সামিট গ্রুপ কর্তৃক মহেশখালীতে তৃতীয় ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনের অনুমোদন ১,৬৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে ক্রয় কমিটিতে ১২ প্রস্তাব অনুমোদন
সোহেল রহমান : দেশের কক্সবাজারের মহেশখালীতে তৃতীয় ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল (এফএসআরইউ) স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। পেট্রোবাংলা কর্তৃক স্থাপিতব্য ৬০০ এমএমসিএফ এই এলএনজি টার্মিনালটি নির্মাণ করবে ‘সামিট অয়েল অ্যান্ড শিপিং কোম্পানি লিমিটেড’। এ নিয়ে সামিট গ্রæপ দ্বিতীয়বার এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের কাজ পাচ্ছে।
বুধবার সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত ‘অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি’র ভার্চুয়াল সভায় এ-সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সাঈদ মাহবুব খান এক ভার্চুয়াল ব্রিফিং-এ এ কথা সাংবাদিকদের জানান।
প্রসঙ্গত: বর্তমানে মহেশখালীতে ৫০০ মিলিয়ন এমএমসিএফ ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল রয়েছে। এর মধ্যে প্রথমটি নির্মাণ করেছে ইউএসএ-এর এক্সেলরেট এনার্জি এবং দ্বিতীয়টি সামিট গ্রæপ। কক্সবাজারের মহেশখালী উপক‚লে স্থাপিত এ দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনালের সরবরাহ সক্ষমতা মোট ১ হাজার (৫০০+৫০০) এমএমসিএফডি।
জানা যায়, মহেশখালীতে ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণে ২০১৬ সালের ১৮ জুলাই পেট্রোবাংলার সঙ্গে চুক্তি করে এক্সিলারেট এনার্জি। নির্মাণ শেষে ২০১৮ সালের ১৯ আগস্ট গ্যাস সরবরাহ শুরু করে কোম্পানিটি। ১৫ বছর মেয়াদি এ টার্মিনাল দিয়ে গ্যাস সরবরাহের চুক্তি রয়েছে ২০৩২ সাল পর্যন্ত। তবে এরই মধ্যে এ টার্মিনাল চুক্তির মেয়াদ ২০৩৮ সাল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
একই প্রযুক্তি মেনে মহেশখালীতে ভাসমান স্থানীয় জ্বালানি খাতের কোম্পানি সামিট গ্রæপ এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণে ২০১৭ সালের ২০ এপ্রিল চুক্তি সই করে। এরপর ২০১৯ সালের ৩০ এপ্রিল গ্যাস সরবরাহ শুরু করে কোম্পানিটি। এ টার্মিনালের মেয়াদ রয়েছে ২০৩৩ সাল পর্যন্ত।
অতিরিক্ত সচিব জানান, ‘অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি’র সভায় আরও চারটি প্রস্তাব নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এগুলো হচ্ছেÑ আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জি-টু-জি চুক্তির আওতায় ‘বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন’ কর্তৃক সংযুক্ত আরব আমিরাত-এর ফার্টিগেøাব ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেড’ থেকে ৩ লাখ ৯০ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া সার আমদানি; একই প্রতিষ্ঠান কর্তৃক কাতার-এর মুনতাজাত থেকে ৪ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া সার আমদানি এবং সৌদি আরব-এর সাবিক এগ্রি-নিউট্রিয়েন্টস কোম্পানি’ থেকে ইউরিয়া সারের আমদানির নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
এছাড়া স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অধীন কমিউনিটি বেইজড হেলথ কেয়ার কর্তৃপক্ষ (সিবিএইচসি) কর্তৃক ১৪ হাজার ২০০টি কমিউনিটি ক্লিনিকের জন্য ‘সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি’-তে ২৭ প্রকার ওষুধ ক্রয়ের একটি প্রস্তাব নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়।
অতিরিক্ত সচিব জানান, অন্যদিকে অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ‘সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি’র সভায় এলএনজি কার্গো আমদানি এবং ১৪ হাজার ২০০টি কমিউনিটি ক্লিনিকের জন্য ‘সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি’-তে ২৭ প্রকার ঔষধ ক্রয়সহ ১২টি প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এতে মোট ব্যয় হবে প্রায় ১ হাজার ৬৩০ কোটি টাকা।
অতিরিক্ত সচিব জানান, ১৪ হাজার ২০০টি কমিউনিটি ক্লিনিকের জন্য সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে সরকারি প্রতিষ্ঠান এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানী লিমিটেড এর কাছ থেকে ২৭ প্রকার ওষুধ সম্বলিত প্রতি কার্টন ওষুধ ২২ হাজার ১৬৪ টাকা হিসেবে ১ লাখ ১২ হাজার ৭৯০ কার্টন ওষুধ ক্রয়ে ব্যয় হবে ২৪৯ কোটি ৯৯ লাখ ৮৫ হাজার টাকা।
তিনি জানান, বৈঠকে পেট্রোবাংলা কর্তৃক যুক্তরাষ্ট্রের ‘মেসার্স এক্সেলারেট এনার্জি এলপি’র কাছ থেকে এক কার্গো (৩৩ লাখ ৬০ হাজার এমএমবিটিইউ) এলএনজি আমদানির একটি প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রতি এমএমবিটিইউ ১৩.৩৯ মার্কিন ডলার হিসেবে বাংলাদেশি মুদ্রায় এতে ব্যয় হবে ৫৭৪ কোটি ৬৫ লাখ ৭৪ হাজার টাকা।
অতিরিক্ত সচিব জানান, বৈঠকে রাষ্ট্রায়ত্ত টেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ’ (টিসিবি)-এর দুটি ক্রয় প্রস্তাব টেবিলে উপস্থাপন ও অনুমোদন দেয়া হয়। এর মধ্যে আন্তর্জাতিকভাবে উন্মুক্ত দর পদ্ধতিতে সিঙ্গাপুরের ‘প্রিন্সিপাল মেট্রিস প্রাইভেট লিমিটেড’ থেকে ১২ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন চিনি কেনার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এখানে প্রতি মেট্রিক টন চিনির মূল্য ধরা হয়েছে ৪৭৭ দশমিক ৯৪ মার্কিন ডলার। এতে মোট ব্যয় হবে ৫৯ লাখ ৪৪ হাজার ২৫০ মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় ৬৪ কোটি ৫২ লাখ ১৯ হাজার টাকা।
টিসিবি’র আরেক প্রস্তাবে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে ‘সিটি এডিবয়েল লিমিটেড’ থেকে ৮০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল কেনার একটি প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রতি লিটার সযাবিন তেলের দাম পড়বে ১৬১ টাকা ৩৭ পয়সা। এতে মোট খরচ হবে ১২৯ কোটি ৯ লাখ ৬০ হাজার টাকা।
অতিরিক্ত সচিব জানান, বৈঠকে ‘শরীয়তপুর-জাজিরা-নাওডোবা (পদ্মা ব্রীজ এপ্রোচ) সড়ক উন্নয়ন’ প্রকল্পের ডবিøউপি-০৩ প্যাকেজের নির্মাণ কাজের ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। যৌথভাবে এ কাজটি করবেÑ মীর হাবিব আলম এবং মাহবুব ব্রাদার্স প্রাইভেট লিমিটেড। এতে ব্যয় হবে ১২৯ কোটি ৬৩ লাখ ৯৫ হাজার ৭০০ টাকা।
তিনি জানান, কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (কাফকো) থেকে ১৯তম লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার ক্রয়ের একটি প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। প্রতি মেট্রিক টন ৩১৯.৮৭৫ ডলার হিসেবে এতে ব্যয় হবে ৯৫ লাখ ৯৬ হাজার ২৫০ মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় ১০৪ কোটি ৪৩ লাখ ৫৯ হাজার টাকা।
অতিরিক্ত সচিব জানান, রাষ্ট্রীয় চুক্তির মাধ্যমে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ১২ম লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার (অপশনাল) আমদানির অপর একটি প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এতে ব্যয় হবে ৯৪ কোটি ১৩ লাখ ৬৮ হাজার টাকা।
তিনি জানান, সভায় রাষ্ট্রীয় চুক্তির মাধ্যমে কাতার থেকে ১৭তম লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার আমদানির একটি প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ৯৮ কোটি ৫ লাখ ৪৭ হাজার ৪১৭ টাকা।
অতিরিক্ত সচিব জানান, বৈঠকে চারটি পৃথক ভেরিয়েশন প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে চট্রগ্রামের আগ্রাবাদ সিজিএ কলোনিতে ৬৫০ বর্গফুটের ২টি ২০তলা আবাসিক ভবন এবং ৮৫০ বর্গফুটের ১টি ২০ তলা আবাসিক ভবন (২২৮ ফ্ল্যাট) নির্মাণের ভেরিয়েশন প্রস্তাবে ব্যয় বেড়েছে ৮ কোটি ৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা।
একই প্রকল্প বা কলোনিতে ৮৫০ বর্গফুটের ৩টি ২০তলা আবাসিক ভবন (২২৮টি ফ্ল্যাট) নির্মাণের ভেরিয়েশন প্রস্তাবে ব্যয় বেড়েছে ১ কোটি ৫৪ লাখ ২৬ হাজার টাকা।
একই কলোনিতে ১০০০ বর্গফুটের ৩টি ২০তলা আবাসিক ভবন (২৮৮টি ফ্ল্যাট) নির্মাণের ভেরিয়েশন প্রস্তাবে ২১ লাখ ২০ হাজার টাকা ব্যয় কমানো হয়েছে।
তিনি জানান, এছাড়া সভায় বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন ‘সাপোর্ট টু ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে পিপিপি’ প্রকল্পের সেইফটি কনসালট্যান্ট -এর একটি ভেরিয়েশন প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। প্রকল্পটির পরামর্শক হিসেবে রয়েছে যৌথভাবেÑ আইসটি এবং ডিডিসি। ভেরিয়েশন প্রস্তাবে ব্যয় বেড়েছে ৫ কোটি ১৭ লাখ ৭৫ হাজার টাকা।