পেঁয়াজের দাম কমলেও আবার বাড়তির দিকে চিনির দাম
মাসুদ মিয়া: পেঁয়াজের বাজার অস্থিতিশীল করে তোলেন কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়ে দেন ইচ্ছামতো। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। এদিকে ভারত থেকে আমদানির অনুমতির পরও পাইকেরিও খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম কমেছে। পাইকেরি বাজারে ৪০ টাকা থেকে ৫০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে খুচরা বাজারে ৬০ টাকা থেকে ৭০ টাকা পাওয়া যাচ্ছে। তবে প্রায় একমাস অস্থির থাকার পর পণ্যটির বাজার যখন লাগামে আসতে শুরু করেছে, তখনই হঠাৎ বাড়তির দিকে চিনির দাম। এরইমধ্যে চিনির দাম বেড়েছে মণপ্রতি ১০০ থেকে ১২০ টাকা। বাজারে হঠাৎ সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম বাড়তির দিকে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। গত বেশ কিছুদিন ধরেই খুচরা বাজারে চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা কেজি দরে। গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে প্রতি কেজি চিনি ৫ টাকা থেকে ১০ টাকা বেড়ে ১৪০ টাকায় থেকে ১৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দাম অনুযায়ী, খোলা চিনির দাম প্রতি কেজি ১২০ টাকা এবং প্যাকেটজাত পরিশোধিত চিনির দাম প্রতি কেজি ১২৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
এদিকে গত শনিবার পেঁয়াজের দাম প্রতিকেজি ১০০ টাকায় উঠেছিল। রোববার সন্ধ্যায় পর দিন (সোমবার) থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়ার খবর আসে। সোমবার আইপিও দেওয়া শুরু হওয়ার পরপরই পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ২৫ টাকা কমে যায়।
তবে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, পেঁয়াজ আমদানির নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করায় বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে প্রচুর পেঁয়াজ আসছে। কাল-পরশুর মধ্যে এ পেঁয়াজগুলো পাইকারি বাজারে এসে পৌঁছাবে। তখন দাম আরেক দফা কমবে। শ্যামবাজারের বিক্রমপুর হাউসের খোকন ইসলাম বলেন, একদিনে পেঁয়াজের দাম ৪০ থেকে ৫০ টাকায় নেমে এসেছে। এদিকে শ্যামবাজারের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, শুধু পাইকারি বাজারে নয়, আমদানির খবরে দেশের গ্রামাঞ্চলের মোকামও পেঁয়াজের দাম কমতে শুরু করেছে। শ্যামবাজারে পেঁয়াজের দামে সাধারণত দ্রæত ওঠানামা হয়। অন্য পাইকারি বাজারে প্রভাব পড়ে একটু দেরিতে। খুচরা বাজারে এর প্রভাবে থাকে দীর্ঘসূত্রতা। বিক্রেতারা বেশি দামে কেনা পণ্য পাইকারিতে কমলেও দাম কমাতে চান না। যদিও কোনো পণ্যের দাম বাড়ার খবরের সঙ্গে সঙ্গে তারা দাম বাড়িয়ে দেন।
জানতে চাইলে মতিঝিল এলাকার মুদি দোকানিরা বলেন, পেঁয়াজের দাম কমেছে জানি, কিন্তু এগুলো আরও বেশি দামে কেনা ছিল। তারপরও কিছুটা লোকসান দিয়ে বিক্রি করতে হচ্ছে।প্রতি কেজি ভিয়েতনামী আদা বা বড় আদা বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকায়, আর প্রতি কেজি গুটি আদা বিক্রি হচ্ছে ৩২০-৩৫০ টাকায়। আদার দাম নিয়ন্ত্রণে খুচরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা ও পাইকারি বাজারে অভিযান চালিয়েছে ভোক্তা অধিকার। তবে তাতেও কমেনি আদার ঝাজ।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, পাইকারিতে আদার দাম এখনো চড়া। বোরো মৌসুমে ধানের উৎপাদন ভালো হলেও বাজারে চালের দাম চড়া। গত সপ্তাহের চেয়ে মাঝারি ও মোটা চাল কেজিতে ২ টাকা বেড়েছে। বাজারে প্রতি কেজি সরু বা চিকন চাল ৭৫ টাকায়, আটাশ চাল ৫৫ টাকা, মোটা চাল ৪৮ টাকা, নাজির চাল ৭৮ টাকা, বাসমতী চাল ৮৫ টাকা, চিনিগুড়া চাল ১২০ টাকা, কাটারি ৭৫ টাকা, আমন ৬০ আউশ ৭০ টাকা ও জিরা শাইল ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে চালের দামও ঊর্ধ্বমুখী এখন চালের দাম নি¤œমুখী থাকার কথা। তবে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সংকটে চাল প্রক্রিয়াজাত করণে খরচ বেড়ে গেছে। এসব ছাড়া বেশিরভাগ নিত্যপণ্য উচ্চমূল্যে স্থির হয়ে আছে। গরুর মাংস প্রতি কেজি ৭৮০ টাকা, প্রতি কেজি ব্রয়লার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
প্রতি কেজি করলা বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়, বরবটি প্রতি কেজি ৬০ টাকায়, ঢেঁড়স প্রতি কেজি ৪০ টাকা, বেগুন ৮০ টাকা, টমেটো ৮০ টাকা, পটল ৪০ টাকা, পেঁপে ৫০ টাকা, ঝিঙা ৫০ টাকা, কাঁকরোল ৬০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৪০ টাকা, লাউ প্রতি পিস ৬০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বিক্রেতারা বলছেন, অনেক সবজির এখন মৌসুম শেষ হয়ে আসছে, তাই সরবরাহ কম। নতুন সবজি উঠতে শুরু করলে দাম আবার কমে আসবে। এদিকে মতিঝিল বাজারে কেনাকাটা করতে আসা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা জাকির বলেন, তেল, চিনি, ডালের পেঁয়াজের দাম যে হারে বেড়েছে। সেই হারে বেতন বাড়ছে না। সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিনিয়ত বাজার নিয়ন্ত্রণে নজরদারি ব্যবস্থা থাকলেও এর সুফল দেখা যাচ্ছে না। খেটেখাওয়া মেহনতি মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে।