সার্বিক ব্যয় বেড়েছে ৭ হাজার ৬৩০ কোটি ৪৭ লাখ টাকা পঞ্চম সংশোধনীতে আশ্রায়ন-২ প্রকল্পে ব্যয় কমলো ২ হাজর ৩৪৩ কোটি টাকা
সোহেল রহমান : পঞ্চমবারের মতো সংশোধন করা হয়েছে সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে চলমান ‘আশ্রায়ন-২’ প্রকল্পটি। এবার প্রকল্পটির ব্যয় কমানো হয়েছে ২ হাজার ৩৪৩ কোটি ২৩ লাখ টাকা। ফলে মোট প্রকল্প ব্যয় কমে দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৭৯৯ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। প্রকল্পের চতুর্থ সংশোধনীকালে মোট ব্যয় ধরা হয়েছিল ১১ হাজার ১৪২ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। জানা যায়, গত ২০১০ সালের জুলাইয়ে মূল প্রকল্প গ্রহণকালে ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ হাজার ১৬৯ কোটি ১৮ লাখ টাকা। সে হিসেবে প্রকল্পের ব্যয় মোট বেড়েছে ৭ হাজার ৬৩০ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এদিকে ব্যয় কমলেও প্রকল্পের মেয়াদকাল আরও দুই বছর বাড়ানো হয়েছে। প্রকল্পের চতুর্থ সংশোধনীকালে প্রকল্পটির মেয়াদকাল চলতি জুনে শেষ হওয়ার কথা ছিল। এটি বাড়িয়ে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। ২০১০ সালের জুলাইয়ে মূল প্রকল্প গ্রহণকালে বাস্তবায়নের সময়সীমা ধরা হয়েছিল ২০১০ সালের জুলাই থেকে ২০১৪ সালের জুন পর্যন্ত। সে হিসাবে প্রকল্প বাস্তবায়নের সময়সীমা মোট বাড়লো ১১ বছর। জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ সহযোগী ১৭টি সংস্থা প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। বাংলাদেশে ভ‚মিহীন, গৃহহীন, ছিন্নমূল ও অসহায় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পুনর্বাসন, আয়বর্ধক কার্যক্রম সৃষ্টির মাধ্যমে উপকারভোগীর দারিদ্র্য বিমোচন করা এবং তাদের ঋণ প্রদান ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহের সক্ষম করে গড়ে তোলাÑএ প্রকল্পের উদ্দেশ্য। সমগ্র বাংলাদেশে যেখানে উপযোগী ও প্রয়োজনীয় জমি পাওয়া যাবে সেখানেই এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।
প্রকল্পের আওতায় প্রধান কার্যক্রমগুলো হচ্ছেÑ (ক) বন্দোবস্তকৃত ২ শতক খাস জমিতে/ক্রয়কৃত জমিতে/নিজ জমিতে/জরাজীর্ণ ব্যারাকের স্থলে সেমিপাকা/মাচাং/চরাঞ্চলে বিশেষ ডিজাইনের সিআইসিটের ৩,০৬,১১৩টি একক ঘর নির্মাণ (খ) ৩,৯৭৬টি পাকা ব্যারাক, চরাঞ্চলে ৩,৭৭১টি সিআইশিটের ব্যারাক, দেশের অন্যান্য অঞ্চলে ৩,২২২টি সেমিপাকা ব্যারাক নির্মাণ (গ) ১,১৫৫টি কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ (ঘ) ২০টি টং ও ৫৮০টি বিশেষ ডিজাইনের ঘর নির্মাণ এবং (ঙ) ৭০২টি ঘাটলা, অভ্যন্তরীণ রাস্তা, বক্স কালভার্ট, পাকা ড্রেন ও ¯েøাপ প্রোটেকশন নির্মাণ ইত্যাদি।
প্রকল্প সংশোধনের কারণ হিসেবে জানা যায়, (ক) ভাঙ্গণ-প্রবণ চরাঞ্চলে বিশেষ ডিজাইনের একক ঘর (সিআইশিট), পার্বত্য অঞ্চলের বিশেষ ডিজাইনের মাচাং ঘর এবং সমতলে জরাজীর্ণ ব্যারাকের পরিবর্তে একক ঘর নির্মাণসহ গৃহের ডিজাইন অন্তর্ভুক্তকরণ; (খ) উপক‚লীয় ও সাইক্লোন প্রবণ এলাকায় পাকা ব্যারাক নির্মাণের সংখ্যা ১,১৭৩টি হ্রাস; (গ) সমবায়ের ঋণ খাতে উপকারভোগীর সংখ্যা ৪৪,৬০৮ জন হ্রাস; (ঘ) ঘাটলা নির্মাণের সংখ্যা ১৩৭টি বৃদ্ধি; (ঙ) বিভিন্ন অঙ্গের ব্যয় হ্রাস/বৃদ্ধি; এবং (চ) বাস্তব অগ্রগতি বিবেচনায় প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি ইত্যাদি কারণে প্রকল্পটি সংশোধন করা হয়েছে।
প্রকল্পটি চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বিনিয়োগ প্রকল্প হিসেবে ১১৮৯.৯৯ কোটি টাকা বরাদ্দসহ অন্তর্ভুক্ত আছে। ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পটি ভ‚মিহীন, গৃহহীন, ছিন্নমূল ও দরিদ্র জনগোষ্ঠির আবাসন সুবিধা নিশ্চিতকরণ ও বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে পিছিয়ে পড়া গ্রামীণ জনগোষ্ঠির উন্নয়নে বিশেষ অবদান রাখবে বিবেচনায় প্রকল্পটির উদ্দেশ্য ও গৃহীত কার্যক্রম ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যের সাথে সংগতিপূর্ণ।
পরিকল্পনা কমিশনের মতে, প্রকল্পের মাধ্যমে গৃহহীন, ছিন্নমূল ও অসহায় দরিদ্র্য জনগোষ্ঠীকে গৃহসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা সৃষ্টির মাধ্যমে পুনর্বাসন করা হচ্ছে। এছাড়া, আয়বর্ধক কার্যক্রম সৃষ্টির মাধ্যমে উপকারভোগীর দারিদ্র্য বিমোচন করা এবং তাদের ঋণ প্রদান ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহের সক্ষম করে গড়ে তোলায় এ প্রকল্প সহায়ক ভ‚মিকা পালন করছে। প্রকল্পের অবশিষ্ট কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের লক্ষ্যে পঞ্চম সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে।