের আগের প্রবৃদ্ধি স্থিতিশীল রয়েছে। ওটেক্সার হিসাবে ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিতে চীনের প্রবৃদ্ধি ১০ দশমিক ৮ শতাংশ। ভিয়েতনাম ২৭ শতাংশ। একই সঙ্গে ভারত ও ইন্দোনেশিয়ার প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৫ দশমিক ৬ ও ৩৫ দশমিক ৩ শতাংশ।
রপ্তানি প্রবৃদ্ধির বিষয়ে সেন্টার ফর পলিসি রিসার্চের(সিপিডি) সম্মানিত ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাংলাদেশি গার্মেন্টের অন্যতম প্রধান গন্তব্যস্থল যুক্তরাষ্ট্র। এই মার্কেটে বাংলাদেশ অন্যান্যদের সঙ্গে প্রতিযোগীতা করে টিকে আছে। এটা বাংলাদেশের পোশাক খাতের সক্ষমতা। এই মার্কেটে বাংলাদেশ সবার চেয়ে বেশি শুল্ক দিয়ে প্রবেশ করে। আবার অন্যান্যদের চেয়ে দামও কম পায়। তারপরেও বাংলাদেশের গার্মেন্ট এখানে তাদের প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে। এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে বাংলাদেশ তার অন্য দুই প্রতিদ্ব›িদ্ব থেকে রপ্তানিতে ছাড়িয়ে যেতে পারে।
ওটেক্সের হিসাবে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিবছর ১০০ বিলিয়ন ডলারের পোশাক আমদানি করে। এরমধ্যে চীন ২০২২ সালে ২১ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে। ভিয়েতনাম রপ্তানি করেছে ১৮ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারের পন্য। বাংলাদেশ রপ্তানি করেছ ৯ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের গার্মেন্ট পণ্য। এরপরেই রয়েছে ভারত ও ইন্দোনেশিয়া, তাদের রপ্তানি যথাক্রমে ৫ দশমিক ৭ বিলিয়ন ও ৫ দশমিক ৬ বিলিয়ন।
বিজিএমইএর তথ্য অনুযায়ি, যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানিতে বাংলাদেশকে শুল্ক দিতে হয় গড়ে ১৫ দশমিক ২ শতাংশ। এটি যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানিকারক ২৩২টি দেশ যে শুল্ক দেয় তার চেয়ে বেশি। ভিয়েতনামকে পোশাক রপ্তানিতে শুল্ক দিতে হয় গড়ে ১৪ শতাংশ।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কেন্দ্রের(আইটিসি) আগস্ট মাসের রিপোর্ট দি গার্মেন্ট কস্টিং সাইড ফর অল ফার্মস ইন ভ্যালু চেইনে বলা হয়েছে তৈরী পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশ তার প্রতিদ্ব›িদ্বদের চেয়ে ৩২ থেকে ৮৩ শতাংশ মূল্য কম পায়। ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, তুরস্ক ও মেক্সিকো গড়ে বাংলাদেশের চেয়ে বেশি মূল্য পায়। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের একটি জিন্স প্যান্ট ৭ দশমিক ৮১ ডলারে বিক্রি হলে অন্যান্যরা এটি বিক্রি করে ৮ দশমিক ৪১ ডলারে।
এ বিষয়ে বিকেএমইএর কার্যকরি সভাপতি মোহম্মদ হাতেম বলেন,যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির পরিমানের দিক থেকে আমরা ভিয়েতনামের চেয়েও বেশিই পাঠাই। কিন্তু আমাদের পণ্যের বেশির ভাগই কমমূল্যের । যেমন টি শার্ট, ট্রাউজার এসব। কিন্তু এখন রপ্তানিতে পরিবর্তন আসছে আমরাও বেশি মূল্যের পোশাক রপ্তানি শুরু করেছি। যুক্তরাষ্ট্রে ডেনিম রপ্তানিতে আমরা এখন প্রথম সারিতে। তাছাড়া ভিয়েতনামও চীনের চেয়ে আগাশীতে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে কিছু সুবিধাও পেতে যাচ্ছি। যেমন , যুক্তরাষ্ট্র, ১৪টি দেশ নিয়ে ইন্দোপ্যাসিফিক ইকনোমিক পার্টনারশিপ ফ্রেম ওয়ার্ক গঠন করেছে। এই পার্টনার শিপের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো চীনের বাণিজ্য আধিপত্য কমানো। বাংলাদেশ এই সুবিধা কাজে লাগিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাণিজ্য বৃদ্ধি করতে পারবে।
উল্লেখ্য, ভিয়েতনাম ও চীনের পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ইউএফএলপিএ আইনের নিষেধাজ্ঞা পড়েছে। এই নিষেধাজ্ঞায় বলা হয়েছে, চীনের জিংজিয়াংয়ে উৎপাদিত তুলায় শিশুশ্রম রয়েছে। ভিয়েতনাম চীন থেকে ৮০ ভাগ তুলা আমদানি করে। সুতরাং তাদেরও এই নিষেধাজ্ঞায় পড়তে হয়েছে। যুক্তরাষেট্রর কাস্টম ইতিমধ্যেই ভিয়েতনামের ২০ লাখ ডলারের গার্মেন্ট এই আভিযোগে আটক করেছে।