১৮ হাজার কোটি টাকায় ১৫ প্রকল্প অনুমোদন একনেক সভায় মন্ত্রণালয়ের কাজে সমন্বয়হীনতা দূর করার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
এস.ইসলাম জয় : বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কাজের সমন্বয়হীনতা দূর করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নির্দিষ্ট আইন মেনে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে। একই সঙ্গে প্রকল্পের কাজে যেন ওভারল্যাপিং না হয়, সেই বিষয়েও সাবধানতা অবলম্বন করতে বলেছেন।
মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেক সভায় এ নির্দেশনা দেন বলে বৈঠক শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সাংবাদিকদের জানান।
পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, এক প্রকল্পের কাজ এক মন্ত্রণালয়ের নয়, এতে অনেক মন্ত্রণালয় সম্পৃক্ত থাকতে পারে। সবাইকে এক হয়ে কাজ করতে হবে। প্রকল্পের কাজ ওভারল্যাপিং হলে অর্থের অপচয় হয়। একই নামে যেন একাধিক প্রকল্প না আসে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কাজে সমন্বয়হীনতা দূর করতে হবে। যার যার প্রকল্প সে বাস্তবায়ন করবে, তবে সমন্বয় করে কাজ করতে হবে।
একনেক সভায় নির্মাণ সামগ্রীর দাম বৃদ্ধির বিষয়টি তোলা হয়। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা জানি এটা হবেই। রেট শিডিউলের সঙ্গে আমরা রিভাইজড করবো। মূল্য বেড়ে গেলে সেটা আমরা সংশোধন করবো। ডলারের যে দাম বাড়ছে এটার ফলেও প্রকল্পের সার্বিক ব্যয়কে প্রভাবিত করছে। এই বিষয়ে অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, উচ্চ আদালতে ট্যাক্স সংক্রান্ত অনেক মামলা পেন্ডিং আছে। আইন মন্ত্রণালয়কে এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। কীভাবে এগুলো আইনি প্রক্রিয়ায় নিষ্পত্তি করা যায়, সেই বিষয়ে কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।
একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী আরও বলেন, পরিবেশ রক্ষা করে উপক‚ল নিয়ে সাবধানে প্রকল্প নিতে হবে। বাংলাদেশের উপক‚ল কাদামাটির উপক‚ল। উপক‚লকে ডিস্টার্ব করা যাবে না। অন্যান্য দ্বীপ, বিশেষ করে ভোলা দ্বীপে প্রকল্প নিতে হবে সাবধানে। মৌসুমি সবজি ও ফল সংরক্ষণের প্রকল্প নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমাদের চমৎকার ফসল হয়, এগুলোর জন্য সংরক্ষণাগার নির্মাণ করতে হবে। কৃষি ও খাদ্যমন্ত্রীকে এ বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। গতকালের একনেক সভায় প্রায় ১৮ হাজার ১০ কোটি ১২ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৫টি প্রকল্প অনুমোদন করেছে। এরমধ্যে সরকারি অর্থায়ন ১২ হাজার ১৯২ কোটি ৭ লাখ টাকা, বৈদেশিক অর্থায়ন ৫ হাজার ২৩৩ কোটি ৪৩ লাখ টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ৫৮৪ কোটি ৬২ লাখ টাকা।
অনুমোদিত প্রকল্পগুলো হলো বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের বড়পুকুরিয়া-বগুড়া-কালিয়াকৈর ৪০০ কেভি লাইন প্রকল্প, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ফিল্ম সিটি (দ্বিতীয় পর্যায়) প্রকল্প, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সিলেট মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (এসএমইউ) স্থাপন প্রকল্প, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের জিনাই, ঘাঘট, বংশী এবং নাগদা নদীর প্রবাহ পুনরুদ্ধারের জন্য শুষ্ক মৌসুমে নদীর প্রবাহ নিশ্চিতকরণ, নৌপথের উন্নয়ন ও বন্যা ব্যবস্থাপনা’প্রকল্প।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উলিপুর (হলিপ্যাড মোড়)-চিলমারি (গুনাইগাছ) সংযোগ সড়ক নির্মাণ প্রকল্প, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের বেসরকারি ভবনসমূহের রেজিলিয়েন্সির (স্থিতিস্থাপকতা অথবা সহনশীলতা) জন্য ডিজাইন এবং নির্মাণে এর গুণগত মান বৃদ্ধিকরণ প্রকল্প, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের দুটি প্রকল্প যথাক্রমে পার্বত্য চট্টগ্রামে সমন্বিত ও টেকসই পৌর পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন প্রকল্প এবং আমার গ্রাম-আমার শহর নামে পাইলট গ্রাম উন্নয়ন প্রকল্প।
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের জন্য রেকর্ড ভবন নির্মাণ প্রকল্প, কৃষি মন্ত্রণালয়ের তিনটি প্রকল্প যথাক্রমে বরিশাল, ভোলা, ঝালকাঠি ও পিরোজপুর জেলা সেচ উন্নয়ন প্রকল্প প্রকল্প, ডাবল লিফটিং পদ্ধতিতে পদ্মা নদীর পানি বরেন্দ্র এলাকায় সরবরাহ ও সেচ সম্প্রসারণ প্রকল্প এবং টিস্যু কালচার ল্যাবরেটরি কাম হর্টিকালচার সেন্টার স্থাপন ও উন্নয়ন প্রকল্প।
পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের দুটি প্রকল্প ভ‚মি পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে উড়িরচর-নোয়াখালী ক্রস ড্যাম নির্মাণ প্রকল্প ও চট্টগ্রাম জেলার স›দ্বীপ উপজেলায় পোল্ডার নম্বর-৭২-এর ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধের স্থায়ী পুনর্বাসনসহ ঢাল সংরক্ষণ প্রকল্প এবং খাদ্য মন্ত্রণালয়ের দেশের বিভিন্ন কৌশলগত স্থানে নতুন খাদ্য গুদাম ও আনুষঙ্গিক সুবিধাদি নির্মাণ প্রকল্প।
সভায় মন্ত্রিপরিষদ সচিব, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যরা, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর সিনিয়র সচিব ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।