মূলধন ঘাটতির শীর্ষে কৃষি ব্যাংক ১১ ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ৩৩ হাজার ৫৭৫ কোটি টাকা
সোহেল রহমান : ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ায় সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি বাড়ছে। চলতি বছরের মার্চ শেষে সরকারি-বেসরকারি ১১টি ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ৫৭৫ কোটি টাকা। গত ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক খাতের মূলধন ঘাটতির পরিমাণ ছিল প্রায় ৩০ হাজার ৭০২ কোটি টাকা। সে হিসাবে ডিসেম্বর প্রান্তিকের তুলনায় মার্চে মূলধন ঘাটতি ২ হাজার ৮৭৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, রাষ্ট্রায়ত্ত ছয়টি বাণিজ্যিক ও তিনটি বিশেষায়িতসহ মোট ৯ ব্যাংকের মধ্যে ৭টি ব্যাংকই বর্তমানে মূলধন ঘাটতিতে আছে। ব্যাংকগুলো হলো- সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বেসিক, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক। এসব ব্যাংকের মূলধন ঘাটতির পরিমাণ মোট ২৮ হাজার ১১৭ কোটি টাকা। অন্যদিকে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে মূলধন ঘাটতিতে থাকা ব্যাংকগুলো হলো- বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক ও পদ্মা ব্যাংক। ব্যাংক খাত সংশ্লিষ্টদের মতে, খেলাপী ঋণ প্রতিমাসেই বাড়ছে। আর খেলাপি ঋণ বাড়ার কারণে ব্যাংকগুলোকে বাড়তি প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হচ্ছে। ফলে ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি বাড়ছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, লোন রিশিডিউল করার কারণে গত বছরের সেপ্টেম্বরের তুলনায় ডিসেম্বরে খেলাপি ঋণ কমেছিল প্রায় ১৩ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা। তবে রিশিডিউল করা লোনের মেয়াদ শেষ হয়ে সেগুলো ফের খেলাপি হয়ে যাওয়ায় মার্চ প্রান্তিকে মোট খেলাপি ঋণ ডিসেম্বরের তুলনায় ১১ হাজার কোটি টাকা বেড়ে হয় ১ লাখ ৩১ হাজার ৬২১ কোটি টাকা।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি মূলধন ঘাটতিতে আছে কৃষি ব্যাংক। এ ব্যাংকের মূলধন ঘাটতির পরিমাণ হচ্ছে ১৪ হাজার ৯৪ কোটি টাকা। রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ডিসেম্বরের তুলনায় কিছুটা কমেছে।
জানা যায়, আন্তর্জাতিক নীতিমালার আলোকে ব্যাংকগুলোকে মূলধন সংরক্ষণ করতে হয়। বাংলাদেশে বর্তমানে ব্যাসেল-৩ নীতিমালার আলোকে ব্যাংকের রিস্ক ওয়েটেড অ্যাসেট এর ১০ শতাংশ বা ৪০০ কোটি টাকার মধ্যে যেটি বেশি সে পরিমাণ মূলধন রাখতে হচ্ছে। কোনো ব্যাংক এ পরিমাণ অর্থ সংরক্ষণে ব্যর্থ হলে মূলধন ঘাটতি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। নিয়মানুযায়ী, ব্যাংকের উদ্যোক্তাদের জোগান দেয়া অর্থ ও মুনাফার একটি অংশ মূলধন হিসেবে সংরক্ষণ করা হয়। কোনো ব্যাংক মূলধনে ঘাটতি রেখে তার শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দিতে পারে না। এছাড়া বিদেশি ব্যাংকগুলো কোনো স্থানীয় ব্যাংকের সঙ্গে লেনদেন করার আগে ব্যাংকের মূলধন পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে থাকে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, তিন মাসে ব্যাংক খাতের সারপ্লাস ক্যাপিটাল ৭,৪২৫ কোটি টাকা কমে গেছে। ক্যাপিটাল শর্টফলে থাকা ব্যাংকগুলো বাদে বাকি ৫০টি ব্যাংকের মধ্যে মাত্র ১৩টি ব্যাংকের সারপ্লাস ক্যাপিটাল বেড়েছে গত তিন মাসে। বাকিগুলোর কমেছে। মার্চ শেষে ব্যাংকখাতের সারপ্লাস ক্যাপিটাল দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৩৭৩ কোটি টাকা। অন্যদিকে ব্যাংক খাতে ক্যাপিটাল অ্যাডিকুয়েসি রেশিও ডিসেম্বরের ১১ দশমিক ৮৩ শতাংশ থেকে কমে মার্চে হয়েছে ১১ দশমিক ২৩ শতাংশ।