মো. আখতারুজ্জামান : বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে আবারও ৩ হাজার কোটি (৩০ বিলিয়ন) মার্কিন ডলারের নিচে নেমে গেছে। শুক্রবার রিজার্ভ কমে ২ হাজার ৯৯৭ কোটি ডলারে নামে, যা গত বুধবার ছিল ৩ হাজার ১১৬ কোটি ডলার।
বৃহস্পতিবার এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নকে (আকু) মে-জুন মাসের আমদানি দায় বাবদ ১০৯ কোটি ৬৭ লাখ ডলার পরিশোধ করার কারণে রিজার্ভ কমেছে।
এর আগে গত মে মাসে দুইবার বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নামে। প্রথমবার ৭ মে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়ন বা আকুকে ১১৮ কোটি ডলারের আমদানি বিল দেওয়ায়, আর পরেরবার ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করায় রিজার্ভ কমে। এরপর বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকসহ (এডিবি) বিভিন্ন সহযোগী সংস্থার দেওয়া ঋণের অর্থ রিজার্ভে যুক্ত হয়। ফলে রিজার্ভ ৩১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়। কোভিড মহামারীর চাপ সামলে উঠতে থাকা অর্থনীতি ২০২২ সালের ফেব্রæয়ারিতে ইউক্রেইন-রাশিয়ার যুদ্ধের খাঁড়ায় পড়ে। দূরের এ যুদ্ধের আঁচে বাংলাদেশেরও আমদানি খরচ যায় বেড়ে। বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ চাপে ডলারের বিপরীতে মান হারাতে থাকে টাকা। আমদানি খরচের বিপরীতে রপ্তানি ও রেমিটেন্স প্রবৃদ্ধি আনুপাতিক হারে না বৃদ্ধি পাওয়ায় চাপে পড়ে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ।
২০২২ সালের জুলাই থেকে আমদানি নিয়ন্ত্রণে কড়াকড়ি আরোপ করেও চাহিদা মেটাতে বাংলাদেশ ব্যাংকও বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাছে ডলার বিক্রি শুরু করে। এতে ক্ষয় হতে থাকা রিজার্ভ গত ডিসেম্বরে থাকা ৩৩ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন ডলার গত জানুয়ারিতে ৩২ দশমিক ২২ বিলিয়ন, ফেব্রæয়ারিতে ৩২ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন, মার্চে ৩১ দশমিক ১৪ বিলিয়ন ও এপ্রিল শেষে ৩১ দশমিক ০৬ বিলিয়নে দাঁড়ায়। এরপর মে শেষে ২৯ দশমিক ৮৭ বিলিয়ন ও জুন শেষে হয় ৩১ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার। আমদানি দায় পরিশোধ করতে গিয়ে বাংলাদেশের ব্যালেন্স অব পেমেন্টে ঘাটতি দেখা দেয়। সেই ঘাটতি সামাল দিতে গত জানুয়ারিতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল- আইএমএফের কাছে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ পেতে সমঝোতায় যায় বাংলাদেশ। ওই সময়ে সংস্থাটি পূর্বাভাস দিয়ে বিবৃতিতে বলেছিল, বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২০২২-২৩ অর্থবছরের শেষ নাগাদ ৩০ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমে আসবে। ঋণ সমঝোতার পর আন্তর্জাতিক এ সংস্থার পরামর্শ আসে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ গণনায় আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বিপিএম৬ পদ্ধতি অনুসরণ করার। আইএমএফের পদ্ধতিতে হিসাব করলে বৈদেশিক সম্পদ গণনায় সকল বৈদেশিক দায় ও ঋণ এবং রিজার্ভের অর্থ অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করলে তা মূল রিজার্ভ থেকে বাদ যাবে।
বাংলাদেশ সরকার রিজার্ভের অর্থে ৭ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল গঠন করেছিল, যা এখন ৪ বিলিয়ন ডলারের নিচে নামিয়ে এনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এটি ছাড়াও রিজার্ভ থেকে বাংলাদেশ বিমান ও শ্রীলঙ্কাকে কিছু অর্থ ঋণ দেওয়া হয়। আবার ইডিএফ ছাড়া আরও দুটি তহবিল গঠন করে পরিচালনা করছে বৈদেশিক মুদ্রায়। সব মিলিয়ে এর পরিমাণ ৭ বিলিয়ন ডলারের উপরে হবে। সেই হিসাবে তহবিল ও ধার দেওয়া অর্থ বাদ দিলে রিজার্ভ ২৩ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমে আসে।