বিভিন্ন দেশে মূল্যস্ফীতি কমলেও বাংলাদেশে বাড়ছে
মাসুদ মিয়া: বৈশ্বিক মন্দায় সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকটের কারণে বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতির হার বেড়েছিল। মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণে বিশ্বব্যাপী সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি অনুসরণের মাধ্যমে ভোক্তার চাহিদা কমানো হয়। পণ্যের দাম কমাতে উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি আমদানিও নিয়ন্ত্রণ করা হয়। ফলে অনেক দেশে বিশেষ করে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার কমতে শুরু করেছে। কিন্তু বাংলাদেশে এ হার বাড়ছে। যদিও আলোচ্য সময়ে বাংলাদেশও সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি অনুসরণ করেছে, আমদানি নিয়ন্ত্রণ করেছে। উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা আয় বাড়ানোর পদক্ষেপ নিয়েছে। বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরের মে মাসে বাংলাদেশে সাধারণ মূল্যস্ফীতি ছিল গড়ে ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ, যা গত ১১ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এরআগে ২০১১ সালের মে মাসে সাধারণ মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ১০ দশমিক ২ শতাংশ। তবে সদ্যবিদায়ী অর্থবছরের শেষ মাস অর্থাৎ গত জুন মাসে মূল্যস্ফীতির হার কিছুটা কমে ৯ দশমিক ৭৪ শতাংশে নামে। এসময়ে সাধারণ মূল্যস্ফীতির হার কমলেও বেড়েছে খাদ্যপণ্যের দাম। জুন মাসে খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে ৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ হয়েছে, আগের মাসে অর্থাৎ মে মাসে যা ছিল ৯ দশমিক ২৪ শতাংশ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) দেওয়া মে মাসের ভোক্তা মূল্যসূচকের (সিপিআই) হালনাগাদ তথ্যে এমনটাই বলা হয়েছে। তবে বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি বাড়লেও ভারত ও নেপালসহ নানা দেশে মূল্যস্ফীতি কমছে বলে জানায় বিশ্বব্যাংক। বিশ্বব্যাংকের খাদ্য নিরাপত্তাবিষয়ক ওই হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, বিশ্বের অনেক দেশেই খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার কমেছে। এমনকি অর্থনৈতিকভাবে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বিপর্যস্ত দেশ শ্রীলঙ্কার খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার ৪ দশমিক ১ শতাংশে নেমে এসেছে। তবে পাকিস্তানের খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার কমলেও তা এখনো প্রায় ৪০ শতাংশের কাছাকাছি (৩৯ দশমিক ৫ শতাংশ)।
স¤প্রতি প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ, মিশর, জাপান, ভিয়েতনাম ও আর্জেন্টিনার খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার এখনো বাড়তি। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ব্রাজিল ও মালদ্বীপে মূল্যস্ফীতির সূচক নি¤œমুখী হতে শুরু করেছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান ছাড়া সব দেশেই খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার কমছে।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুসারে, চলতি বছরের মার্চ-জুন সময়ে খাদ্য মূল্যস্ফীতি সবচেয়ে বেশি ছিল জিম্বাবুয়েতে ৮০ শতাংশ। এরপর সবচেয়ে বেশি ছিল লেবাননে, সেখানে ছিল ৪৪ শতাংশ। মিশরে যা ছিল ৩০ দশমিক ১ শতাংশ।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্ববাজারে খাদ্যের দাম কমছে। দুই সপ্তাহ আগের তুলনায় কৃষি ও শস্যজাতীয় খাদ্যের দাম ৪ থেকে ১২ শতাংশ কমেছে। মূলত ভুট্টার দাম কমার কারণে শস্যজাতীয় খাদ্যের দাম কমেছে। দুই সপ্তাহ আগের তুলনায় ভুট্টার দাম ২১ শতাংশ কমেছে। এসময়ে গমের দাম ৩ শতাংশ কমলেও চালের দাম ১ শতাংশ বেড়েছে। ২০২২ সালের জুন মাসে এফএওর খাদ্য মূল্যসূচক ছিল ১৫৪ দশমিক ৭ শতাংশ। অর্থাৎ সে তুলনায় গত জুন মাসে খাদ্য মূল্যসূচক অনেকটাই কমেছে। বলা হয়েছে, বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থা স্বাভাবিক পর্যায়ে ফিরে আসা, বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য উৎপাদনকারী দেশগুলোতে আবহাওয়া পরিস্থিতির উন্নতি ও তেলের দাম হ্রাসের কারণে বৈশ্বিক খাদ্যমূল্য এখন কমতির দিকে।