রূপালী ব্যাংকের শীর্ষ ১০০ খেলাপির কাছে আটকে আছে ৭ হাজার ৮০০ কোটি টাকা
সোহেল রহমান : রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণের ৭৮ শতাংশই আটকে রয়েছে ব্যাংকটির শীর্ষ ১০০ খেলাপি গ্রাহকের কাছে। টাকার অঙ্কে এর পরিমাণ হচ্ছে ৭ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। এর ফলে ব্যাংকটির আর্থিক স্থিতিশীলতা ও মুনাফা বর্তমানে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
রূপালী ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ ছিল ৬ হাজার ৬৩০ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত মার্চে ব্যাংকটি খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৭ হাজার ৫৮৫ কোটি টাকা। যা ওই সময়ে বিতরণ করা ঋণের ১৮ দশমিক ৪১ শতাংশ। আর গত এপ্রিল শেষে এর পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৫ কোটি টাকা।
অথচ ব্যাংকটি গত বছরের শুরুতে অর্থাৎ ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে খেলাপি ঋণের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করেছিলো। তাতে বলা হয়েছিলোÑ নগদ আদায় এবং সমন্বয় অথবা নিয়মিতকরণের মাধ্যমে খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনা হবে।
ব্যাংক খাত সংশ্লিষ্টদের মতে, বৈশ্বিক সংকটের কারণে ব্যাংকের খেলাপি ঋণ কিছুটা বেড়েছে। অন্যদিকে ব্যাংকগুলো ছোট ঋণ বিতরণের চেয়ে বড় ঋণ বিতরণে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে। যে কারণে ঋণ যখন খেলাপি হচ্ছে, তখন গুটিকয়েক প্রতিষ্ঠানের কাছে বেশি পরিমাণে ঋণ আটকে যাচ্ছে। আর বড় গ্রাহকদের ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদকে প্রভাবিত করার ক্ষমতা থাকে। অন্যদিকে এসব গ্রাহক আদালতে রিট করে ব্যাংকের টাকা আটকে রাখে। ফলে বড় গ্রাহকরা খেলাপি হলে সেই ঋণ সহজে ফেরত পাওয়া যায় না। বড় গ্রাহকরা খেলাপি হলে বেশি পরিমাণ নিরাপত্তা সঞ্চিতি রাখার বাধ্যবাধকতা তৈরি হয়। মামলার পেছনে অর্থ ব্যয়ও বেড়ে যায়।
জানা যায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের চাপে পড়ে আটকে পড়া এসব অর্থ উদ্ধারে এখন শীর্ষ নির্বাহীদের মাঠে নামাচ্ছে রূপালী ব্যাংক। ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি ঋণ আদায় কমিটি গঠন করা হয়েছে। শীর্ষ খেলাপিদের থেকে বকেয়া টাকা আদায় করতে প্রধান কার্যালয়ের উপ মহাব্যবস্থাপক ও সহকারি মহাব্যবস্থাপক পর্যায়ের অর্ধশতাধিক কর্মকর্তাকে বিশেষ দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। দুই জন কর্মকর্তার একটি দল তৈরি করে তিনটি করে কোম্পানি থেকে ঋণ আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে।
ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ফিরিয়ে আনার কর্মপরিকল্পনায় বলা হয়েছে, শীর্ষ খেলাপিদের থেকে আদায় বাড়াতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাসহ অন্যান্য সকল কর্মকর্তারা সর্বাত্বক চেষ্টা করবেন। পাশাপাশি নতুন করে কোনো ঋণ যাতে খেলাপি না হয় সেজন্য ‘আর্লি অ্যালার্ট সিস্টেম’ অনুসরণ করবে ব্যাংক।
রূপালী ব্যাংকের মতে, এসব উদ্যোগ ও নিবিড় তদারকির ফলে খেলাপি ঋণ অবশ্যই কমে আসবে। তাছাড়া ব্যাংকের পক্ষ থেকে ব্যবসায়ীদের সব ধরনের ব্যাংকিং সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে, যাতে করে তারা ব্যবসা করে ব্যাংকের টাকা পরিশোধ করতে পারে। প্রসঙ্গত: আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল(আইএমএফ) থেকে সরকার যে ৪.৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ নিচ্ছে, এর অন্যতম শর্ত হচ্ছেÑ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনা। বাংলাদেশ ব্যাংক রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংককে আগামী জুনের মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ মোট বিতরণকৃত ঋণের ১২ শতাংশের মধ্যে নামিয়ে আনার নির্দেশ দিয়েছে।