সমঝোতা স্মারকের চ‚ড়ান্ত খসড়া অর্থ বিভাগে বঙ্গোপসাগর ও ভারত মহাসাগরে যৌথ গবেষণা চালাতে সম্মত বাংলাদেশ-ভারত
সোহেল রহমান : বঙ্গোপসাগর ও ভারত মহাসাগরে যৌথভাবে গবেষণা চালাতে সম্মত হয়েছে বাংলাদেশ ও ভারত। এ লক্ষ্যে একটি সমঝোতা স্মারকে (এমওইউ) সই করবে উভয় দেশ। বাংলাদেশের পক্ষে বাংলাদেশ ওশনোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট (বোরি) ও ভারতের পক্ষে সে দেশের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ওশেনোগ্রাফি (নিও) এ সমঝোতা স্মারকে সই করবে। সমঝোতা স্মারকের আওতায় বঙ্গোপসাগর ও ভারত মহাসাগরে যৌথভাবে গবেষণা, বৈজ্ঞানিক ও টেকনিক্যাল ডাটা বিনিময়, এক্সচেঞ্জ অব রিসার্চ স্যাম্পলসহ পারস্পরিক সহযোগিতা করবে উভয় দেশ। যৌথভাবে পরিচালিত এ গবেষণার ব্যয় দুই দেশ বহন করবে এবং গবেষণার প্রেক্ষিতে কোন প্রকাশনা ও দলিল তৈরি করা হলে সেটির মালিকানায়ও থাকবে দুই দেশ।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ভারতের পাঠানো চুক্তির ভিত্তিতে গত ৯ এপ্রিল অনুষ্ঠিত এক আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে ইতোমধ্যেই একটি খসড়া চুক্তি চূড়ান্ত করেছে বাংলাদেশ। প্রণীত খসড়ার ওপর মতামত চেয়ে ইতোমধ্যেই এটি অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগে পাঠানো হয়েছে।
খসড়া অনুযায়ী, যেসব বিষয়ে গবেষণায় পারস্পারিক সহযোগিতা করা হবে সেগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ মৌসুম ও জলবায়ু পরিবর্তন, বায়ু-সমুদ্রের মিথস্ক্রিয়া; সমুদ্রের প্রসেস; সার্কুলেশন ও ডায়নামিক্স; বায়োজিও কেমিস্ট্রি; ইকোসিস্টেমের বৈশিষ্ট্য এবং সামুদ্রিক জীববিজ্ঞান; পলল বিদ্যা ও সামুদ্রিক পাললিক প্রক্রিয়া; সমুদ্র দূষণ এবং প্যালিও-সমুদ্রবিদ্যা এবং টেকটোনিক্স।
সূত্র মতে, ভারতের পাঠানো খসড়ায় ‘ওপেন বে অব বেঙ্গল’ ও পুরো ভারত মহাসাগরে গবেষণার কথা বলা হলেও বাংলাদেশ এতে সম্মত নয়। বাংলাদেশের খসড়ায় ‘ওপেন বে অব বেঙ্গল’ প্রসঙ্গটি বাদ দেয়া হয়েছে। এছাড়া ভারত মহাসাগরের যেসব এলাকায় যৌথভাবে অনুসন্ধান চালাতে দুই দেশ একমত হবে, শুধু সেসব এলাকায় যৌথভাবে গবেষণার বিষয়ে সম্মতি দিচ্ছে বাংলাদেশ।
খসড়ায় আরও বলা হয়েছে, গবেষণার সময় সংগৃহীত তথ্য ও নমুনা দুই দেশের মধ্যে আদান-প্রদান করা যাবে, কিন্তু তৃতীয় পক্ষের কাছে হস্তান্তর করা যাবে না এবং বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যাবে না। যেকোনো অব্যবহৃত নমুনা চুক্তিতে চিহ্নিত সমন্বয়কদের কাছে ফেরত পাঠাতে হবে। উভয় পক্ষের গোপনীয়তা রক্ষা করার জন্য এবং তথ্য প্রকাশ ও এর অননুমোদিত ব্যবহার এড়াতে দুই দেশই প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
কোনো প্রকারের বায়োলজিকাল ম্যাটেরিয়ালের আদান-প্রদানের প্রক্রিয়া ভারতীয় ‘জীববৈচিত্র আইন ২০০২’ ও ‘বাংলাদেশ জীববৈচিত্র আইন ২০১৭’-এর প্রযোজ্য বিধান বা সংশ্লিষ্ট দেশের সমতুল্য আইনী বিধান দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে বলে খসড়া এমওইউ-তে উল্লেখ করা হয়েছে।
জানা যায়, বোরি প্রতিষ্ঠার পর বাংলাদেশের চারজন বিজ্ঞানী ও কর্মকর্তা ভারতের গোয়াতে অবস্থিত ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ওশেনোগ্রাফি এবং চেন্নাইয়ের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ওশান টেকনোলজি পরিদর্শন করেন। পরবর্তীতে নিও’র পরিচালক বোরি’র এর সঙ্গে সমঝোতা স্মারকের প্রস্তাব দিয়ে এমওইউ’র খসড়া পাঠান। খসড়াটি চূড়ান্ত করে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে ভারতের কাছে পাঠায় বাংলাদেশ। ওই বছরের নভেম্বরে ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশন এমওইউ -ড্রাফট পরিবর্তন করে আরও কিছু সাব-আর্টিকেল সংযোজন করে বাংলাদেশকে দেয়।
ভারতের পাঠানো খসড়াটি পর্যালোচনা করে কারিগরি কমিটি। এতে ভারতের পাঠানো সর্বশেষ খসড়ায় পুনঃসংযোজিত ইনপুটগুলো নতুন প্রতিষ্ঠান হিসেবে বোরি’র সক্ষমতা ও অভিজ্ঞতা বিবেচনায় অসামঞ্জস্যপূর্ণ বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে চূড়ান্ত করা খসড়া নিয়ে অগ্রসর হতে মতামত দেয় কারিগরি কমিটি। ২০১৯ সালে চূড়ান্ত করা খসড়াটি আবারও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ভারতে পাঠানো হয়। পরে ভারতীয় পক্ষ কিছু মতামত দিয়ে তাতে সম্মতি দিয়েছে।