চিনির বাজার মনিটরিংয়ে ভোক্তা অধিকারকে বাণিজ্যমন্ত্রীর নির্দেশ
সোহেল রহমান : নির্ধারিত মূল্যে বাজারে চিনি বিক্রয় করা হচ্ছে কি না Ñতা মনিটরিং-এর জন্য ‘জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর’-কে নির্দেশ দিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্শি।
বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে ‘বাংলাদেশ আয়ুর্বেদিক মেডিসিন ম্যানুফ্যাকচারার্স এসোসিয়েশন’ ও ‘মেডিসিনাল প্ল্যান্টস অ্যান্ড হারবাল প্রোডাক্টস বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিল’-এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ‘বাংলাদেশে আয়ুর্বেদিক ওষুধে চিকিৎসার বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যত সম্ভাবনা’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্য শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ নির্দেশের কথা জানান।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির দাম বেড়েছে। অন্যদিকে ভোজ্যতেলের দাম কমেছে। চিনি ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব রয়েছে। সে বিষয়ে ‘ট্যারিফ কমিশন’ একটি পর্যালোচনা প্রতিবেদনও তৈরি করেছে। তবে এখনই চিনি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে দাম সমন্বয়ের জন্য কোনো বৈঠক করা সম্ভব হচ্ছে না। কোরবানির ঈদের পরে তাদের সঙ্গে বসে দাম নির্ধারণ করা হবে।
এদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়াই চিনি কোম্পানিগুলো প্রতি কেজি চিনিতে দাম ২৫ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়ে দিয়েছে। বর্তমানে বাজারে কোম্পানিভেদে প্রতি কেজি চিনি ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা পর্যন্ত দরে বেচাকেনা হচ্ছে।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, চিনির দাম বিষয়ে অ্যাসেসমেন্ট আছে। সে অনুযায়ী ভোক্তা অধিকারকে বাজারে মনিটরিং করতে হবে। অন্তত: ট্যারিফ কমিশনের সুপারিশের চেয়ে যাতে কোম্পানিগুলো বেশি দাম না নেয়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।
প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, সরকার নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্য সাধারণ মানুষের হাতের নাগালে রাখার জন্য প্রাণান্তকর চেষ্টা করে যাচ্ছে। কিন্ত যেসব পণ্য আমদানি করতে হয়, সেসব পণ্যের মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে সমন্বয় করে বাজারে বিক্রয় করতে হয়। দেশে চিনি ও ভোজ্যতেলের চাহিদার বিপরীতে প্রায় পুরোটাই আমদানি করতে হয়। এই দুই পণ্যর দাম উঠা-নামা করে। কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লে দেশের বাজারে এর প্রভাব পড়ে। আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের দাম কমানোর সঙ্গে সঙ্গে দেশের বাজারে দাম কমিয়ে দেয়া হয়েছে এবং হ্রাসকৃত মূল্যে তেল বিক্রির নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এদিকে বর্তমানে চিনির ওপর যে শুল্কহার নির্ধারণ করা আছে Ñতা কমানো কিংবা ছাড় দেয়ার বিষয়ে আমরা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-কে অনুরোধ করবো। এটা করা হলে চিনির দাম কিছুটা কমানো সম্ভব হবে।
এর আগে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা বিষয়ক সেমিনারে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আয়ুর্বেদিক ওষুধ শিল্প একটি প্রাচীন চিকিৎসা ব্যবস্থা, যা মানুষের আস্থা অর্জন করেছে। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারিভাবে এর উন্নয়ন ও বিকাশে কাজ করা হচ্ছে। প্রতিবেশী দেশসমূহ আয়ুর্বেদিক ওষুধ বিদেশী রপ্তানি করে থাকে। আমরাও আমাদের দেশে উৎপাদিত আয়ুর্বেদিক ওষুধ রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে পারি। এ সুযোগ কাজে লাগাতে হবে। এ লক্ষ্য পূরণে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা প্রদান করা হবে বলে প্রতিশ্রæতি দেন তিনি।
তিনি বলেন, সম্ভাবনাময় এ খাতকে কাজে লাগাতে হলে গবেষণার ক্ষেত্র বাড়াতে হবে। এছাড়া এর উপরকারিতা সকলের কাছে পৌঁছাতে হবে, বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের কাছে। আমরা অতিমাত্রায় এন্টিবায়টিকের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছি। আয়ুর্বেদিক ওষুধ এন্টিবায়টিকের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।
‘বাংলাদেশ আয়ুর্বেদিক মেডিসিন ম্যানুফ্যাকচারার্স এসোসিয়েশন’-এর সভাপতি ড. হাকীম মোঃ ইউছুফ হারুন ভ‚ঁইয়া’র সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ‘বাংলাদেশ ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক বোর্ড’-এর সদস্য আ খ মাহবুবুর রহমান সাকী। স্বাগত বক্তব্য রাখেন এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ডা. মোঃ মিজানুর রহমান।