জুন মাসে ৪৪ শতাংশ এলসি কমেছে
মো. আখতারুজ্জামান : সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরের (২০২২-২৩) শেষ মাস জুনে আমদানি লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) খোলার পরিমাণ ছিল সবচেয়ে কম। তথ্য অনুসারে, জুন মাসে ৪.৭৫ বিলিয়ন ডলারের এলসি খোলা হয়। ২০২১-২২ অর্থবছরের একই মাসের তুলনায় এলসি খোলার পরিমাণ কমেছে ৪৪ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।
ব্যাংকারদের মতে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আরোপিত বিভিন্ন বিধিনিষেধ ও ডলার সংকটের কারণে এলসি খোলার পরিমাণ কমেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্ন বিধিনিষেধের কারণে ব্যবসায়ীদের জন্য পণ্য আমদানির এলসি খোলা কঠিন হয়ে পড়েছে। কিছু পণ্যের আমদানিতে শতভাগ মার্জিন থাকায় ব্যবসায়ীরা এলসি খুলতে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, আমদানি এলসি খোলার ক্ষেত্রে সতর্কতা বাড়ানোর কারণে ওভার-ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে মানি লন্ডারিং কমে গেছে। ফল স্বরূপ, মোট এলসির পরিমাণও কমেছে।
কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলেছেন, ব্যবসায়ীরা সাইট এলসি খুলতে আগ্রহী। কোনো বিক্রেতা এলসির রিকোয়্যারমেন্ট পূরণ করার পর অবিলম্বে (পাঁচ থেকে দশ দিনের মধ্যে) পরিশোধযোগ্য এই এলসি। সাইট এলসি খোলা হলে খুব অল্প সময়ের মধ্যে পণ্যের মূল্য পরিশোধ করতে হবে জানিয়ে কর্মকর্তারা বলেন, আগামী দিনে ডলারের দাম আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে ডিফার্ড এলসি’র ক্ষেত্রে ডলার পরিশোধের সময়কাল কমপক্ষে ৬ মাস। সংশ্লিষ্টদের মতে, ডলার সংকটে ব্যাংকগুলো সাইট এলসি খোলার চেয়ে ডিফার্ড এলসি খুলতে বেশি আগ্রহী।
প্রয়োজন না হলে ব্যবসায়ীরা ডিফার্ড এলসি খুলছেন না উল্লেখ করে একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ডলারের সুদের হার হিসেবে পরিচিত সিকিউরড ওভারনাইট ফাইন্যান্সিং রেট (এসওএফআর) ৫ শতাংশ অতিক্রম করেছে। এটি এক সময় ১ শতাংশ এরও কম ছিল। যখন ডিফার্ড এলসি খোলা হয়, তখন সুদের পেমেন্ট ডলারে করতে হয়। সুদের হার বেড়ে যাওয়াও এলসি খোলার পরিমাণ কমার একটি কারণ। তিনি বলেন, ব্যাংকিং খাতে ডিফার্ড পেমেন্টের চাপ কিছুটা কমেছে। আমাদের ফরেক্স অবস্থা এখন ভালো।
অন্যদিকে, ডলার সংকট মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি অব্যাহত রেখেছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে রিজার্ভ থেকে রেকর্ড ১৩.৫৮ বিলিয়ন ডলার বিক্রি হয়েছে। এ কারণে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও কমছে।
বাংলাদেশ পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, এলসি খোলার হার কমে যাওয়া মানে দেশের অর্থনীতি এখন মন্থরগতির দিকে যাচ্ছে। কাঁচামাল এবং মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি উল্লেখযোগ্য হারে কমছে। অর্থাৎ আমাদের বিনিয়োগ কমবে এবং নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগও কমবে। বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম কমে যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেল, সয়াবিনসহ অনেক পণ্যের দাম কমেছে। ফলে একই পরিমাণ পণ্য আমদানিতে আমাদের খরচ কমছে।
এদিকে ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতির মধ্যে বিদেশ ভ্রমণ ও চিকিৎসার খরচ বেড়ে যাওয়ায় কার্ডের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন বৃদ্ধি পেয়েছে। কার্ডের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন চলতি বছরের মে মাসে সর্বকালের সর্বোচ্চ ৬৬০ কোটি টাকায় পৌঁছেছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের মে মাসে এ ধরনের লেনদেন হয়েছিল ৩৫৮ কোটি টাকা।