যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তা অর্জন করা সম্ভব : বাণিজ্যমন্ত্রী রপ্তানির গন্তব্য বহুমুখী হয়েছে, পণ্য বহুমুখী আদৌ হয়নি : বাণিজ্যসচিব চলতি অর্থবছরে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৭ হাজার ২০০ কোটি ডলার
সোহেল রহমান: সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হলেও নতুন অর্থবছরে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা গত অর্থবছরের চেয়ে ১১ দশমিক ৫৯ শতাংশ বাড়িয়েছে সরকার। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ হাজার ২০০ কোটি ডলার। এর মধ্যে পণ্য খাতে ৬ হাজার ২০০ কোটি ডলার এবং সেবা খাতে ১ হাজার কোটি ডলার আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সমাপ্ত ২০২২-২৩ অর্থবছরে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ হাজার ৮০০ কোটি ডলার। এর বিপরীতে আয় হয়েছে ৫ হাজার ৫৫৬ কোটি ডলার। এর আগের অর্থাৎ ২০২১-২২ অর্থবছরের তুলনায় সমাপ্ত অর্থবছরে রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ।
বুধবার সচিবালয়ে ‘২০২৩-২৪ অর্থবছরের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ সংক্রান্ত সভা’ শেষে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্শি সাংবাদিকদের এসব কথা জানান
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, মানুষ তো আশা নিয়ে বাঁচে। বৈশ্বিক প্রতিক‚লতার পরও ভালো রেজাল্ট এসেছে। গত বছর কিন্তু গ্যাসের সমস্যা হয়েছে, গ্যাসের দাম বেড়েছে। এমন সমস্যার পরও অর্জন ভালো হয়েছে। গত বছরের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে না পারলেও তার আগের বছরের চেয়ে বেশি অর্জন হয়েছে। নতুন অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে হলে ১১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হবে।
তিনি বলেন, আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। চলতি অর্থবছরে যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তা অর্জন করা সম্ভব এবং আমাদের এই বক্তব্যের সাথে ব্যবসায়ীরা একমত পোষণ করেছেন। রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ গ্যাস-বিদ্যুৎ-জ্বালানিসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে। আমরা তাদের কথা শুনেছি এবং তাদের দাবী পূরণে সরকারের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে আশ্বস্ত করা হয়েছে।
রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় রাখা হয়েছে কি না Ñজানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন তার স্বাভাবিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে সংবিধান অনুযায়ী হবে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশে কোনো কিছুই বন্ধ থাকবে না, খাওয়া বন্ধ হবে না। এটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। অফিস-আদালত, ব্যাংক-বীমা, ব্যবসা-বাণিজ্য স্বাভাবিকভাবেই চলবে। অতএব নির্বাচনের বছর উপলক্ষ্যে রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কোনো বিরূপ প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা নেই। তবে শুধু খবর রাখবেন যেন আগুন-টাগুন না দেয়।
প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, বিগত দুই অর্থবছরের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা এবং লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে অর্জনের হারসহ পণ্য ও সেবা খাতের রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারনের ক্ষেত্রে সা¤প্রতিক অর্থবছরে রপ্তানি খাতে অর্জিত প্রবৃদ্ধির গতিধারা, পণ্য ও বাজার স¤প্রসারণ ও বহুমুখীকরণে সরকার গৃহীত আর্থিক ও অ-আর্থিক প্রণোদনা, বিশ্ব বাণিজ্যের সা¤প্রতিক গতিধারা, দেশীয় ও বৈশ্বিক অর্থনীতিতে ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব এবং রপ্তানি সম্ভাবনাময় নতুন পণ্য ও সেবা খাতের বিকাশ বিবেচনায় নিয়ে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ২০২৩ সালের শেষ পর্যায়ে দক্ষিণ এশিয়ার বেশীরভাগ অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি ঘটবে বলে বিভিন্ন সংস্থা পূর্বাভাস দিয়েছে। এই পূর্বাভাস ঠিক থাকলে এসময়ে বাংলাদেশে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বাণিজ্য সংস্থা এখন পর্যন্ত যেসব পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে, তা বিবেচনায় নিলে চলতি বছরের মন্দা অবস্থা বছরের শেষ দিকে কাটতে শুরু করবে এবং আগামী বছরে বিশ্ব অর্থনীতি পুনরায় প্রবৃদ্ধির ধারায় ফেরত আসবে।
রপ্তানির বাইরে অন্যান্য প্রসঙ্গের মধ্যে কাঁচা মরিচের চড়া দাম সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, কাঁচা মরিচের কথা এসেছে, সেটিতেও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কথা বলা হচ্ছে। এখন ঝড়-বৃষ্টিতে যদি কাঁচা মরিচ পচে যায় তাহলে আমি বাণিজ্যমন্ত্রী বা আমাদের সচিব করবেটা কী? কাঁচা মরিচ এক হাজার টাকা কেজির যে কথা বলা হচ্ছে, সেটি কিন্তু এক বা দুদিনের কথা। কাঁচা মরিচ আমাদের কন্ট্রোলে নেই, কিন্তু দায়টা আমাদের ঘাড়েই আসে।
তিনি বলেন, যেদিন কয়দিন আমাদের এখানে দাম বেড়েছিল সে কয়দিন গুগল খুলে দেখুন, কলকাতায় বাজারে দাম কেমন ছিল। আমি তো কলকাতার বাণিজ্যমন্ত্রী না, তাহলে সেখানে দাম বাড়লো কেমন করে?
ভোজ্যতেলের দাম প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, গতকাল (মঙ্গলবার) তেলের দাম (বোতলজাত সয়াবিন তেল) লিটারে ১০ টাকা কমানো হয়েছে। তেলের দাম বৈশ্বিক বাজারে কমায় দেশেও দাম কমানো হয়েছে।
চিনির দামে কোনো সুখবর আসবে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, চিনির ব্যাপারেও আমরা বারবার বসছি। বৈশ্বিক বাজারে চিনির যে দাম, ভারত থেকে আনতে পারলে ভালো হয়। আমারা সে চেষ্টা করছি। সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে আমরা চিনির সাশ্রয়ী দাম রাখার চেষ্টা করছি। তবে দেশের সব জায়গায় তো আমাদের যাওয়া সম্ভব নয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, আমরা যে রপ্তানির গন্তব্য বহুমুখী করার কথা বলতাম সেটি হয়েছে। কিন্তু পণ্যের যে বহুমুখীর কথা বলা হতো, সেটি আদৌ হয়নি। অন্যদিকে আমরা যদি বৈশ্বিক আমাদের রপ্তানির ডেস্টিনেশন লক্ষ্য করি তাহলে দেখা যাবে যে, আমেরিকা এবং ইউরোপের তাদের মূল্যস্ফীতিসহ অন্যান্য খরচ বেড়ে যাওয়ায় আমাদের পণ্যের চাহিদা কমে গেছে। তবে নভেম্বর থেকে হয়তো বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি কমে আসবে। ফলে নভেম্বর থেকে সারা বিশ্বব্যাপী আমাদের পণ্যের চাহিদা বাড়বে। এর প্রেক্ষিতে আমরা লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছি।