পর্যটকদের জন্য কতোটা সাশ্রয়ী হবে, ‘টাকা-রুপি কার্ড’?
ড. আহমদ আল কবির
আমি মনে করি, আমরা একটি নতুন যুগে প্রবেশ করেছি এবং যুগান্তকারী কিছু দেখার অপেক্ষায় আছি। টাকা-রুপি লেনদেন সহজিকরণ করার কারণে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্যের নতুন দ্বার উন্মোচন হয়েছে। ভারত আমাদের দ্বিতীয় বড় ট্রেডিং পার্টনার। আমাদের আমদানি-রপ্তানি ভারসাম্য ভারতের দিকে ঝুঁকে আছে। বাংলাদেশ থেকে লাখ লাখ লোক ভারতে ভ্রমণ, চিকিৎসা বা কেনাকাটার জন্য যায়। অন্যদিকে সীমান্ত এলাকায় অবৈধ ট্রেডও অনেক বেশি। আমি মনে করি, এই নিয়মের মাধ্যমে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্যের নিয়ম-শৃঙ্খলা ফিরে আসবে এবং হুন্ডি ও অবৈধ উপায়ে টাকা খরচ করার যে প্রবণতা, তা থেকেও আমরা কিছুটা মুক্তি পাবো এবং নতুন করে বিচার বিশ্লেষণ করে আমরা এ ব্যবসায় এগোতে পারবো।
টাকা-রুপি লেনদেনে যে কার্ডটি চালু হচ্ছে, সেটি ডেবিট কার্ড। এটি এখনো ক্রেডিট কার্ড হয়নি। হয়তো ধীরে ধীরে ক্রেডিট কার্ডে রূপান্তরিত হবে। আগে টাকা-ডলার-রুপি প্রক্রিয়ায় আমাদের মধ্যস্বত্বভোগীদের স্মরণাপন্ন হতে হতো। কিন্তু এখন ডেবিট কার্ড দিয়ে ১২ হাজার ডলারেরও সমান ভারতীয় মুদ্রা খরচ করা যাবে। আমি মনে করি, এটি অনেক বড় একটি সুযোগ এবং আগে টাকা-ডলার-রুপিতে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ ট্রানজিকশন খরচ চলে যেতো, যা এখন আর হবে না। ভ্রমণ বা চিকিৎসার জন্য যারা ভারতে যায় তাদের জন্য এটি খুবই উপকারী হবে। তবে আমাদের এই ডুয়েল কার্ড কারেন্সি চালু হতে কিছু সময় লাগবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলছেন, ডিসেম্বরের দিকে চালু হবে। কিন্তু আমার ধারণা সেপ্টেম্বর অক্টোবরের দিকেই এটি চালু হয়ে যাবে। আমাদের দেশে ভিসা, মাস্টার কার্ড বা এ জাতীয় যে সকল কার্ডগুলোতে যে সার্ভিস চার্জ আছে, তারা এই চার্জের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণে টাকা নিয়ে যাচ্ছে।
আমরা যদি এই ডেবিট কার্ডকে পপুলারিটি দিতে পারি যে দেশের ভেতরে এবং বাইরে খরচ করা যাবে এবং লেনদেন যদি কার্ডের মাধ্যমে নিয়ে আসি তাহলে এর মধ্যে নিয়ম-শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। তবে এই কার্ডের সিকিউরিটি সিস্টেম অনেক বেশি শক্তিশালী করতে হবে। পাশাপাশি আমার মনে হয়, এটি যেহেতু বাংলাদেশ ব্যাংক সম্পৃক্ত, তাই এখানে বেসরকারি ব্যাংকগুলো অতিরিক্ত চার্জ রাখতে পারবে না, আসল যে ফি সেটিই তাদের রাখতে হবে।
আমাদের দেশে গড়ে প্রতিদিন ৩১ মিলিয়ন ট্রানজিকশন হয় কার্ডের মাধ্যমে। আমাদের নতুন প্রজন্ম যারা আছে তারা এই কার্ড ব্যবহারে অনেকটা অভ্যস্ত হয়ে গেছে। ভিসা বা মাস্টার কার্ড ব্যবহার করে যেভাবে লেনদেন করে ঠিক সেভাবেই এই ডেবিট কার্ড ব্যবহার করে লেনদেন করা সম্ভব। প্রথম প্রথম ছোট ছোট দোকান বা হোটেলে এটি ব্যবহার করা একটু কঠিন হয়ে যাবে। কিন্তু ভারতে কার্ডের ব্যবহার ব্যাপক। বাংলাদেশ ব্যাংক যদি এই কার্ডের খরচ ন্যূনতম রাখে ও মিডিয়ায়ও যদি এর প্রচার-প্রচারণা হয় যে মানুষ কীভাবে এটি ব্যবহার করছে, তাহলে মানুষ সহজেই এটি গ্রহণ করতে পারবে।
বাংলাদেশ থেকে যারা ভারতে বিভিন্ন কাজের জন্য যাচ্ছে তারা অবৈধভাবে এই টাকাগুলো নিয়ে যাচ্ছে এবং খুব কমই আছে, যারা বৈধভাবে টাকা নিয়ে যাচ্ছে। তাই এই সকল জায়গায় ডেবিট কার্ডটি ব্যবহার করলে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে এবং অর্থনীতির ব্যাপক উন্নতি হবে। দীর্ঘ অনেক বছর ধরে আমরা টাকা ডলারের অবস্থানটি ধরে রেখেছিলাম। কিন্তু এখান থেকে আমাদের বের হতে হবে। তাছাড়া ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে ডলারের উপর যে আমাদের অতিরিক্ত নির্ভরতা সেটি কিছুটা হলেও লাঘব করতে পারি এই নতুন ও সাহসী পদক্ষেপের মাধ্যমে। অনেক দেশই আমাদের এটি অনুকরণের চেষ্টা করবে এবং আমাদের এটির সাফল্য খুবই প্রয়োজন। বিশে^র আর্থিক অবস্থাকে অতিরিক্ত ডলার নির্ভর না রেখে একটি ভারসাম্যপূর্ণ স্থিতিশীল পরিস্থিতিতে নিয়ে আসার জন্য এটি একটি কার্যকরি উপায়। রপ্তানি করার জন্য মানুষ এখন অনেক সহজ পদ্ধতি পেয়ে যাবে। তাই আমি মনে করি, এই কার্ড প্রক্রিয়ার কারণে আমাদের রপ্তানিও বৃদ্ধি পাবে।
পরিচিতি : সাবেক চেয়ারম্যান, রুপালি ব্যাংক। শ্রæতিলিখন: জান্নাতুল ফেরদৌস