গত সাড়ে ১৪ বছরে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি হয়েছে : অর্থমন্ত্রী
সোহেল রহমান : ‘বর্তমান সরকারের গত সাড়ে ১৪ বছরে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি হয়েছে’ এমন দাবি করে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, যা দেশকে বিশে^র দরবারে এক ঈর্ষণীয় উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে।
তিনি বলেন, ২০০৯ সালে সরকার গঠন করার প্রাক্কালে জাতির সামনে ‘রূপকল্প ২০২১’ পেশ করা হয়েছিল, যার মূল লক্ষ্য ছিল অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধশালী সমতাভিত্তিক ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ। গত দেড় দশকে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, বৈজ্ঞানিক ও অবকাঠামোসহ সকল ক্ষেত্রে যে অভূতপূর্ব অগ্রগতি সাধন করেছে, তার মাধ্যমে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণের টেকসই ভিত্তি স্থাপিত হয়েছে। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ-এর লক্ষ্য অর্জনে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গঠনের উদ্যোগ নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হবে চারটি মূল স্তম্ভের ওপর ভিত্তি করে। এগুলো হচ্ছেÑ স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট সরকার, স্মার্ট সমাজ ও স্মার্ট অর্থনীতি।
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করার সময় ‘উন্নয়নের অভিযাত্রার দেড় দশক পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা’ শীর্ষক বাজেট বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
অর্থমন্ত্রী বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে তরুণ-তরুণী ও যুবসমাজকে প্রস্তুত করতে চায় সরকার। এজন্য প্রস্তুতির অংশ হিসেবে গবেষণা, উদ্ভাবন ও উন্নয়নমূলক কাজের জন্য আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে ১০০ কোটি টাকা বিশেষ বরাদ্দ রাখা হচ্ছে।
দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতি সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছে মুদ্রাস্ফীতি, সরকারি ব্যয়, লেনদেনের ভারসাম্য, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও মুদ্রার বিনিময় হারের ওপর। যুদ্ধ-পূর্ববর্তী দশকে দেশে মূল্যস্ফীতির গড় হার ৫-৬ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। মূল্যস্ফীতি ছাড়াও বর্ধিত আমদানি ব্যয় বাংলাদেশের আমদানি-নির্ভর অর্থনীতির ওপর নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করছে। সার্বিকভাবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, লেনদেনের ভারসাম্য পরিস্থিতির উন্নয়ন ও বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখা আমাদের এ মূহুর্তের চ্যালেঞ্জ।
অর্থমন্ত্রী বলেন, বিশ্ববাজারে জ্বালানি, খাদ্যপণ্য ও সারের মূল্য কমে এসেছে। এ ছাড়া দেশে জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয় ও খাদ্য সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। এসব কারণে আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রিত থাকবে বলে জানান অর্থমন্ত্রী। আগামী অর্থবছরে বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের কাছাকাছি দাঁড়াবে।
তিনি বলেন, আগামী অর্থবছরে (২০২৩-২৪) আমরা উচ্চ প্রবৃদ্ধির ধারায় ফিরে আসব এবং ৭ দশমিক ৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারব বলে আশা করছি। জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সরকার ক্রমান্বয়ে কৃচ্ছ্রসাধন নীতি থেকে বের হয়ে আসবে। একই সঙ্গে মেগা প্রকল্পসহ প্রবৃদ্ধি বাড়াবে, এমন চলমান ও নতুন প্রকল্পে বিনিয়োগ করবে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, সামনের দিনগুলোতে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে টেকসই উত্তরণ ও উত্তরণ পরবর্তী বাস্তবতা মোকাবিলা করার কৌশলও এখনই নির্ধারণ করা প্রয়োজন। বিশেষত শুল্কহার যৌক্তিকীকরণ, রাজস্ব ঘাটতি পূরণে অভ্যন্তরীণ সম্পদ সংগ্রহ, ভর্তুকি/নগদ সহায়তা প্রত্যাহার বা বিকল্প অনুসন্ধান বিষয় ইত্যাদি নিয়ে এখনি ভাবতে হবে। সামাজিক সুরক্ষার ব্যয় নির্বাহ ও অত্যাবশ্যকীয় উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনার প্রয়োজনীয় সম্পদ সংগ্রহের জন্য জিডিপি’র অনুপাতে রাজস্ব আয়ের পর্যাপ্ত বৃদ্ধি, সরকারি ব্যয়ে দক্ষতা নিশ্চিতকরণ এবং সহজ শর্তের দ্বি-পাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক অর্থায়ন এবং দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের দিকে মনোযোগ দিতে হবে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের নির্বাচনী অঙ্গীকার অনুযায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট বক্তব্যে আমি সর্বজনীনন পেনশন পদ্ধতি প্রবর্তনের প্রতিশ্রæতি দিয়েছিলাম। কাজটি এরই মধ্যে অনেকটাই এগিয়ে এনেছি। মহান জাতীয় সংসদে ‘সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন, ২০২৩ পাস হয়েছে। আশা করছি, আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছর থেকেই বাংলাদেশে সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করা সম্ভব হবে।