আলোচনায় তামিমের সিদ্ধান্ত দ্বায়িত্বহীন মনে করা হচ্ছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অশ্রুসজল বিদায় তামিম ইকবালের
বিশ্বজিৎ দত্ত : হঠাৎ করে গত বুধবার রাতে চট্টগ্রামে বাংলাদেশ-আফগানিস্তান সিরিজ কাভার করতে আসা সাংবাদিকদের নিয়ে এক বিশেষ সংবাদ সম্মেলন করার কথা জানান তামিম ইকবাল। তখন থেকেই তামিমের অবসর নিয়ে জল্পনাকল্পনার শুরু হয়। অবশেষে জল্পনাই সত্য হয়।
গতকাল চট্টগ্রামে হোটেল টাওয়ার ইনে সংবাদ সম্মেলন করে তামিম বিদায় জানিয়ে দিলেন সব ধরনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে। তামিমের অবসরের সিদ্ধান্তের পরপরই বিসিবির কর্মকর্তারা তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে। কিন্তিু তিনি টেলিফোন বন্ধ করে রাখেন। বিসিবির সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনও কথা বলেন তামিমের সঙ্গে। কিন্তু তামিম তার সিদ্ধান্তে অটল থাকবেন বলে জানিয়ে দিয়েছেন। অন্যদিকে আফগানিস্থানের বাকি দুই ম্যাচে কে হবেন অধিনায়ক এ নিয়েও আলোচনা শুর ু হয়েছে। বাকি দুই ম্যাচে লিটন দাস অধিনায়কত্ব করবেন বলে জানা গেছে।তবে অনেকে ম্যাচের মাঝামাঝি তামিমের পদত্যাগকে দ্বায়িত্বহীনতা বলেছেন প্রাক্তন ক্রিকেটাররা।
কেন হঠাৎ অবসরের সিদ্ধান্ত, সে ব্যাপারে সংবাদ সম্মেলনে তামিম কিছু বলেননি। তবে ফিটনেস নিয়ে স¤প্রতি বিসিবি সভাপতির বক্তব্য আহত করে থাকতে পারে তাঁকে।
অবসরের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বিসিবির কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথোপকথনেও তামিম এই বিষয়গুলো এনেছেন বলে জানা গেছে। বিষয়গুলোকে নিজের জন্য সম্মানজনক মনে করেননি তামিম। এ ছাড়া কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের ব্যাপারেও তাঁর কিছুটা ক্ষোভ আছে। তামিম নাকি বলেছেন, যে পরিমাণ চাপ এ মুহূর্তে তাঁকে নিতে হচ্ছে, সেটা নেওয়ার মতো মানসিক অবস্থায় নেই তিনি। এর চেয়ে খেলা ছেড়ে পরিবারকে সময় দেওয়াটাই শ্রেয় মনে করছেন।
সংবাদ সম্মেলনে তামিম জানিয়েছেন, অবসরের সিদ্ধান্ত হুট করে নেওয়া নয়। এ নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করেছেন তিনি। তবে জানা গেছে, প্রথমে তামিমের চিন্তা ছিল শুধু টেস্ট ক্রিকেট থেকে সরে দাঁড়ানো। ওয়ানডে খেলতে চেয়েছিলেন ভারত বিশ্বকাপ পর্যন্ত। কিন্তু সেটা আর হলো না। এর আগে গত বছরের ২২ জুলাই আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টি ক্রিকেট থেকে অবসর নেন তিনি।গত বছর ১৬ জুলাই আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর নিয়েছেন ৩৪ বছর বয়সী তামিম। এবার ওয়ানডে ও টেস্ট থেকেও অবসরের ঘোষণা দিলেন বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বকালের সেরা ওপেনার।
সংবাদ সম্মেলনে অশ্রুসজল চোখে তামিম বলেছেন, ‘আফগানিস্তানের বিপক্ষে গতকালের ম্যাচটিই আমার ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ। এই মুহূর্ত থেকে আমি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানাচ্ছি। সিদ্ধান্তটি হুট করে নেওয়া নয়। অনেক দিন ধরেই আমি এটা নিয়ে ভাবছি। পরিবারের সঙ্গে কথাও বলেছি এটা নিয়ে।’
জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে কোলাহলের মধ্যে তামিম এসে সবাইকে অনুরোধ করেন, ‘আল্লাহর ওয়াস্তে আমাকে দুইটা মিনিট কথা বলতে দেন।’ এরপর অবসরের ঘোষণার প্রসঙ্গ টেনে তামিম বলেছেন, ‘আমার কাছে মনে হয়েছে এটাই সঠিক সময় সরে দাঁড়ানোর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে। সবাইকে ধন্যবাদ জানানো প্রয়োজন।’
এরপর তামিমের গলা ধরে আসে। কান্নাভেজা কণ্ঠে কিছুটা ডুকরে উঠে সময় নিয়ে বলেন, ‘আমি সব সময়ই একটা বলেছি, আমি ক্রিকেট খেলি আমার বাবার স্বপ্ন পূরণ করার জন্য। আমি জানি না তাকে কতটা গর্বিত করতে পেরেছি এই ১৬ বছরে।’
তামিম এই কথা বলার সময়ও কেঁদেছেন। এরপর বলেছেন, ‘আমি আরও কয়েকজনকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। আমার সবচেয়ে ছোট চাচা, যিনি ইন্তেকাল করেছেন, তাঁর নাম আকবর খান, যাঁর হাত ধরেই আমি প্রথম ক্রিকেট বলে টুর্নামেন্ট খেলেছি। চট্টগ্রামের এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে তপন দা নামের একজন কোচ আছেন, তাঁর কাছে আমি ঋণী।’
তামিম এই কথা বলার সময় পিনপতন নীরবতা নেমে এসেছিল সংবাদ সম্মেলনে। শুধু ক্যামেরার শাটার ক্লিকের আওয়াজ শোনা গেছে আর তামিমের ডুকরে ডুকরে কেঁদে ওঠার শব্দ।
ধরে আসা গলাতেই বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা এই ওপেনার বলেছেন, ‘আসলে আমার খুব বেশি কিছু বলার নেই। আমি একটা জিনিসই বলতে চাই, সেটি হলো, আমি আমার সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করেছি ভালো খেলার। আমি আসলেই নিজের সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করেছি। আমি কতটা ভালো খেলোয়াড় ছিলাম, আদৌ ভালো ছিলাম কি না, আমি জানি না। তবে আমি সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করেছি। আমি যখনই মাঠে নেমেছি, আমি আমার শতভাগ দিয়েছি।’ আমি আশা করি আপনারা পরিস্থিতিটা বোঝার চেষ্টা করবেন। কথা বলার জন্য এটা খুব আদর্শ পরিস্থিতি নয়। বিশেষ করে এত বছর পর খেলার পর এই খেলাটাকে বিদায় বলাটা খুব সহজ কিছু নয়।’