বাংলাদেশ থেকে বিদেশ যাওয়ার খরচ বিশ্বে সবচেয়ে বেশি কেন
শরিফুল হাসান
যে অর্থে আমাদের বিদেশের কর্মসংস্থান বাড়ছে সে অর্থে আমাদের প্রবাসী আয় খুব বেশি বাড়ছেÑ সেটা বলা যাবে না। সারা পৃথিবী মিলে বাংলাদেশকে যে ঋণ দেয় বা যে বৈদেশিক বিনিয়োগ আসে তার আট থেকে দশ গুণ বেশি প্রবাসী আয় পাঠায় আমাদের প্রবাসীরা। কাজেই তাদের স্বীকৃতি দিতেই হবে। ৫২ বছর আগে যখন বাংলাদেশ স্বাধীন হয় তখন বাংলাদেশ ছিলো পৃথিবীর একটি দরিদ্রতম দেশ। সেখান থেকে যারা বাংলাদেশকে বের করে আনলেন তারা হলেন আমাদের কৃষক, শ্রমিক, প্রবাসীরা। গত তিন বছরে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ লাখ লোক বিদেশে গিয়েছে, গত ৮ থেকে ১০ বছরে ৬০ থেকে ৭০ লাখ মানুষ বিদেশ গিয়েছে। আগে আমাদের প্রবাসী ছিলো ৬০-৭০ লাখ তখনও রেমিটেন্স যা ছিলো এখন আরও ৬০-৭০ লাখ যোগ হলো এখনও রেমিটেন্স এমন এখনতো রেমিটেন্স দ্বিগুণ হওয়ার কথা কিন্তু তা হয়নি তার কারণ কী।
প্রথম কারণ বাংলাদেশ থেকে বিদেশ যাওয়ার খরচ গোটা পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি। আর তার আয় গোটা পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে কম। সবচেয়ে বেশি খরচ করে সবচেয়ে কম আয় করতে যায় আমাদের লোক। যেই টাকা খরচ করে যায় সেই টাকা তুলতে তার অনেক সময় লাগে। সৌদি আরব, যুক্তরাষ্ট্র এবং আরব-আমিরাত এই তিনটি দেশ থেকেই প্রায় ১০ মিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স আসে। গত কয়েকবছর ধরে ২১, ২২ বা ২৩ মিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স আমরা পাচ্ছি এর বেশি পাচ্ছি না। এখন প্রশ্ন হতে পারে কেন পাচ্ছি না? না পাওয়ার কারণ হচ্ছে সৌদি আরব একটি বড় দেশ কিন্তু সেখানে কী ব্যাংকিং চ্যানেল খুব বেশি আছে যে একজন কর্মী ৪০০ কি.মি থেকে দূরে ছুটে এসে তার প্রবাসী আয় পাঠাবে তা কিন্তু নেই। তখন তার বাড়ির কাছের কোনো একজন হুন্ডি তাকে অফার করে মুহুর্তের মধ্যে, ভালো দামে টাকা পাঠিয়ে দেয়ার।
এই হুন্ডি থেকে বাঁচার জন্য প্রযুক্তির সহায়তা নিতে হবে। বিদেশ যাওয়ার আগেই তাকে দুটি একাউন্ট খুলে দিতে হবে। যখন ব্যাংকগুলো তার ধারের কাছে নেই এবং ব্যাংকে যেতে হলে তাকে একদিনের ছুটি নিতে হবে তখন সে হুন্ডির পথ বেছে নেয় কারণ তখন টাকাটা মুহূর্তের মধ্যে চলে যাচ্ছে। পাঠানোর ক্ষেত্রে তারা চিন্তা করে কতো দ্রæত পাঠাচ্ছে আর কী রেটে পাঠাচ্ছে এবং এই দুই জায়গায়ই হুন্ডিরা এগিয়ে আছে। তাছাড়া এই প্রবাসীদের জন্য আমাদের রাষ্ট্রীয় কোনো বিনিয়োগ নেই। রাষ্ট্র কখনোও বলেনি কেউ টানা পাঁচ বছর টাকা পাঠালে তাকে এই সুবিধা দেয়া হবে এছাড়াও প্রবাসীদের যে সম্মান দেয়া দরকার তাও আমরা তাদের দিতে পারিনি। যাওয়ার আগে যদি বাধ্যতামূলক দুটি ব্যাংক একাউন্ট খুলে দেয়া হয়, ডিজিটাল টেকনোলজি ব্যবহার করা হয় তাহলে এগুলো ভালো কিছু আনবে। করোনার সময় ২৪ মিলিয়ন ডলার পাঠিয়েছে তখন হুন্ডি বন্ধ ছিলো।
বৈধভাবে যদি আমাদের ২০-২২ মিলিয়ন ডলার আসে তাহলে অবৈধ পথে এর সমপরিমান আসে বা তার চেয়েও বেশি আসে। এটিকে ৩০-৩৫ মিলিয়ন করা সম্ভব যদি আমরা তার টাকা আনা, দ্রæত সময়ে পৌঁছানো এবং রেট ভালো করা যায়। গত বছর থেকে যখন ডলার সংকট দেখা দিলো তখন ব্যাংকে টাকা পাঠালে দিবে ১০১ ডলার আর বাইরে থেকে সে পাঠালে পাবে ১১৮ বা ১২০ ডলার। এইযে ব্যাংক একটি সংখ্যা বেঁধে দিলো আমি মনে করি সরকার এটি একটি ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে কী হলো তারা হুন্ডির কাছে চলে গেলো যদিও পরে যে ব্যাংকগুলো রেমিটেন্স নেয় তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে আলোচনা করে সরে এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক একটি ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা হলো মোবাইল ফাইনেনশিয়াল য্ক্তু করছে, আমি মনে করি প্রযুক্তিকে যতো যুক্ত করা যায় ততো ভালো। আবার বাংলাদেশে টাকা পাঠানোর রেট অন্যান্য দেশের চেয়ে কম। এই সমস্ত বিষয়গুলো যদি আমরা সমাধান করতে পারি তাহলে রেমিটেন্স আরও বাড়বে বলে আমি মনে করি।
পরিচিতি : কলামিস্ট। সূত্র: আরটিভি নিউজ। শ্রæতিলিখন: জান্নাতুল ফেরদৌস