মো. আখতারুজ্জামান : আগামী ১ জুলাই থেকে ৯ শতাংশ সুদহারের সর্বোচ্চ সীমা তুলে দিয়ে নতুন পদ্ধতি চালু করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংক কোনো সুদ আরোপ করার পর ছয় মাসের মধ্যে গ্রাহকের জন্য তা পরিবর্তন করতে পারবে না। গ্রাহককে অবহিত করে প্রতি ৬ মাস পরপর ঋণের সুদহার পরিবর্তন করা যাবে।
সোমবার এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ছয় মাসের মধ্যে সুদহার বাড়লেও ব্যাংক গ্রাহকের সুদ বাড়াতে পারবে না। আবার সুদহার কমলেও গ্রাহকের সুদ কমবে না।
নতুন নিয়মে আপাতত সাধারণ ঋণের সর্বোচ্চ সুদ ১০ শতাংশের নিচে থাকবে। তবে সিএমএসএমই, ব্যক্তিগত ও গাড়ি কেনার ঋণে তদারকি ফিসহ সুদহার দাঁড়াবে ১১ শতাংশে। আর কৃষি ঋণে সুদহারের সর্বোচ্চ সীমা ৮ শতাংশ থেকে ৯ শতাংশের কাছাকাছি ঠেকবে। ক্রেডিট কার্ডে বর্তমানের মতো ২০ শতাংশ অপরিবর্তিত থাকবে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক ১৮২ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের বাজার সুদকে ভিত্তি ধরে একটি রেফারেন্স রেট নির্ণয় করবে যা স্মার্ট তথা সিক্স মান্থ মুভিং এভারেজ রেট অব ট্রেজারি বিল নামে অভিহিত হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেট ম্যানেজমেন্ট বিভাগ প্রতিমাসের প্রথম কর্মদিবসে রেট প্রকাশ করবে। এর সঙ্গে ব্যাংকগুলো সর্বোচ্চ ৩ শতাংশ মার্জিন যোগ করে সুদহার নির্ধারণ করবে। কৃষি ঋণে স্মার্টের সঙ্গে যোগ করা যাবে ২ শতাংশ। সিএমএসএমই এবং ভোক্তা ঋণের আওতায় ব্যক্তিগত ঋণ ও গাড়ির ঋণে বছরে একবার অতিরিক্ত ১ শতাংশ সুপারভিশন চার্জ নেওয়া যাবে।
প্রচলিত ব্যাংকের পাশাপাশি ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলোকেও একই নিয়মে মুনাফা হিসাব করার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, সুদহারের সীমা বেঁধে দেওয়া থেকে সরে এল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে কিছুটা সুদহার বাড়ল। তবে এখনো তা নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থার মধ্যেই থেকে গেল, পুরোপুরি বাজারভিত্তিক হয়নি।
গত ২০২০ সালের এপ্রিলে ব্যাংক উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের উদ্যোগে ৯ শতাংশ সুদহার কার্যকরের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংক ৯ শতাংশ সুদ বেঁধে দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার গতকাল রোববার মুদ্রানীতি ঘোষণা অনুষ্ঠানে বলেন, যখন সুদহার ১৬ থেকে ১৭ শতাংশ ছিল, তখন ব্যবসার খরচ কমাতে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সুদহার ৯ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছিল। তখন বিদেশি ঋণ ২ শতাংশ সুদে পাওয়া যেত। আবার বর্তমান প্রেক্ষাপটে সুদহার বাড়ানো প্রয়োজন।