অনলাইনে কোরবানীর পশু বিক্রি গত বছরের থেকে ৪ হাজার কম
মাজহারুল ইসলাম মিচেল: ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) ডিজিটাল হাটের মাঠ পর্যায়ের সমন্বয়ক ই-ক্যাবের নির্বাহী পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম শোভন গতকাল শানিবার দুপুরে আমাদের অর্থনীতিকে এ তথ্য জানান।
তিনি জানান, ঈদুল আজহায় অনলাইনে কোরবানির পশু বিক্রি শুরু হয়েছিল গত ২০ জুন থেকে। ঈদের আগের দিন অর্থাৎ গত বুধবার পর্যন্ত সর্বমোট প্রায় ৫৭ হাজার পশু বিক্রি হয়। গতবছর অর্থাৎ ২০২২ সালে প্রায় ৬০ হাজার পশু বিক্রি হয়েছিল।
জাহাঙ্গীর আলম শোভন জানান, এ বছর ৪২২ কোটি ২৩ লক্ষ ৫৯ হাজার ২৫৭ টাকার পশু কেনা বেচা হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৪০৭ কোটি মূল্যের প্রায় ৪৮ হাজার গরু ও মহিষ এবং ১ কোটি ৫৪ লাখ টাকা মূল্যের ৯ হাজারের উপরে ছাগল ও ভেড়া বিক্রি হয়। আর বেশিরভাগ গরু ও মহিষের গড় মূল্য ছিল ১ লাখ ১২ হাজার টাকার মধ্যে। অপরদিকে, ছাগল ও ভেড়ার গড় মূল্য ছিল প্রায় ২০ হাজার টাকা।
তিনি বলেন, শুধু অনলাইন পেমেন্ট প্রসেসিং ফি বাবদ ২ শতাংশের কম টাকা নেয়া হয়েছে। একটি বাণিজ্যিক অনলাইন প্ল্যাটফর্ম না হয়েও ডিজিটাল হাট ২০২২ সালেও একই পদ্ধতিতে অনলাইনে কোরবানির পশু বিক্রি করেছে।
ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালে ডিজিটাল হাটের প্রথম বছরে ২৭ হাজার পশু বিক্রি হয়েছিল। এরপর ডিজিটাল হাটের মাধ্যমে ২০২১ সালে ৩ লাখ ৮৭ হাজার কোরবানির পশু বিক্রি হয়।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কন্ট্রোল রুম থেকে পাওয়া তথ্য মতে, অনলাইনে ৩ লাখ ৮১ হাজার ৪২০টি গরু এবং ৮৪ হাজার ৫৪টি ছাগল-ভেড়ার দামসহ ছবি আপলোড করা হয়।
বাংলাদেশ ডেইরি ফার্ম ওয়ানার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ ইমরান হোসেন জানান, এবার অনলাইনে প্রচুর পশু ছিল। কিন্তু আশানুরুপ বিক্রি হয়নি।
ইভ্যালি, ই-অরেঞ্জ এবং ধামাকার মতো প্লাটফর্মের প্রতারণার কারণে গ্রাহকের আস্থা কমেছে বলে তিনি জানান।
একশপ-এর টিম লিডার এবং এটুআই-এর কমার্শিয়াল স্ট্র্যাটেজি বিভাগের প্রধান রেজওয়ানুল হক জামি বলেন, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর এবং স্থানীয় পর্যায়ের হাটগুলো যুক্ত হয়েছিল ডিজিটালহাট.গভ.বিডি ডোমেইনের ডিজিটাল হাটে। তবে এ বছর ডিজিটাল হাটে প্রবাসীদের কোরবানির পশু কেনার সুযোগ ছিল। ইক্যাব ব্যবস্থাপনায় এবং সরকারের এসপায়ার টু ইনোভেট (এটুআই)-প্রকল্পের একশপের কারিগরি সহায়তায় অনলাইনে কোরবানির পশু বিক্রির কার্যক্রম শুরু হয়।
এটুআই (একসেস টু ইনফরমেশন) প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ড. দেওয়ান মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির জানান, ঈদের সময় কোরবানির হাটে মানুষের ভিড়, দালালদের খপ্পর, বাজারের অস্থিরতা, মহামারি করোনা আতঙ্ক ও বায়ুদূষণের বিড়ম্বনা এড়াতে অনেকে আগে ভাগে গরু কেনায় বেছে নিয়েছিলেন পশুর ভার্চুয়াল হাটকে।
তিনি বলেন, আমি নিজে ৮৪ হাজার টাকা দিয়ে একটি গরু কিনেছিলাম। অনলাইন ও বিভিন্ন ওয়েবসাইটে গরু-ছাগলের ছবি, পশুর দাম, বয়স, দাঁতের সংখ্যা, ওজন, চামড়ার রঙ, জাত, জন্মস্থান এবং প্রাপ্তিস্থানের উল্লেখ থাকে।
সাদিক এগ্রো ফার্মের পরিচালক ইমরান জানান, তার ফার্মে প্রায় হাজার খানেক পশু বিক্রি হয়েছে।
আল মদিনা ক্যাটেল ফার্মের মালিক সামিউল এহসান জানান, অনলাইনে ঢাকার পাশাপাশি মফস্বল থেকেও বিক্রি হয়েছে। তার ৬০০ গরুর মধ্যে ৭৫ শতাংশ অনলানে বিক্রি হয়েছে।
দারাজ বাংলাদেশের প্রধান বিপণন কর্মকর্তা মো. তাজদিন হাসান বলেন, ঈদের সময় দারাজের অনলাইনে বিভিন্ন রঙের গরুর বিজ্ঞাপন দিয়েছিল।
অনলাইন বিক্রেতারা বলেছেন, ঈদের সময় দারাজ অনলাইন গরু হাট-২২, আলমগীর রেঞ্চ ডটকম, জমজম এগ্রোফার্ম ডটকম, সারা এগ্রোফার্ম, এখানেই ডটকম, আমারদেশ ই-শপ হাট, গরু ডটকম, ঈদকাউসহ বেশ কয়েকটি ওয়েবসাইটে কোরবানির পশু বিক্রির বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়।