পূর্ণাঙ্গ অটোমেটেড না-হওয়ায় কাঙ্খিত রাজস্ব আদায় সম্ভব হচ্ছে না লক্ষ্যমাত্রার সাড়ে ৮২ শতাংশ ভ্যাট আদায় করতে চায় এনবিআর
সোহেল রহমান : চলতি অর্থবছরের বাজেটে ঘোষিত লক্ষ্যমাত্রার সাড়ে ৮২ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট আদায় করতে চায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। নতুন ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে এনবিআর-এর আওতাধীন মোট রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে মূসক আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ১ লাখ ৬৩ হাজার ৮৩৭ কোটি টাকা। এর বিপরীতে চলতি অর্থবছর শেষে মোট ১ লাখ ৩৫ হাজার ২৩৫ কোটি টাকা মূসক আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সংস্থাটি।
সম্প্রতি অভ্যন্তরীণ সম্পর্ক বিভাগ (আইআরডি)-এর সঙ্গে সম্পাদিত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বার্ষিক কর্ম সম্পাদন চুক্তি (এপিএ)-তে নিজস্ব এমন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে এনবিআর-এর ভ্যাট অনুবিভাগ।
জানা যায়, এনবিআর-এর সাময়িক হিসাব অনুযায়ী, সদ্য সমাপ্ত ২০২২-২৩ অর্থবছরে মূসক খাতে ১ লাখ ৩৬ হাজার ৯০০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা (আদায়ের হার ৮৮ দশমিক ১২ শতাংশ)। টাকার অঙ্কে ঘাটতির পরিমাণ হচ্ছে প্রায় ১৬ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। তবে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হলেও এর আগের অর্থবছরের (২০২১-২২) তুলনায় প্রবৃদ্ধির হার ১১ দশমিক ২৭ শতাংশ।
এনবিআর-এর হিসাব মতে, গত ২০২০-২১ অর্থবছরে ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা মূসক আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৯৭ হাজার ৫০৯ কোটি টাকা এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে ১ লাখ ২৮ হাজার কোটি টাকা মূসক আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ১ লাখ ৮ হাজার ৪১৭ কোটি টাকা মূসক আদায় হয়েছে।
এনবিআর বলছে, কর প্রদানের সংস্কৃতি এদেশে এখনো গড়ে ওঠেনি। অনেক ব্যবসায়ীর মধ্যে যথাযথ রাজস্ব প্রদানে অনীহা রয়েছে এবং জনসাধারণের মধ্যেও মূসক চালান গ্রহণে সচেতনতার প্রকট অভাব রয়েছে। অন্যদিকে কর সংগ্রহ করার ক্ষেত্রে দক্ষ জনবলের অভাব রয়েছে। কর আদায় ব্যবস্থাপনা পূর্ণাঙ্গ অটোমেটেড না-হওয়ায় কাঙ্খিত রাজস্ব আদায় সম্ভব হচ্ছে না এবং আদালতসমূহে অনিষ্পন্ন মামলার কারণে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব অনাদায়ী থেকে যাচ্ছে। এছাড়া দেশের অর্থনীতির স্বার্থে অনেক ক্ষেত্রেই কর অব্যাহতি সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত: সমাপ্ত অর্থবছরে সার্বিকভাবে কর আদায় বাড়লেও রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। সদ্য সমাপ্ত ২০২২-২৩ অর্থবছরে এনবিআর আওতাধীন রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। এর বিপরীতে সাময়িক হিসাব অনুযায়ী, আদায় হয়েছে ৩ লাখ ২৫ হাজার ২৭২ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। এটি লক্ষ্যমাত্রার ৮৭ দশমিক ৯১ শতাংশ। টাকার অঙ্কে কম আদায় হয়েছে প্রায় ৪৪ হাজার ৭২৮ কোটি টাকা। তবে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হলেও এর আগের অর্থবছরের তুলনায় রাজস্ব আদায় বেড়েছে ৮ দশমিক ১২ শতাংশ।
ভ্যাট ছাড়া অপর দুই উপখাতের মধ্যে আয়কর ও ভ্রমণ কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ২২ হাজার ১০০ কোটি টাকা, এর বিপরীতে আদায় হয়েছে ১ লাখ ১২ হাজার ৯২১ কোটি টাকা। এ খাতে প্রবৃদ্ধি ৯ দশমিক ৬২ শতাংশ। অন্যদিকে শুল্ক খাতে ১ লাখ ১১ হাজার কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয়েছে ৯১ হাজার ৭১৭ কোটি টাকা। এতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২ দশমিক ৫৬ শতাংশ।
এপিএ’র আওতায় এনবিআর-এর ভ্যাট অনুবিভাগ-এর অন্যান্য লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে রয়েছেÑ নতুন করে ৪০ হাজার প্রতিষ্ঠানকে ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন প্রদান এবং রিটার্ন দাখিলের হার ৮০ শতাংশে উন্নীতকরণ; আরও ১০ হাজার প্রতিষ্ঠানে ইএফডি/এসডিসি মেশিন স্থাপন ও ইএফডিএমএস ব্যবস্থার সফল বাস্তবায়ন করা; এক ক্লিকে রিটার্ন দাখিলের সুবিধার্থে ইএফডি মেশিনে রিটার্ন বাটন সংযোজন এবং আইবাস-এর সঙ্গে এর ইন্টারগ্রেশন।