প্রতি মাসে ২.৫ লাখ টন প্লাস্টিক বর্জ্য রিসাইকেল করা হচ্ছে
মাজহারুল ইসলাম মিচেল : দেশে প্লাস্টিক বর্জ্যের রিসাইক্লিং (পুনর্ব্যবহার) এর চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতিনিয়ত তৈরি হচ্ছে নিত্যনতুন প্লাস্টিক পণ্যের চাহিদা। বড় অঙ্কের এই চাহিদা পূরণে ছোট পরিসরে হলেও এগিয়ে চলছে বাংলাদেশের প্লাস্টিক খাত। সম্ভাবনাময় এই শিল্পটি শুধু দেশের প্লাস্টিক বর্জ্যই হ্রাস করছে না, সেইসঙ্গে অর্জন হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রা। প্রাণ-আরএফএল (রংপুর ফাউন্ড্রি লিমিটেড) গ্রæপের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ কামরুল হাসান জানান, দেশে প্রতি মাসে প্রায় ২.৫ লাখ টন প্লাস্টিক বর্জ্য রিসাইকেল করা হচ্ছে। এটি দেশের মোট চাহিদার মাত্র ২২ শতাংশ পূরণ করা হচ্ছে। আর তাদের গ্রæপ থেকে প্রতি মাসে ৩৫ হাজার মেট্রিক টন প্লাস্টিক বর্জ্য রিসাইকেল করেন। তিনি বলেন, সাশ্রয়ী, সহজ ব্যবহারযোগ্য, কম ঝুঁকি, টেকসই ডিজাইন, দৃষ্টি নান্দনিকতার কারণে আধুনিক জীবনযাপনের সঙ্গী হয়ে বিশ্বে প্লাস্টিক সামগ্রী বিশেষ স্থান দখল করে আছে। দৈনন্দিন জীবনে চলতে যা যা লাগে, তার সবকিছু তৈরির পাশাপাশি ইন্ডাস্ট্রিয়াল পণ্যও তৈরি হচ্ছে প্লাস্টিক দিয়ে। বর্তমান বিশ্বে আসবাবপত্র থেকে শুরু করে অটোমোবাইল, মেডিসিন কিংবা রপ্তানিমুখী শিল্পের ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজসহ-এমন কোনো খাত নেই যেখানে প্লাস্টিকের ব্যবহার নেই।
তিনি জানান, প্রতিনিয়ত তৈরি হচ্ছে নিত্যনতুন প্লাস্টিক পণ্যের চাহিদা। প্লাস্টিক পণ্যের বৈচিত্র্যময় উৎপাদনে বিশাল স্বপ্ন দেখাচ্ছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ প্লাস্টিক দ্রব্য প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিজিএমইএ) মতে ছোট, ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, খুলনা, কুমিল্লা, রাজশাহী ও বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন শহরে ছোট-বড় মিলিয়ে মোট ৫ হাজার কারখানা গড়ে উঠেছে। কর্মসংস্থান হয়েছে কমপক্ষে ২০ লাখের উপরের মানুষের।
চট্টগ্রামে প্রায় ২১টি প্লাস্টিক রিসাইকেলিং কারখানায় প্রতি মাসে ৪ হাজার টনের ওপর প্লাস্টিক রিসাইকেল করা হচ্ছে। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যমতে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১১ কোটি ৭০ লাখ মার্কিন ডলার আয় হয় এ খাত থেকে। আর বিগত পাঁচ বছরে অর্থাৎ ২০১২-১৭ অর্থবছর পর্যন্ত মোট রফতানি আয় হয়েছে ৪৭ কোটি ৮০ লাখ ডলার। বাংলাদেশের রফতানি নীতি ২০১৮-২০২১ এবং অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারসম্পন্ন খাত হিসেবে প্লাস্টিক খাতকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। ২০২১ অর্থবছরে বাংলাদেশের প্লাস্টিক খাতের রফতানি আয় হয় ১১৫.২৮ মিলিয়ন ডলার। ২০২০ অর্থবছরে যা ছিল ১০০.৫২ মিলিয়ন ডলার।
বগুড়া প্লাস্টিক রিসাইক্লিং মালিক সমিতির এক নেতা নাঈম ইসলাম জানান, প্লাস্টিক খাত থেকে বছরে হাজার কোটি টাকা আয় সম্ভব। বর্তমানে চায়না, বেলজিয়াম, ভিয়েতনাম, ভারতসহ কয়েকটি দেশে রপ্তানি করা হয় এই প্লাস্টিক ফ্লেক্স।
খাতসংশ্লিষ্টদের দাবি, পরিবেশ দূষণকারী হিসেবে পরিচিত প্লাস্টিক বর্জ্য রপ্তানির পরিমাণ ছিল অন্তত শতকোটি টাকা। তারা জানান, বর্তমানে বাংলাদেশী প্লাস্টিক পণ্যের বাজারের আকার ২ দশমিক ৯৯ বিলিয়ন ডলার। ২০৩০ সাল নাগাদ এ বাজারের আকার হবে ১০ বিলিয়ন ডলার।