এফবিসিসিআই নির্বাচন ৮০ পদের বিপরীতে বৈধ প্রার্থী ১৩৪ জন শেষ পর্যন্ত ৫ মনোনয়ন বাতিল
আমিনুল ইসলাম : ব্যাংক ঋণ ও কর খেলাপিসহ অন্যান্য কারণে ৩২ জন ব্যবসায়ী এফবিসিসিআইয়ের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষিত হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে ৩০ জন নির্বাচন বোর্ডে আপিল করেন, যাদের মধ্যে ২৭ জন প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন। তিন জনের আপিল খারিজ হয়েছে। আর দুজন প্রার্থী আপিল করেননি। ফলে ৫ জন ব্যবসায়ীর মনোনয়ন চূড়ান্তভাবে বাতিল হয়েছে। ২০২৩-২৫ মেয়াদের জন্য এফবিসিসিআইয়ের নির্বাচন বোর্ড রোববার বৈধ প্রার্থীর তালিকা প্রকাশ করে।
এতে দেখা যায়, এফবিসিসিআইয়ের ৮০ পরিচালক পদের বিপরীতের বর্তমানে বৈধ প্রার্থীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩৪ জনে। সংগঠনটিতে মোট পরিচালক পদ ৮০টি। এসব পদ আবার দুটি গ্রæপে বিভক্ত। এক গ্রæপে জেলা ভিত্তিক চেম্বার থেকে ৪০ জন পরিচালক হন। বাকি ৪০টি পদ বিভিন্ন পণ্যভিত্তিক এসোসিয়েশন গ্রæপের জন্য সংরক্ষিত। এর মধ্যে দুই গ্রæপে ২৩ জন করে মোট ৪৬ প্রার্থী সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হবেন। বাঁকী ৩৪ টি পদে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ চেম্বার ও এসোসিয়েশন থেকে ১৭ জন করে বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়ে আসবেন। এবারের চেম্বার গ্রæপ থেকে ১৭ জন মনোনীত পরিচালক পদের বিপরীতে বর্তমানে বৈধ প্রার্থী আছেন ১৬ জন ব্যবসায়ী। অ্যাসোসিয়েশন গ্রæপে ১৭ জন মনোনীত পরিচালক পদের বিপরীতেও ১৬ জন বৈধ প্রার্থী আছেন। এই দুই গ্রæপে একটি করে মোট দুটি পদ শূন্য রয়েছে। অন্যদিকে সরাসরি ভোটে প্রতিদ্ব›দ্বীতার মাধ্যমে এসোসিয়েশন গ্রæপ থেকে ২৩ জন পরিচালক পদের বিপরীতে ৭৩ জন প্রার্থীর মনোনয়ন পত্র বৈধ ঘৈাষণা করা হয়েছে। আর চেম্বার গ্রæপ থেকে ২৩ পদের বিপরীতে বর্তমানে বৈধ প্রার্থীর সংখ্যা ২৯। যদিও মঙ্গলবার পর্যন্ত প্রার্থিতা প্রত্যাহার করার সুযোগ রয়েছে।
নির্বাচন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ব্যাংকঋণ ও কর খেলাপির অভিযোগে মনোনয়ন বাতিল হওয়া ৩৪ জন পরিচলকের মধ্যে ২৭ জনের মনোনয়ন পত্র বৈধ ঘোষণা করেছে এফবিসিসিআই নির্বাচনী আ্যাপিল বোর্ড। এদের মধ্যে ব্যাংক ঋণ ও কর খেলাপির অভিযোগে মনোনয়ন বাতিল হওয়া শফিকুল ইসলাম ভরসা এবং কর খেলাপির অভিযোগে মনোনয়ন বাতিল হওয়া মো. জাকির হোসেন প্রার্থিতা ফিরে পেতে নির্বাচন বোর্ডে আপিল করেননি। এছাড়া মনোনয়নপত্র ও ভোটার তালিকার স্বাক্ষরের মধ্যে গরমিল এবং মনোনয়ন পত্রে কাটাকাটির কারণে নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সহসভাপতি ফজলে শামীম এহসানের নির্বাচনে অযোগ্য হন। তিনি প্রার্থিতা ফিরে পেতে আপিলও করেন। তবে আপিল শুনানির দিন তিনি উপস্থিতি হননি। সে কারণে তার আপিল গ্রহণ করেনি নির্বাচন বোর্ড। এ ছাড়া ঋণ ও করখেলাপি হওয়ার অভিযোগে আবুল হোসেন ও মোহাম্মদ নিজাম উদ্দীনের মনোনয়ন বাতিল হয়েছিল। তারাও প্রার্থিতা ফিরে পেতে আপিল করেন। তবে তাদের দাখিল করা কাগজপত্র গ্রহণ করেনি নির্বাচন বোর্ড। ফলে এই দুই প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। এ ছাড়া মনোনয়ন স্থগিত থাকা আবদুল হক ও এনায়েত উল্লাহ সিদ্দিকী প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন।
ব্যাংক ঋণ ও কর খেলাপি হওয়া এবং অন্যান্য অভিযোগে যাঁদের মনোনয়ন বাতিল হওয়ার পর আপিল করে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন তারা হলেন সরাসরি ভোটের জন্য অ্যাসোসিয়েশন গ্রæপে বিলিং বোর্ড প্রস্তুতকারক সমিতির সৈয়দ সাদাত আলমাস কবির, মেধাস্বত্ব সমিতির মোহাম্মেদ খোরশেদ আলম, ফল ও সবজি রপ্তানিকারক সমিতির মোহাম্মদ মনসুর, ইনডেনটিং এজেন্টস সমিতির সাহাব উদ্দিন খান, ইলেকট্রিক্যাল সমিতির খন্দকার রুহুল আমিন, সেকেন্ডারি কোয়ালিটি টিনপ্লেট আমদানিকারক ও ব্যবসায়ী সমিতির নিজামউদ্দিন রাজেশ, পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির মো. আবুল হাশেম, ফল আমদানিকারক সমিতির সিরাজুল ইসলাম, রিভার ট্রান্সপোর্ট এজেন্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের রাকিবুল আলম, মাছ রপ্তানি ও আমদানিকারক সমিতির সালমা হোসেন অ্যাশ, ডিম উৎপাদক সমিতির তাহের আহমেদ সিদ্দিকী, তৃণমূল নারী উদ্যোক্তা সমিতির মৌসুমী ইসলাম এবং ওয়াটার ওয়ার্কস অ্যাসোসিয়েশনের মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন।
অ্যাসোসিয়েশন গ্রæপে মনোনীত পরিচালক পদে কর খেলাপির হওয়ার অভিযোগে মনোনয়ন বাতিল হওয়ার পর আপিল করে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) নজরুল ইসলাম মজুমদার। একইভাবে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজের মোহাম্মেদ আবুল বাশার, সড়ক পরিবহন সমিতির খন্দকার এনায়েত উল্লাহ এবং পুরোনো গাড়ি ব্যবসায়ীদের সংগঠন বারভিডার হাবিব উল্লাহ ডন। কর খেলাপি হওয়ায় এই তিনজন নির্বাচনে জন্য প্রাথমিকভাবে অযোগ্য হয়েছিলেন। এ ছাড়া ঋণ খেলাপির কারণে মনোনয়ন বাতিল হলে আপিল করে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন আসবাব রপ্তানিকারক সমিতির কে এম আক্তারুজ্জামান।
ব্যাংকঋণ ও কর খেলাপির কারণে মনোনয়ন বাতিল হওয়ার পর আপিল করে সরাসরি ভোটের জন্য চেম্বার গ্রæপের প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন বাগেরহাট চেম্বারের হাসিনা নেওয়াজ, নরসিংদী চেম্বারের মো. আলী হোসেইন, পটুয়াখালী চেম্বারের মো. শাহ জালাল, সিরাজগঞ্জ চেম্বারের মোহাম্মদ রিয়াদ আলী এবং ল²ীপুর চেম্বারের মোহাব্বত উল্লাহ।
এ ছাড়া আপিল করে চেম্বার গ্রæপের মনোনীত পরিচালক পদের প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন ঢাকা চেম্বারের আবুল কাসেম খান, ময়মনসিংহ চেম্বারের সামিউল হক সাফা এবং গোপালগঞ্জ চেম্বারের সুজিব রঞ্জন দাশ। কর খেলাপের অভিযোগে তাঁদের প্রত্যেকের মনোনয়ন প্রাথমিকভাবে বাতিল হয়েছিল। এফবিসিসিআইয়ের এবারের নির্বাচনে ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদ ও সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদ নামে দুই প্যানেল রয়েছে। ঐক্য পরিষদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম। তিনি চেম্বার গ্রæপ থেকে মনোনীত পরিচালক হচ্ছেন। অন্যদিকে সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সহসভাপতি মীর নিজাম উদ্দিন আহমেদ।
নির্বাচনে অংশ নেওয়া একাধিক ব্যবসায়ী জানান, অ্যাসোসিয়েশন গ্রæপে ভোট হবে। তবে চেম্বার গ্রæপে ভোট না হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কারণ চেম্বারের গ্রæপের প্রার্থীদের প্রায় সবাই ঐক্য পরিষদের। ২৩ পদের বিপরীতে সমানসংখ্যক প্রার্থীর মনোনয়ন রেখে বাকিদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করাতে পারে ঐক্য পরিষদ। তখন আর এই গ্রæপে বীনা ভোটেই পরিচালক নির্বাচীত হবেন।