মানি ট্রান্সফার কোম্পানির হিসাবে ৮ লাখ বাংলাদেশি যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিটেন্স পাঠায়
কুলদা রায়
উত্তর আমেরিকায় কতজন বাংলাদেশী বাস করেন? সরকারি পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে ১ লাখ ৭৭ হাজার বাংলাদেশী বাস করেন। আর কানাডাতে বাস করেন ৭৫ হাজার ৪২৫ জন। এটা ১৯২১ সালের রিপোর্ট। আরেকটি রিপোর্ট বলছে, যুক্তরাষ্ট্রে ২০২২ সাল পর্যন্ত ২ লাখ ১৩ হাজার বাংলাদেশি বাস করছেন।
ধারণা করা যায়, এই রিপোর্টে শুধুমাত্র বৈধভাবে বসবাসরত বাংলাদেশীদের হিসেবে ধরা হয়েছে। অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে এর চেয়ে অনেকবেশি বাংলাদেশী আছেন।
নিউ ইয়র্কে সব চেয়ে বেশি বাংলাদেশী আছেন। তাদের সংখ্যা ২ লাখ। মিশিগানে রয়েছেন ১ লাখ। ভার্জিনিয়াতে ৩৩৪৫০ জন। আর নিউ জার্সিতে বাংলাদেশীদের সংখ্যা তিরিশ হাজার। মেরিল্যান্ডে ৭ হাজার। কানেক্টিকাটে ৯ হাজার। ফ্লোরিডা, টেক্সাস, ক্যালিফোর্নিয়াতেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাদেশী আছেন। এই কটি সংখ্যা যোগ করলে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশীদের সংখ্যা ৩ লাখ আশি হাজারে দাড়ায়। সরকারি হিসেবে পাওয়া ২ লাখ ১৩ হাজার ছাড়িয়ে আরো ১ লাখ ৬৭ হাজার লোক বেশি পাওয়া যাচ্ছে। এই বেশিরাই অবৈধভাবে বসবাসরত বাংলাদেশী।
অনেক বাংলাদেশীই জনগণনায় সাড়া দেন না। ফলে সেন্সাস বা জনগণনার হিসেব যথার্থ নয় বলে মনে করার যথেষ্ট কারণ আছে।
একটা বাংলাদেশি মানি ট্রান্সফার এজেন্সিরর মতে যুক্তরাষ্ট্রে ৮লাখ বাংলাদেশী বৈধ-অবৈধভাবে বাস করছেন। যুক্তরাষ্ট্রে যারা বৈধ বা অবৈধ যেভাবেই হোক না কেন বাস করেন তারা উভয়েই দেশে টাকা পাঠান। ফলে মানি ট্রান্সফার এজেন্সির হিসেব অনেকটা ঠিক হওয়ার কথা।
যুক্তরাষ্ট্রে সোনালী এক্সচেঞ্জ ও প্লাসিডের মাধ্যমেই বেশি টাকা পাঠান বাংলাদেশীরা। এছাড়া অনলাইনভিত্তিক আরো কিছু মানি ট্রান্সফার প্রতিষ্ঠান আছে। শোনা যায় হুন্ডি করেও টাকা কেউ কেউ পাঠান। ফলে সবগুলো হিসেব করলে ৮ লাখের বেশি বাংলাদেশী পাওয়া যাবে বলে মনে হয়।
উত্তর আমেরিকা প্রথম আলো পত্রিকার সম্পাদক ইব্রাহিম চৌধুরী অবশ্য এই সংখ্যাকে ৫ লাখ বলতে চান। সাপ্তাহিক বাঙালী পত্রিকার সম্পাদক কৌশিক আহমেদ যুক্তরাষ্ট্রের সেন্সাস ডিপার্টমেন্টের বিভিন্ন ইস্যুতে কাজ করেন বলে জানান। তিনি মনে করেন এই সংখ্যা ১০ লাখ হবে।
ওয়ার্ল্ড মাইগ্রেশনের তথ্য মতে পৃথিবীতে যেসব দেশের লোক বেশি প্রবাসী হয়েছেন তাদের মধ্যে বাংলাদেশীদের সংখ্যা ষষ্ঠ। বাংলাদেশীদের চেয়ে ভারতীয়দের সংখ্যা যুক্তরাষ্ট্রে অনেক বেশি। তাদের সংখ্যা ১৯ লাখ থেকে ৪৬ লাখ।পাকিস্তানীদের সংখ্যা ২ লাখ থেকে সাড়ে পাঁচ লাখ।
১৮৮৭ সাল থেকে বাংলাদেশী লোকজন যুক্তরাষ্ট্রে স¤প্রদায় হিসেবে বাস করতে শুরু করেন। ১৯৭১ সালের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশীদের আগমণ বেড়ে যায়। গত দুদশকে এই বেড়ে যাওয়ার পরিমাণ ২৬৩%।
বাংলাদেশীদের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ধার্মিকদের সংখ্যাও বেড়েছে। হালালফুড, হিজাবী নারীদের পথেঘাটে দেখা যাচ্ছে। মসজিদের সংখ্যা বাড়ছে।
পাশাপাশি গত পাঁচ বছর আগেও বাংলাদেশী হিন্দু স¤প্রদায়ের মন্দির চোখে পড়ত না। তারা ভারতীয় মন্দির ভাড়া করে দুর্গা পূজা করতেন। এখন মুসলমানদের দেখাদেখি হিন্দুরাও বাড়ি কিনে মন্দির বানাচ্ছেন। নমোশুদ্র মতুয়ারাও একটি হরি মন্দির কিনেছেন নিউ ইয়র্কে। সেই মন্দির আবার আরেক মতুয়া ডাক্তার আত্মসাৎ করতে চাইছেন। এই নিয়ে মহা ঝামেলা বেঁধেছে। এই ধরনের ঘটনা কিছু কিছু মসজিদের ক্ষেত্রেও শোনা যায়।
বাংলাদেশী লোকজন সব সময়েই দাপটে থাকেন। তারা নানা উৎসবে অনুষ্ঠান করে থাকেন। পান খান। এখানে সেখানে পিক ফেলেন। সামারে বাড়ির সামনে বা পিছনে লাউ, কুমড়ো, বেগুন, পুঁইশাক চাষ করতে পছন্দ করেন। সামারের বিকেলে কেউ কেউ লুঙ্গি পরেও বাইরে বের হন। রোড শো করেন। আর রয়েছে শত শত বাংলাদেশী কবি। কয়েকজন গল্পকার। গায়ক। সাহিত্য-মাস্তান এবং উন্মাদ। জেলা সমিতির নামে অসংখ্য পিকনিক হয়। এই জেলা সমিতির নির্বাচন নিয়ে, রাজনীতি নিয়ে মিটিং মিছিল ঝগড়া মারামারি করতেও তাদের দেখা যায়।
সে তুলনায় ভারতীয় বাঙালীরা বাংলাদেশীদের চেয়ে অপেক্ষাকৃত নিরব থাকতে পছন্দ করেন। বাংলাদেশীরা তাদের অনুষ্ঠানে ভারতীয় বাঙালীদের আমন্ত্রণ করলেও ভারতীয় বাঙালীরা বাংলাদেশীদের এড়িয়ে চলেন। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশীরা সংখ্যায় শিক্ষায় পেশায় ভারতীয়দের চেয়ে পিছিয়ে থাকলেও স্বভাবে অপেক্ষাকৃত অনেক বেশি উদার, সামাজিক, অতিথি পরায়ণ, উৎসবপ্রিয় ও সরব।