মার্চ শেষে ব্যাংক খাতে কোটিপতি হিসাবধারীর সংখ্যা বেড়েছে ২৪৬টি
সোহেল রহমান : মূল্যস্ফীতির মধ্যেও চলতি বছরের গত জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে ১ কোটি টাকার অধিক আমানত থাকা ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ডিসেম্বর প্রান্তিকের তুলনায় ২৪৬টি বেড়েছে। ২০২০ সালের শুরুর দিকে দেশে কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের পর থেকেই এ ধরনের কোটিপতি অ্যাকাউন্টের সংখ্যা বাড়ছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, গত ২০২২ সালের ডিসেম্বর শেষে ১ কোটি টাকার বেশি আমানত থাকা অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৯ হাজার ৯৪৬টি। সর্বশেষ গত মার্চ শেষে ১ লাখ ১০ হাজার ১৯২টি অ্যাকাউন্টে ১ কোটি টাকার বেশি জমা রয়েছে। এর মধ্যে ৭৬ হাজার ৭৯০টি বা ৭০ শতাংশই আছে বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৩ হাজার ৮০১টি অ্যাকাউন্ট রাষ্ট্রায়ত্ত¡ বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে রয়েছে। বাকিগুলো বিশেষায়িত ও বিদেশি ব্যাংকগুলোতে আছে।
ব্যাংকাররা বলছেন, মূল্যস্ফীতির মধ্যে ব্যবসায়ে উচ্চ মুনাফা হওয়ার কারণে এ ধরনের ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানিক অ্যাকাউন্টগুলোতে আমানতের পরিমাণ বেড়েছে। অন্যদিকে অ্যাকাউন্টে অন্তত ১ কোটি টাকা আছে, অথচ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তালিকায় নেই, এমন ব্যক্তির সংখ্যা আরও বেশি বলে মনে করছেন তারা।
তাদের মতে, কোটিপতি যেসব অ্যাকাউন্ট আছে, এর একটা বড় অংশই বিভিন্ন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের। দেশের অর্থনীতির আকার ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে। গত কয়েক বছরে অনেকগুলো কোম্পানির আকার বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে। এমতাবস্থায় প্রতিষ্ঠানগুলোর অ্যাকাউন্টে থাকা টাকা ও লেনদেন বাড়বে এটাই স্বাভাবিক।
ব্যাংকাররা বলছেন, তবে কোটি টাকার বেশি ডিপোজিট থাকা ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট কেমন বেড়েছে সেটি গুরুত্বপূর্ণ। ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট বাড়া মানে কোটিপতির সংখ্যা বাড়া, সেটি কেমন আমরা জানি না। অন্যদিকে প্রাতিষ্ঠানিক কোটি টাকার অ্যাকাউন্ট বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কিন্তুঋণও বেড়েছে। ফলে কোটিপতি অ্যাকাউন্টগুলোর বিপরীতে কেমন ঋণ আছে, সেটি পাওয়া গেলে পুরো চিত্রটি পরিষ্কার হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে কোটি টাকার অ্যাকাউন্টধারী ব্যক্তিদের কোনো পরিসংখ্যান নেই। বেশ কয়েকটি সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেছেন, এ ধরনের ব্যক্তি অ্যাকাউন্ট মাত্র ৫ থেকে ৭ শতাংশ; আর বাকিগুলো দেশি-বিদেশি সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাব মতে, গত মার্চ মাস শেষে ব্যাংক খাতে ১৪ কোটি ১১ লাখ অ্যাকাউন্টের বিপরীতে মোট আমানত জমা হয়েছে ১৬ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ৬ লাখ ৯১ হাজার কোটি টাকাই জমা আছে কোটিপতি অ্যাকাউন্টগুলোতে, যা মোট আমানতের ৪২ দশমিক ৮৩ শতাংশ।
মার্চ শেষে এসব অ্যাকাউন্টগুলোতে মোট জমার পরিমাণ ডিসেম্বরের তুলনায় বেড়েছে ১৩হাজার ২৭২ কোটি টাকা। এই সময়ে পুরো ব্যাংক খাতে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা বেড়েছে। সে হিসেবে নতুন ডিপোজিটের ৫৩ শতাংশই গিয়েছে কোটিপতি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, শহরে যে হারে আমানত বেড়েছে, গ্রামে আমানত বেড়েছে তার চেয়েও বেশি হারে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে, ডিসেম্বরের তুলনায় মার্চ প্রান্তিকে ব্যাংক খাতে ১ দশমিক ৫৮ শতাংশ ডিপোজিট বেড়েছে। এর মধ্যে শহরে বেড়েছে ১ দশমিক ৫৪ শতাংশ এবং গ্রামে বেড়েছে ১ দশমিক ৭২ শতাংশ। অথচ ডিসেম্বর প্রান্তিকে গ্রামাঞ্চলের আমানতে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি ছিল।